বাকেরগঞ্জে গ্রামীন প্রতিভা সমবায় সমিতি

কামরুন নাহার | ০১:২৪, মার্চ ১৭ ২০২০ মিনিট

উত্তাম কুমার, বাকেরগঞ্জ ॥ সাধারণ মানুষের প্রায় তিন কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করার পর তা ফেরত দিচেছনা গ্রামীণ প্রতিভা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি। সমিতির কর্মকর্তারা কার্যালয় বন্ধ করে পালিয়েছে। সমিতির পরিচালক সঞ্জয় কুমার দেবনাথসহ ৭ জনকে আসামি করে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)। সঠিক তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার মো. রিয়াদ খান জানায়, বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু অফিসিয়ালভাবে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। জেলা সমবায় অফিসের পরিদর্শক নুরে আলম জানায়, কোন সদস্য আমাদের অফিসে অভিযোগ করেনি। তবে গ্রামীণ প্রতিভা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেছে, বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই কবির বলেন, টাকা নিয়েছে সত্য, তদন্তসাপেক্ষে আদালতে রিপোর্ট প্রধান করা হবে। দোকানে দোকানে পানি টেনে দিনে উপার্জন দেড় শ থেকে দুই শ টাকা। তা থেকে ২০ টাকা করে জমা করেছিলেন চম্পা বেগম। তিন বছরে তাঁর জমা হয় একুশ হাজার টাকা। গ্রামীণ প্রতিভা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে জমানো অতি কষ্টের সেই টাকা হাতে পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ চম্পা বেগমের মতো হাজারো শ্রমজীবীর তিলে তিলে জমানো টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন সমিতির নির্বাহী পরিচালক সঞ্জয় কুমার দেবনাথ ও তার সহযোগীরা। উপজেলার সদর রোডে অফিস। তবে অফিস থাকলেও বর্তমানে সেখানে কোনো কার্যক্রম নেই। স্থানীয় লোকজন বলছে, সমিতির মূল পরিচালক সঞ্জয় কুমার দেবনাথ কোথায় আছে কেউ জানে না। সাত বছর আগে একই এলাকায় ‘হোম ল্যান্ড’ নামে আরেক প্রতিষ্ঠানের হাতিয়ে নেয় সাধারণ মানুষের আড়াই কোটি টাকা। জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গ্রামীণ প্রতিভা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে তিনভাবে লেনদেনের কাজ চলত। এর মধ্যে এককালীন হিসাবে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা প্রতি মাসে, দৈনিক হিসেবে জমা অর্থ লাভসহ বছর শেষে ফেরত, মাসিক ডিপিএস আকারে জমানো টাকা পাঁচ বছর থেকে সাত বছর মেয়াদে দ্বিগুণ ফেরত প্রদান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য সমিতির অফিসে ভিড় করছে অনেক সদস্য। তবে পাওনাদারদের অভিযোগ শোনার মতো কোনো ব্যক্তি ওই অফিসে নেই। সেখানে কথা হলো চিত্তরঞ্জন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি সঞ্জয় কুমার দেবনাথের মামাতো ভাই। তিনিও বলেন যে সঞ্জয় কুমারের খোঁজ জানেন না। জানা গেল, হাসিনা বেগমের স্বামী মারা গেছেন ছয় বছর আগে। তিনি গত তিন বছর ধরে অনেক কষ্ট করে সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে জমা করেন সমিতিতে। উদ্দেশ্য একমাত্র মেয়ে বড় হলে টাকা লাগবে। এখন লাভ তো দূরের কথা, জমানো টাকাটা ফেরত পাওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় তাঁর মাথায় হাত। টাকার জন্য ভিড় জমানো অনেকের মধ্যে সাজেদা আক্তারের ১৬ হাজার, হোসেন মিয়ার ২৫ হাজার, মায়া আক্তারের ছয় লাখ, রেহানা আক্তারের দুই লাখ, হাওয়া বেগমের ২০ হাজার, শিখা আক্তারের ২০ হাজার, বিপুল মিয়ার ৫২ হাজার, আলতাফ হোসেনের তিন লাখ, জোহরা বেগমের পাঁচ লাখ টাকাসহ সমিতির প্রায় আড়াই হাজার সদস্যের প্রায় তিন কোটি টাকা সমিতিতে জমা। স্বামী, সন্তান ও নিজের নামে ১২টি পাস বইয়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা জমা ছিল উপজেলার ভরপাশা গ্রামের কহিনুর বেগমের। কহিনুর বেগম বলেন, ‘এমন হবে জানতাম না। আমার তো পাঁচ লাখ, অনেকের আরো অনেক বেশি টাকা রয়েছে এই সমিতিতে।’ বাকেরগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আকন বলেন, বেশ কয়েকবার আমরা বসেছি। সে (সঞ্জয়) সময় নিয়ে এখন লাপাত্তা। এলাকায় তো আসেই না, তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। হাজার হাজার গরিব মানুষের কষ্টের টাকা উদ্ধার করা আমাদের সবার দায়িত্ব। মেয়র মহোদয় ও অনেক চেষ্টা করছেন।’ জানা যায়, সাত বছর আগে উপজেলার সদর রোডে গ্রামীণ প্রতিভা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে অফিস খুলে। সঞ্জয় কুমার দেবনাথ, সাইফুর রহমান, আপু কুমার সাহা, শেখর আচার্য্য, নাসির উদ্দিন, শরবরী দেবনাথ ও মিনাল দেবনাথ এরা এ সমিতি চালাত। তাঁরা সদস্যদের জমানো প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে অফিস বন্ধ করে দেন। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গ্রাহকদের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।