চরফ্যাসনে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও ‘সকস বাংলাদেশ’

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৩৩, অক্টোবর ০৫ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভোলার চরফ্যাশনের গ্রামগঞ্জে সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ঋণ দেয়ার নামে প্রতারণা করে এক হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে ‘সকস বাংলাদেশ’ নামের একটি ভুয়া এনজিও। মঙ্গলবার গ্রাহকরা ঋণ নিতে এসে চরফ্যাসন শরীফপাড়া এনজিওর অফিস তালাবন্ধ দেখেন। এতে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা সকালে থানায় অবস্থান নেন। ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রায় এক মাস ধরে ‘সকস বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর কয়েকজন মাঠকর্মী ঋণ দেয়ার নামে পৌর সদরসহ মাদ্রাজ, আসলামপুর, জিন্নগড় এই চারটি ইউনিয়নে প্রচারণা শুরু করে। আগ্রহী গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম সঞ্চয় বাবদ ১০ হাজার ২০০ টাকা করে উত্তোলন করেন। এছাড়া অফিসে কর্মী নিয়োগের জন্য চারজনের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে জামানত হিসেবে হাতিয়ে নেয়। গত শুক্রবার সদরের শরীফপাড়ার একটি বাসায় প্রত্যেক ওয়ার্ডের ১০ সদস্য নিয়ে গঠন করা কেন্দ্র প্রধানদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস উদ্বোধন করে। মঙ্গলবার ঋণ দেয়ার দিন ধার্য করেছিন। কিন্তু মঙ্গলবার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ঋণপ্রত্যাশীরা এনজিওর দেয়া ঠিকানামতে অফিসে এলে দেখেন- ঘরটি তালাবদ্ধ, নেই কোনো সাইনবোর্ড। অফিসের সামনে পূর্বের দেয়া সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলে পালিয়ে গেছে ওই এনজিওর কর্মীরা। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী নারী শাহানুর জানান, ‘সকস বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজির দু’জন মাঠকর্মী তাদের বাড়িতে যান। জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে ঋণ দেবেন- এমন অজুহাতে ওই গ্রামে একটি কেন্দ্রে ১০ জন সদস্য সংগ্রহ করেন। সদস্যপ্রতি অগ্রিম সঞ্চয় হিসেবে ১০ হাজার টাকা ও সদস্য ফি বাবদ ২০০ টাকা করে উত্তোলন করেন। গ্রাম থেকে সুদে ১০ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে এনজিও কর্মীদের অগ্রিম সঞ্চয়ের টাকা পরিশোধ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার ঋণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিস ঘরটি তালাবন্ধ। নেই কোনো সাইনবোর্ড। কর্মীদের মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন। নিরূপায় হয়ে তিনি ও অপর ভুক্তভোগী নারী-পুরুষরা স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানান। একইভাবে মিনারা, ইয়ানুর, শাহানুর, নুরুল ইসলাম ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় এক হাজার নারী পুরুষ ভুয়া এনজিওর প্রতারণার খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। উত্তর মাদ্রাজ গ্রামের মিনারা বেগম জানান, ওই এনজিও কর্মীরা তার ছেলে আসিফকে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দেবেন বলে তার কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। ছেলের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে তার দিনমজুর স্বামী একটি গাভী গরু বিক্রি করে তাদের ৩০ হাজার টাকা দেন। ছেলের চাকরি তো দূরের কথা অফিসে এসে দেখেন ওই টাকা হাতিয়ে নিয়ে এনজিও কর্মীরা পালিয়েছে। একইভাবে নাজিউর, রহিম, আকবর নামে আরো তিন যুবককে চাকরি দেয়ার নামে ৪০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন ভুয়া এনজিও কর্মীরা। ঘরমালিক ইউনুছ চৌধুরী জানান, ঘরভাড়ার চুক্তির কথা থাকলেও ওই এনজিও কর্মীরা ভাড়ার কোনো চুক্তি না করেই পালিয়ে গেছেন। চরফ্যাশন থানার ওসি মো: মনির হোসেন মিয়া জানান, ভুক্তভোগীরা সকালে থানায় এসে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।