বুধবার বরিশালে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দীপাবলি উৎসব শুরু

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:১৫, নভেম্বর ০২ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥  প্রয়াত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনায় বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মহাশ্মশানে দুইদিনব্যাপী উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শ্মশান দীপাবলি উৎসব বুধবার (৩ই) নভেম্বর শিতের আগমনের হাল্কা ঠান্ডায় আবহাওয়ার মধ্যে চতুর্দ্দশী আরম্ভ ৭/৫ মিনিট দিবা সময়ে থেকে শুরু হয়ে ভোর রাত ৫টা২২ মিনিট। ৪টা নভেম্বর ৫টা২২ পরে আমাবস্যা শুরু রাত্রি ১২,০১ মিনিটে মায়ের পূজার মাধ্যমে শেষ হবে। ইতোমধ্যে দীপাবলি উৎসবে প্রিয়জনের আত্মার শান্তির কামনার জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিশ্বের বিভিন্নস্থান থেকে স্বজনরা এখানে ছুটে এসেছেন। ফলে মহাশ্মশান এলাকা দেশ-বিদেশের মানুষের পদচারণায় এখন মুখর হয়ে উঠেছে। সূত্রমতে, প্রতি বছরের মতো এবারও ভূত চতুর্দ্দশীর বুধবার দিবা ৭/৫ মিনিটে পুণ্যতিথিতে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী শ্মশান দিপালী উৎসব শেষ হবে বৃহস্পতিবার ১২টা ১ মিনিটে। বৃহস্পতিবার রাত্রি ১২টা ১ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শ্মশান কালীপূজা ও প্রসাদ বিতরন। প্রায় ২০৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবকে ঘিরে তোরণ নির্মাণসহ ব্যাপক আলোকসজ্জা করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে ২০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। পুরো উৎসব নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ। পাশাপাশি র‌্যাব,গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ সহ নিজস্ব শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার দায়ীত্ব পালন করবে। এছাড়া শশ্মান রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে মাক্স, প্রদান করা সহ সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে ধর্মীয় উৎসব পালনের সকল কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকায় ২০৪ বছর পূর্বে ৫ একর ৯৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় মহাশ্মশান। এ শ্মশানে ৩০ হাজার পাকাসহ মোট সমাধি রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। প্রয়াতদের স্বজন যারা বরিশালসহ সারাদেশে তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছেন তারা এইদিনে সমাধির পাশে এসে তাদের আত্মার শান্তির কামনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে প্রার্থনা করেন। কেউ পাঠ করেন গীতা। প্রার্থনা করে অনেক স্বজন প্রয়াতের জন্য কান্নায় ভেঙে পরেন। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও এসেছে প্রিয় প্রয়াতের জন্য প্রার্থনা করতে। বুধবার সন্ধারাত থেকে সারা রাত মোমবাতির আলোয় আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে পুরো শ্মশান এলাকা। বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুডু বলেন, দিপালী উৎসবে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ভারত, নেপালসহ উপমহাদেশ এবং বাহিরের অনেক দেশ থেকে প্রচুর লোকের সমাগম হওয়ায় র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি ও নজরদারী জোরদার করা হয়েছে। অপরদিকে দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে মহাশ্মশানের একপাশে পূর্বে দুইদিনের মেলা বসার সুযোগ থাকলেও এবার করোনার জন্য মেলার আয়োজন বাতিল করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারন সম্পাদক তমাল মালাকার। উল্লেখ্য, সস্প্রতি এ শ্মশানে ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের সমাধী। এছাড়া বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ, মনোরমা মাসিমাসহ অবিভক্ত বাংলার অনেক গুণী ব্যক্তির সমাধি রয়েছে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী শ্মশানে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সমাধিও রয়েছে এখানে। তাই বরিশালের বাইরের জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশ থেকে স্বজনরা আসবেন বরিশালের এই দীপাবলি উৎসবে।