মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ৭১ শতাংশ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৩৪, নভেম্বর ১৭ ২০২১ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১৬৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৫৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১১২৩ জন। নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৩২৭ জন (৭৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ) ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী। দুর্ঘটনায় ৭২ জন শিক্ষক এবং ৬৬৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ১৫১ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৮.৫৮ শতাংশ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। দুর্ঘটনার ধরন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ৩৪৯টি (২১.১১ শতাংশ), মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৮৩টি (৩৫.২৬ শতাংশ), মোটরসাইকেলে অন্য যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৭১৫টি (৪৩.২৫ শতাংশ) এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬টি (০.৩৬ শতাংশ)। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও পথচারী দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬৭২টি (৪০.৬৫ শতাংশ) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী। বাসচালক দায়ী ১০.৭৬ শতাংশ (১৭৮টি দুর্ঘটনা), ট্রাকচালক দায়ী ২৬.৭৯ শতাংশ (৪৪৩টি দুর্ঘটনা), কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি চালক দায়ী ৯.৫৫ শতাংশ (১৫৮টি দুর্ঘটনা), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস চালক দায়ী ২.৭২ শতাংশ (৪৫টি দুর্ঘটনা), থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-নসিমন-ভটভটি-টমটম) চালক দায়ী ৫.৮০ শতাংশ (৯৬টি দুর্ঘটনা), প্যাডেল রিকশা ও বাই-সাইকেল চালক দায়ী ০.৫৪ শতাংশ (৯টি দুর্ঘটনা) এবং পথচারী দায়ী ৩.১৪ শতাংশ (৫২টি দুর্ঘটনা)। সড়কের ধরন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৫৭৭টি (৩৪.৯০%) জাতীয় মহাসড়কে, ৫২৮টি (৩১.৯৪%) আঞ্চলিক সড়কে, ২৯১টি (১৭.৬০%) গ্রামীণ সড়কে এবং ২৫৭টি (১৫.৫৪%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। যানবাহনের সংখ্যা দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ২৭৪৯টি। মোটরসাইকেল ১৭১৯টি, বাস ১৯৪টি, ট্রাক ৪৮১টি,কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ১৭২টি, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার ৫৬টি, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-নসিমন-ভটভটি-টমটম) ১১৩টি, এবং প্যাডেল রিকশা ও বাই-সাইকেল ১৪টি। দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ১.০৮ শতাংশ, সকালে ২৩.৩৫ শতাংশ, দুপুরে ১৭.৬০ শতাংশ, বিকালে ২৬.৩৭ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১১.৯৭ শতাংশ এবং রাতে ১৯.৬০ শতাংশ। কারণ কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো;অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয় এবং ব্যবহারে সহজলভ্যতা ও বাধাহীন সংস্কৃতি; ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা;বাস-ট্রাক-পিকআপ-প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসসহ দ্রুতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি; চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা; ইজিবাইক-সিএনজি-নসিমন-ভটভটি ইত্যাদি স্বল্পগতির যানবাহন অপরিকল্পিত ও অদক্ষ হাতে চালানো; সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা;সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা; পারিবারিকভাবে সন্তানদের বেপরোয়া আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া; দেশে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর সংস্কৃতি গড়ে ওঠা ইত্যাদি। সুপারিশ দুর্ঘটনা বন্ধে ব্শেকিছু সুপারিশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এগুলো হলো-কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;মাত্রাতিরিক্ত গতিসম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; গণপরিবহন চালকদের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন তৈরি করতে হবে এবং স্বল্পগতির স্থানীয় যানবাহন বন্ধ করতে হবে ইত্যাদি।