বরিশালে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ফিরে পাবার আবেদন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৫৩, অক্টোবর ০৬ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥  বরিশাল সিটি করপোরেশনের সকল বৈধ আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নগরীর ২৬নম্বর ওয়ার্ডস্থ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা মেয়র বরাবর আবেদন করেছে। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মেয়র বরাবর ঐ আবেদন ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, কালিজিরা নদীর ওপর নির্ভর করে অনেক বছর আগে কালিজিরা বাজার সংলগ্ন নদীর তীরে নির্মান সামগ্রী (ইট-বালু-সিমেন্ট-পাথর-রড) ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। প্রায় একবছর আগে বিসিসি সেখানে পণ্যবাহি কার্গো ভেড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। এরপরেই সেখানে ব্যবসায় ধ্বস নামায় সহস্রাধিক পরিবার বেকার হয়ে পড়েছেন। সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারন দেখিয়ে নগরীর পশ্চিমাংশ কালিজিরা নদীতে পণ্যবাহি জাহাজে মালামাল ওঠানামা বন্ধ করে দিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশণ (বিসিসি)। এতে সেখানকার কয়েকশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য গত ২৬ আগস্ট মেয়র বরাবর আবেদন করেন। ঐ আবেদনের কোনো সাড়া না পেয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীরা চলতি সপ্তাহে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীর কাছে ফের আবেদন জমা দিতে যায়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন পূর্বের আবেদনের কথা উল্লেখ করে তাদেরকে বিষয়টি দেখার আশ^াস দেন। ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামীলীগ নেতা মো. হুমায়ন কবীর জানান, এখানকার ব্যবসার সঙ্গে পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক শ্রমিকের জীবিকা জড়িত। সড়ক ভাঙ্গার খোড়া অজুহাত দেখিয়ে মৌখিক আদেশে এক আগে কালিজির নদীতে পণ্যবাহি জাহাজ ভেড়া বন্ধ করে দেয়া হয়। কাউন্সিলর বলেন, আগামী ৭দিনের মধ্যে সৃষ্ঠ সমস্যার সমাধান না হলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কালিজিরাতে ব্যবসায়ীদের পণ্য ভেড়ানো হবে। এজন্য অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর দায় বিসিসিকে বহন করতে হবে। কালিজিরা বাজার থেকে নদীর তীর ঘেষে পশ্চিম দিকে পাকা সড়কের কোয়াটার কিলোমিটার এগুলোই নির্মান ইট, বালু, সিমেন্ট, পাথর ও রড ব্যবসার বড় মোকাম। এলাকায় প্রাণী খাদ্যের একাধিক বড় গোডাউনও গড়ে উঠেছে। বহুবছর আগে এ ব্যবসায়ীক মোকামটি গড়ে উঠেছে। কাউন্সিলর ও তন্ময় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধীকারি হুমায়ন কবীর বলেন, প্রত্যেক ব্যবসায়ীর বিসিসির ট্রেড লাইসেন্স আছে, তারা ট্যাক্স দেন। বিসিসির দায়িত্ব হচ্ছে যানবহন চলাচল উপযোগী সড়ক তৈরী করে দেয়া, বন্ধ করে দেয়া নয়। তরুন ব্যবসায়ী মো. কায়কোবাদ জানান, নদীপথে পণ্য আমদানীর সুবিধায় কমপক্ষে ৩০ বছর আগে এ এলাকায় প্রথমে বালুর ব্যবসা গড়ে ওঠে। পরে পর্যায়ক্রমে ব্যবসার প্রসার ঘটে পাথর, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মান সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। সিলেট, ছাতক, ভোমরা থেকে নদীপথে বালু ও পাথর এনে বিক্রি করা হয়। প্রাণী খাদ্য উৎপাদনকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানের গোডাউনও রয়েছে এখানে। ফলে ইট-বালু-পাথর ক্রয়-বিক্রয়ে নগরীর প্রধান মোকাম চাঁনমারী বিকল্প ব্যবসা গড়ে ওঠে কালিজিরাতে। কায়োকাবাদ বলেন, প্রায় একবছর আগে মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও চাঁনমারী মোকামের ইজারাদর মানিক হাওলাদার এসে সেখানে পণ্যবাহি জাহাজ ভেড়া বন্ধের নির্দেশ দেন। তারা অজুহাত দেখান- এসব পণ্য পরিবহনে ট্রাক চলাচল করায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চাঁদমারী মোকামের ইজারাদার মানিক হাওলাদার বলেন, তিনি জাহাজ ভেড়ানো বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিতে কালিজিরাতে যাননি। ওটা বন্ধ করেছে বিসিসি। তারা সেখানে জাহাজ ভেড়ানেবার জন্য বিআইডব্লিউটিএর জেটি স্থাপন করে দেবে। জেটি স্থাপনের সম্ভাব্যতা দেখতে তিনি (মানিক) বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একবার কালিজিরাতে গিয়েছিলেন। অপরদিকে বিআইডব্লিউটিএর’র বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কালিজিরা চ্যানেলটি জাহাজ চলাচলের তালিকাভূক্ত নদী নয়। যে কারনে সেখানে জেটি স্থাপনের চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত তাদের হয়নি। বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, কালিজিরা এলাকার ব্যবসায়ীরা তাকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে আসার পর তার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।