জাগ্রত হোক প্রতিটি মানুষের বিবেক

কামরুন নাহার | ০০:৫৫, মার্চ ১৭ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ প্রতিটি মানুষের মাঝেই সৃষ্টিকর্তা দিয়ে দিয়েছেন ‘আবেগ’ এবং ‘বিবেক’ এ ছোট্ট শব্দ দুটি। ঠিক তখনই আর আমাদের বিবেক কাজ করে না- যখন এ আবেগটা আমাদের মনে একা চেপে বসে। আর এ দুই শব্দ যখনই মিলেমিশে কাজ করে তখন আর আমাদের দিয়ে খারাপ কাজ হয় না। আমরা মাঝে মাঝে নিজের অজান্তে আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে এমন কিছু করে ফেলি বিবেক তখন রাগে দৌড়ে পালায়। যখন কাজটা করার পর বিবেক ফিরে এসে বলে আমাকে দিয়ে যাচাই কর তখন দেখি কিছুই করার থাকে না। আমরা ভুলটাই চোখে দেখি। ভুল শোধরানোর উপায়ও কখনো কখনো থাকে না। ঠিক তেমনি করে আমরা কিছু মানুষের সঙ্গে সামান্য সময়ের পরিচয়ে তাদেরকে নিজের সবটুকু গোপন কথা বলে ফেলি আবেগে পড়ে, এক সময় দেখি যে ভীষণ বড়ো ভুল করেছি। কখনো কোনো মানুষের কাছে নিজের সবটুকু প্রকাশ করতে নেই। নিজেকে খোলা বই-এর মতো হতে দিতে নেই। একটি খোলা বই যখন কারো পড়া হয়ে যায় তখন আর তার প্রতি কোনো আকর্ষণ কাজ করে না। নিজেকে উদারভাবে সবটুকু পড়তে দিতে নেই। তাহলে পড়ে ফেলা সেই বইয়ের মতো নিজের কোনো মূল্যই থাকবে না। পড়ে থাকবে এখানে-সেখানে। কখনো বা বইয়ের স্তূপে যেখানে স্তরে স্তরে ধুলা জমে থাকবে। নিজেকে কিছুটা হলেও অপ্রকাশিত রাখতে হবে। তবেই সঠিক মূল্যায়নটা পাওয়া যাবে। বর্তমানে দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অল্প সময়েই একে অন্যের খুব কাছের কেউ হয়ে যাচ্ছে। আবেগে পড়ে ঘর ছাড়ছে অনেকেই। এদের মধ্যে যে শুধুই অবিবাহিত ছেলেমেয়েরাই আছে তা কিন্তু না। বিবাহিত পুরুষ মহিলাও আবেগে পড়ে সংসার সন্তান ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি নারী স্বদেশি পুরুষের প্রেমে পড়ে চলে আসছে। নীতিগত দিক থেকে চিন্তা করারও সময় তাদের থাকে না। একবার চিন্তাও করতে বিবেক বাধা দেয় না। বর্তমানে খুন হত্যা বেড়ে যাওয়ার কারণও কিন্তু এই বিবেক। আমরা এখন এমন এক সময় পার করছি যেখানে আমাদের বিবেকবোধ নেই বললেই চলে। দেখা যায় কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা সাহায্য না করে নিজে স্মার্ট ফোন বের করে তার ছবি তোলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসাটা কতটা জরুরি তা যেন আমরা ভুলেই যাই। বর্তমানে দেখা যায় মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ যেন মরে গেছে। মানুষ অমানুষে পরিণত হচ্ছে। কবরে গিয়ে ছবি তোলা থেকে লাশের সঙ্গে ছবি তোলা এখন যেন এটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে পড়েছে। বিবেক তাদেরকে বাধা দেয় না, আবেগ যেন মুখ থুবড়ে কাঁদতে থাকে। এমন কোনো বিষয় নেই যা কিনা এখনকার সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দেওয়া হয় না। মুখ চোখকে বিক্রিত করে ছবি তুলে পোস্ট দেন যা কিনা দেখলে বোঝা যায় না তারা কি সুস্থ! বিয়ে বাড়িগুলোতে গেলে দেখতে পাই সবাই যেন ছবি তুলতেই গেছেন। বর আর বউ যেভাবে আত্মীয়স্বজনের সামনে ছবি তোলে বা বলাচলে স্যুটিং করতে ব্যস্ত তা দেখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় কখনো কখনো। এটা যেন ফ্যাশন হয়ে গেছে বর্তমানে। সব কিছুকেই মজা করার উপকরণ হিসেবে বেছে নিই। আমাদের উচিত ঘুমন্ত আবেগকে জাগ্রত করা। বিবেককেও সমানভাবে প্রাধান্য দেওয়া। জাগ্রত বিবেক দিয়ে আমাদের নিজেকেই নিজে যাচাই করা। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারলেই পরিবর্তন হবে পরিবার। এরপর খুব সহজেই সমাজ পরিবর্তন হবে। জাগ্রত বিবেকই পারে একমাত্র আমাদের সমাজ পরিবর্তন করতে। সমাজ পরিবর্তন হলে দেশের পরিবর্তনও সম্ভব হবে। আবেগ এবং বিবেককে সমানভাবে প্রধান্য দেওয়ার মাধ্যমেই তা সম্ভব।