লেবুখালী সেতু যাদের চিন্তা বাড়ালো

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৩১, অক্টোবর ১১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের পায়রা নদীর ওপর লেবুখালী সেতু হয়েছে। এতে এলাকাবাসী খুশি। কিন্তু বিমর্ষ চিত্তে বসে থাকতে দেখা গেলো লেবুখালীর ফেরি-নির্ভর ব্যবসায়ীদের। সেতুর কাজ শুরুর পর থেকেই তারা পড়ে গিয়েছিলেন চিন্তায়—‘এখন তবে পরিবারকে খাওয়াবো কী!’ সেতুর কাজ শেষ। কিন্তু ফেরিতে থাকা হকারদের জীবিকার গতি হয়নি এখনও। এ নিয়ে লেবুখালী ও পটুয়াখালী প্রান্তে থাকা শতাধিক দোকানি এবং ফেরিতে থাকা ভাসমান অর্ধশত ব্যবসায়ীর খোঁজ পাওয়া যায়। সবাই বিকল্প কাজের সন্ধানে আছেন। তাদের ভরসা এখন একটাই, এলাকায় ব্রিজ ও আশপাশে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। বরিশাল প্রান্তে লেবুখালী ফেরি সংলগ্ন দোকানি কাওসার হোসেন জানালেন, ‘২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে ফেরিঘাটই আমাদের জীবিকা যুগিয়েছে। অনেক আগ থেকেই শুনে আসছি ব্রিজ হচ্ছে। খবরটা ভালো লাগলেও মনে খটকা লাগতো- ফেরি চলা শুরু হলে সংসার চালাবো কী করে। এভাবে কত বছর চলে গেলো টের পাইনি। এরমধ্যে পরিবারও বড় হয়েছে। এ ব্যবসার বাইরে কিছু শিখিনি।’ আরেক দোকানি মিজান সওদাগর জানালেন, ‘ব্রিজ হওয়ায় আমরা অখুশি নই। কিন্তু সমস্যা হলো আয় নিয়ে। ব্রিজ নির্মাণের পর থেকেই বিকল্প কিছু করার চিন্তা করছি। অনেকে অন্য জায়গায় দোকান দিয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো যাদের আয় কম তাদের পক্ষে দোকান রাখা সম্ভব হয়নি। শুনছি ব্রিজ খুলে দিলে দুই পাড়ে পর্যটন কেন্দ্র হবে। এখন আশায় আছি ওই ব্রিজকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে।’ ফেরিতে ভাসমান আমড়া বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম ও ডিম বিক্রেতা মো. সাইদ বলেন, ‘মৌসুমে আমড়া থেকে শুরু করে শসা ও ডিম বিক্রি করতাম। প্রতিদিন হাজার টাকাও আয় হয়। সবটাই চলে যায় সংসারের পেছনে। সঞ্চয় হয় না। চাল, ডাল, ডিম, তেল সব কিছুর দাম বেড়ে চলেছে। এখন তো এতদিনকার আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেলো।’ ভাতের দোকানি সোহাগ খান বলেন, ২৮ বছর ধরে তিনি এ দোকান করছেন বাবার সঙ্গে। এখন পড়েছেন চিন্তায়। বিকল্প কিছু খুঁজছেন। ঠিক করেছেন একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এলাকায় ব্যবসা করবেন। ভাতের ব্যবসা ভালো বোঝেন বলে আগের ব্যবসাই চালিয়ে যাবেন তিনি।’ চা দোকানি নাসির ও ফল বিক্রেতা জাহিদুল বলেন, ‘নদীর ওপর সেতু হওয়ার পর আমাদের কী হবে এ নিয়ে চিন্তা করে লাভ কী। চিন্তা করে পথ খুলবে না। সমস্যা হলো বছরের পর বছর এক ব্যবসা করে আসায় এতেই অভিজ্ঞ হয়েছি। এখন নতুন কিছু করতে গেলে সমস্যায় পড়বো।’ এদিকে নাসিরের মতে, ব্রিজ খোলার সংবাদে এনজিওগুলোও ঋণ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। তারা ঋণের টাকা ওঠাতে ব্যস্ত। সেতু চালুর পর অবস্থা বুঝে তারা ঋণ দেবে বলে জানিয়েছে। ফেরিঘাটে থাকা একাধিক ব্যবসায়ী বললেন, সেতু খুললেও কেউ কেউ নৌকা নামাবে নদীতে। পর্যটকরা যাতে নদীতে ঘুরতে পারে সে জন্য। কেউ ভাসমান হোটেল দেওয়ার কথা ভাবছেন। তাছাড়া দুই প্রান্তে যদি সরকার বিনোদন কেন্দ্র করে দেয়, তা হলেও আর চিন্তা থাকবে না। তাছাড়া একটি মার্কেট করার কথাও রয়েছে। প্রসঙ্গত, এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার একশ’ ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের অন্যতম নান্দনিক পায়রা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে সেতুটির।