বরিশালে প্রধান শিক্ষক ও দুই সহযোগী শিক্ষকের খাঁচা বাণিজ্য

কামরুন নাহার | ০০:১২, মার্চ ১৫ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষে নতুন প্রজেক্টর রাখার খাঁচায় যেন পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালিশ কাণ্ডের ভূত ভর করেছে। বরিশালে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেয়ার জন্য শ্রেনীকক্ষে প্রজেক্টর রাখার প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে ৪ হাজার টাকা বিল নেয়া হচ্ছে বলে জানায় একাধীক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক। ওই সমস্ত খাঁচা তৈরিতে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানিয়েছে খাঁচা তৈরি ওয়ার্কসপ মালিক শাহাবুদ্দিন। আর এসব অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বরিশাল নগরীর বিনা পানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক এইচ.এম আব্দুল হাই, একই বিদ্যালয়ের পার্থ সাহা ও ভাটিখানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পলিন্স। নগরীর বিনা পানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এইচ এম আব্দুল হাই জানিয়েছে, আমার বিদ্যালয়েও খাঁচা বসানো হয়েছে। আর প্রজেক্টর রাখার খাঁচা তৈরিতে ৪ হাজার টাকা তিনি নিজে খরচ করেছেন বলে দাবী করলেও পরে ভোল পাল্টে বলেন ১৫/২৫ শত টাকার মত খরচ হয় খাঁচা তৈরীতে। অপর দিকে দুজন সহকারী শিক্ষক একই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিনা পানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পার্থ সাহা বলে, শ্রেনীকক্ষে প্রজেক্টর রাখার বিষয় অগের প্রধান শিক্ষক এইচ এম আব্দুল হাই স্যার ভালো বলতে পারবেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রজেক্টর লাগানো বাবদ স্কুল থেকে কোন টাকা নেইনি। ওয়ার্কসপ মালিক শাহাবুদ্দিন আমার নামটা কেন বললো তা আমার জানানেই। ভাটিখানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পলিন্স’র সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমার স্কুলে প্রজেক্টর রাখার খাঁচা তৈরিতে ৪ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে। এসকল বিষয় ওয়ার্কসপ মালিক শাহাবুদ্দিন বলে, শিক্ষক এইচ এম আব্দুল ‘হাই স্যার, পার্থ স্যার ও পলিন্স স্যার আমার এখানে খাঁচা তৈরির অর্ডার দিয়েছে। আমি তাদের কথা মত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তা লাগিয়ে দিয়েছি। তবে ২৫শত টাকায় তৈরী খাঁচা খুব কম স্কুলেই লাগানো হয়েছে। ১৫শত টাকার খাঁচা বেশি লাগানো হয়েছে। ম্যামোতে কোন টাকা উঠানো নেই আমি দিতে চাই ছিলাম তখন পলিন্স স্যার উঠাতে দেননি। ঠিক ওই দুজন স্যার একই কাজ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, পলিন্স নিজের বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিদ্যালয় প্রজেক্টর রাখার খাঁচা থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে কোন ক্যাশ মেমো দেয়া হয়নি। নাম বলতে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক জানায়, আমার স্কুলে প্রজেক্টর রাখার খাঁচা তৈরিতে ৪ হাজার টাকা পলিন্সকে দেয়া হয়েছে কিন্তু কোন ক্যাশ মেমো দেয়নি। তাকে ফোন দিলে টালবাহানা শুরু করে। এসকল বিষয় জানতে চাইলে পলিন্স বলে, আমার স্কুলে প্রজেক্টর রাখার খাঁচা তৈরিতে ৪ হাজার টাকা ব্যায় করেছি। অন্যএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু আমার স্কুলে খাঁচা বসানো হয়েছে। আমার দেখা দেখি অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানতে চেয়েছেন কোথা থেকে বানানো হয়েছে ? আমি শুধু ওয়ার্কসপ মালিকের মোবাইল নাম্বার দিয়েছি। আপনি চাইলে মোবাইল নাম্বার নিতে পারেন। তিনি আরো বলেন “ভাই আপনি কি বরিশালের ছেলে ? যদি বরিশালের হন তাহলে তো আমাকে আপনার চেনার কথা। তা ছাড়া আমি এক সময় বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রলীগ করেছি”। এ বিষয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাছিমা আক্তারের মুঠো ফোনে একাধীকবার ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তার সেল ফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সেখান থেকে কোন উত্তর মেলেনি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলামকে একাধীকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় তারও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য বিভিন্ন লোকজন দিয়ে এ প্রতিবেদককে ফোন দেয়া হয়। আসলে দুই চার হাজার টাকা কোন বিষয় নয়। একজন শিক্ষক যিনি মানুষ গড়ার কারিগর। তারা নিজেরাই যদি দুর্নীতি করেন তাহলে তারা শিার্থীদের কি শেখাবেন এমন অভিমত সচেতন নাগরিকদের।