বরিশালে দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে ব্যালটের ভোট নিয়ে শঙ্কা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৭:৩১, নভেম্বর ০১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥  বরিশালে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে না ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন)। ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচন হবে ব্যালট পেপারে। বিষয়টিকে সহজভাবে দেখছেন না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র মোড়কে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা বিএনপির প্রার্থীরা। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের এ নিয়ে খুব একটা টেনশন না থাকলেও ব্যালটের নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আশঙ্কায় আছেন সাধারণ ভোটাররাও। এদিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া বিএনপি নেতারা বলছেন, ধানের শীষ প্রতীককে হারানোর সঙ্গে ইভিএমের যে একটা মধুর সম্পর্ক আছে, এরই প্রমাণ এই নির্বাচনে ইভিএম না দেওয়া। নির্বাচনে বিএনপি থাকলে ধানের শীষকে হারাতে ঠিকই ইভিএম দিত সরকার। ১১ নভেম্বর নির্বাচন হবে বরিশাল জেলার ১২ ইউনিয়নে। বরিশাল সদর উপজেলার ৬টিসহ ভোট হবে আগৈলঝাড়ার ৫ এবং বানারীপাড়ার ১টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে আগৈলঝাড়া উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের ৫ চেয়ারম্যান। এর আগে ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে বরিশালের ৫০টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা । আগৈলঝাড়ার ৫টি ছাড়াও যে ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে সেগুলো হলো-বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর, চরকাউয়া, চাঁদপুরা, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও চরমোনাই। এছাড়া বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। বরিশালের ৬ ইউনিয়নের ৫টিতেই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে ভোটে নেমেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এর সঙ্গে ৩টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র মোড়কে বিএনপি নেতারা প্রার্থী হওয়ায় বেশ চাপে আছে নৌকা। এছাড়া ৩টি ইউনিয়নে রয়েছে ভিন্ন জটিলতা। চরমোনাই ইউনিয়নে বহু বছর ধরে চেয়ারম্যান পদ দখলে রেখেছে সেখানকার পির পরিবার। এবারও প্রার্থী হয়েছেন চরমোনাই পির ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের ছোট ভাই জিয়াউল করিম। প্রকাশ্যে না হলেও নেপথ্যে এখানে হাতপাখার বিরুদ্ধে এক হয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি-আওয়ামী লীগ। চাঁদপুরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে লড়তে হচ্ছে জামায়াতঘেঁষা বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমানের সঙ্গে। এছাড়া আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও। রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নেও ত্রিমুখী লড়াইয়ে নৌকার প্রার্থী শাহরিয়ার বাবু। বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান খোকনের পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন কোতোয়ালি থানা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল আমীনের ছোট ভাই আলহাজ মনিরুজ্জামান। সব মিলিয়ে যখন পুরো মাত্রায় জমে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ঠিক সেই সময়েই জানা গেল এবারের নির্বাচনে থাকছে না ইভিএম। বরিশালের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল আলম বলেন, ১১ নভেম্বরের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন যেটি ২৮ নভেম্বর হবে, সেখানে বাবুগঞ্জের রহমুতপুর ইউনিয়নে ইভিএম ব্যবহার করব আমরা। তখন মোট ৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রোববার পাওয়া সর্বশেষ খবরানুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে স্বতন্ত্র মোড়কে বিএনপি নেতারা প্রার্থী হলেও তৃতীয় ধাপের ওই ৫ ইউনিয়নের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করেননি কোনো বিএনপি নেতা। অবশ্য এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ প্রশ্নে বরিশালের বেশকিছু ইউনিয়নে ইভিএম ব্যবহার হলেও দ্বিতীয় ধাপে ইভিএম না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বতন্ত্র এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ মনিরুজ্জামান বলেন, বিএনপি যখন ইভিএম-এর বিরুদ্ধে বলে, তখন সরকার ইভিএম-এর পক্ষে নানা যুক্তি দেখায়। তাহলে আজ কেন ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটের নির্বাচন দেওয়া হলো? এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আমিন বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে দেখেছি ভোটারদের হাত থেকে চেয়ারম্যানের ব্যালট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভোটাররা ভোট দিয়েছেন কেবল মেম্বার পদে। চেয়ারম্যানের ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে ভোট দিয়েছে নৌকার সমর্থকরা। ইভিএম হলে তো ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাহলে কেন এবার ইভিএম দেওয়া হলো না? চাঁদপুরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যান প্রার্থী আমান উল্লাহ আমান বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সুবিধা দিতেই এবার ব্যালটে ভোট হচ্ছে। নির্বাচনে প্রশাসন কতটুকু নিরপেক্ষ থাকে, সে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ইভিএম হলে অন্তত কিছুটা ভরসা পেতাম, এখন তো সেই ভরসাও নেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও একমত এসব বক্তব্যের সঙ্গে। তবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে নামা প্রার্থীরা ব্যালটের পক্ষে। চরকাউয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ছবি বলেন, ইভিএম এখনো পুরোপুরি পরিচিত হয়ে উঠেনি তৃণমূলের ভোটারদের কাছে। ব্যালটে ভোট দিতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নির্বাচনে ইভিএম থাকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারাও। বরিশাল (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চান বলেন, নির্বাচনে ধানের শীষ নেই বলেই আজ ইভিএম নেই। কেননা ইভিএম-এর কারচুপি তো ধানের শীষ প্রশ্নে। এবার আবার অনেক জায়গাতেই বিএনপির নেতারা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করছে। এখন যদি ইভিএম থাকে আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে নামা বিএনপি নেতারা জিতে যায় তাহলে তো ইভিএম নিয়ে আমাদের অভিযোগই প্রমাণিত হবে। তাই সরকার চালাকি করে এবার আর ইভিএম দিচ্ছে না। বিএনপির এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, বর্জন করার পর নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি নেতাদের মুখে এসব কথা মানায় না। ইভিএম কিংবা ব্যালট, যেভাইে নির্বাচন হোক, জয়ী হওয়ার মতো জনসমর্থন যে বিএনপির নেই সেটা এখন প্রমাণিত। তাদের এসব বক্তব্য হচ্ছে মাঠ গরম রাখার চেষ্টা। কিন্তু এসব কৌশল এখন আর কাজে আসবে না। জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভোটে জিততে পারবে না বলেই আজ তারা মান বাঁচাতে নির্বাচন থেকে দূরে থাকছে। বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি এসএম আকতারুজ্জামান বলেন, ব্যালট কিংবা ইভিএম, যেভাবেই হোক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছি আমরা। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দেবেন। কোনো রকম অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দেব না। ভোট নিয়ে যে যা কিছুই বলুক না কেন, ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি ভোটারদের সবরকম নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।