মধ্যরাত থেকে আবারও বিধিনিষেধের বেড়াজালে জেলেরা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৫৯, অক্টোবর ৩১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ইলিশ শিকারে আজ রোববার মধ্যরাত থেকে আবারও নানা বিধিনিষেধের বেড়াজলে আটকে যাচ্ছেন জেলেরা। আগামী বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৮ মাস ২৩ দিন ইলিশ আহরণে নানা ধরনের নিয়ম মানতে হবে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ পদক্ষেপের প্রথম ধাপ হিসেবে জাটকা নিধনে টানা ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে যাচ্ছে। দফায় দফায় এমন বিধিনিষেধে দিশেহারা মৎস্যজীবীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, নদ-নদীতে গত ৩-৪ মাসের মধ্যে মা ইলিশ যে ডিম ছেড়েছে, তা দিয়ে জন্ম নেওয়া ইলিশের আকৃতি এখন ২৫ সেন্টিমিটারের মধ্যেই আছে। জন্মের পর থেকে এক বছর বেঁচে থাকতে পারলে সেটি কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি বা ১ ফুটের বড় ইলিশে পরিণত হবে। এ জন্যই প্রতি বছরের মতো এবারও ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা নিধনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। জাটকা নিধন বন্ধ করতে জেলেরা ৫ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার কম ফাঁসের জাল ব্যবহার করলে তাদের জেল-জরিমানা হবে। চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মা ইলিশ সারা বছরই ডিম দেয়। তবে ৮০ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের পূর্ণিমায়। এ জন্য প্রতিবছর আশ্বিনের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মাঝে রেখে ২২ দিন ইলিশ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ২৫ অক্টোবর। ডিম ছাড়ার ৭০-৭২ ঘণ্টার মধ্যে জন্ম নেওয়া ইলিশের আকৃতি হয় এক সেন্টিমিটার। মা ইলিশ ও জাটকা ৬-৭ মাস পর্যন্ত নদীতে থাকে। এর মধ্যে ৩ মাস পর্যন্ত জাটকা ইলিশ মায়ের সঙ্গে নদীতে ঘুরে বেড়ায়। আশ্বিনে প্রজনন হওয়া ইলিশের বাচ্চা মার্চ-এপ্রিলে ১২-১৮ সেন্টিমিটার হয়। তখন এ ইলিশগুলো মাকে ছেড়ে অভ্যন্তরীণ নদী-নদীতে স্বাধীনভাবে ছোটাছুটি করে। অপরদিকে মা ইলিশ বাচ্চা রেখে গভীর সাগরে চলে যায়। প্রজনের পর ইলিশের বাচ্চা নিয়মানুযায়ী বেড়ে ওঠা নিরাপদ করার জন্য প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য অধিদপ্তর। এদিকে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে শুধুমাত্র জাটকা নিধন নিষিদ্ধ হলেও পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটারের অভয়াশ্রমে আজ রোববার মধ্যরাত থেকে টানা ৩ মাস ইলিশ শিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্য মাছ ধরার অজুহাতে যেন ইলিশ শিকার করতে না পারে সে জন্য অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত নদীতে নামতে পারবেন না জেলেরা। এ প্রসঙ্গে ড. আনিছুর রহমান বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সংলগ্ন আন্ধারমানিক পয়েন্টের অভয়াশ্রমটি হচ্ছে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া। অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর ইলিশের চেয়ে আগে এ পয়েন্টে মা ইলিশের প্রজনন হয়। যে কারণে এখানে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা পালিত হয়, অন্য অভয়াশ্রমগুলোর চেয়ে আগে। আগামী মার্চ-এপ্রিলে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা অপর ৫টি অভয়াশ্রমে পালিত হবে। এ ছাড়া অন্যান্য মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গভীর সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে আগামী বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির বরিশাল জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির জাকির হোসেন বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলো। এখন আবার ৮ মাসের বিধিনিষেধ। অভয়াশ্রমের বিধিনিষেধও সামনে। জেলেরা এত বিধিনিষেধে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। অথচ সহায়তা থেকে অনেক প্রকৃত জেলে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুস সালেহিন বলেন, ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা পালনের জন্য জেলেদের প্রণোদনা হিসেবে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চার মাসে ১৬০ কেজি চাল সহায়তা দেওয়া হয়। বরিশাল বিভাগে তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১৯১ জন। গত বছর চাল সহায়তা পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৭