দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতায় ব্যাহত পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:০৪, সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২১ মিনিট

  নিজস্ব প্রতিবেদক ।। বরিশাল নগরীকে পরিকল্পিত নগরী করার মূল পরিকল্পনার দায়িত্ব বরিশাল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের সাথে তাদের সমন্বয় না থাকার কারণে ব্যাহত হচ্ছে নগর উন্নয়ন। যার ফলে বরিশাল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর পরিকল্পিত নগর করতে চাইলেও তাদের মাস্টার প্লান আলোর মুখ দেখছে না। এমনটাই দাবী নগর পরিকল্পনাবীদদের। সূত্রমতে, নগরীকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এবং মানুষের সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর রেখে ভূমির ব্যবহার, বাসস্থান, পরিবহন থেকে শুরু করে নগর উন্নয়ন কাঠামো ও মূল পরিকল্পনার দায়িত্বে রয়েছে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের। এ দপ্তরটি নগরের অন্যান্য দপ্তরের কার্যক্রমকে তদারকি করে। বিশেষ করে নগর উন্নয়নে সম্পৃক্ত দপ্তরসমূহগুলোর সাথে কাজের সমন্বয় করে। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরকে এড়িয়ে অন্য কোনো দপ্তর যদি কাজ করে তবে তাদের বাঁধা দেয়ার কোন আইনি সুযোগ নেই। আর এ কারণেই ব্যাহত হচ্ছে পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন। বরিশালকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়সহ প্রচার ও প্রসারের উদ্যোগ নেয়াও নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের কাজ। সূত্রমতে, ২০০২ সালে পৌরসভা থেকে সিটি করর্পোরেশনে রুপান্তর হয় বরিশাল। এর পরে ২০০৬ সালে মেট্রোপলিটন এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় বরিশাল। এরপর থেকে নগরীর নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হলেও নগর উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা না থাকায় পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়নি। ২০১০ সালে বরিশাল নগরীর উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা (মাস্টার প্লান) তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনে ওই মাস্টারপ্লান কার্যকরের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ আলোর মুখ দেখেনি। যে কারণে পরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো গড়ে উঠছে না। গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত বরিশাল নগরী। যার প্রভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে নগরবাসী। ২০১০ সালে মাস্টারপ্ল¬ানে তিন ধাপের প্লানের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। প্রথম প্লান (স্ট্রাকচার প্লান) যা করা হয়েছিল ২০১০ থেকে ২০৩০ সালের জন্য। দ্বিতীয় প্ল¬ান (আরবান এরিয়া প্লান) যা করা হয়েছিল ২০১০ থেকে ২০২০ সালের জন্য। তৃতীয় প্লান (অ্যাকশন এরিয়া প্লান) যা করা হয়েছিল ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ জনগণের কোনো ধারণা নেই। এমনকি মাস্টার প্লান বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যেও নেই কোনো সমন্বয়। ফলে অপরিকল্পিতভাবে চলছে নগরের উন্নয়নের কাজ। যে কারণে বিভাগীয় এই বরিশাল নগরী পরিকল্পিত রূপে যেতে পারেনি। বরিশাল সিটি করপোশেন (বিসিসি) কর্তৃপক্ষের দাবি, মাস্টারপ্লান অনুসরণ করেই নগরের উন্নয়ন করা হচ্ছে। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর বরিশালের পরিকল্পনাবিদ মোঃ বাইজিদ দেশ জনপদকে জানান, মাস্টারপ্লান অনুসরণ করে নগরের উন্নয়ন করা হচ্ছে না। ফলে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত বরিশাল নগরী। যার প্রভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে নগরবাসী। অবশ্যই নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ২০১০-১১ সালের প্রস্তাবিত (স্ট্রাকচার প্লান, আরবান এরিয়াপ্লান, অ্যাকশন এরিয়া প্লান) এই তিনটি মাস্টার প্লান বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তাহলেই এই বরিশাল নগরী একটি পরিকল্পিত নগরীতে রূপ নিবে। ২০১১ সালে বরিশাল নগরীর মাস্টারপ্লান  বাস্তবায়নের ২০১০-২০৩০ সাল পর্যন্ত যে ২০ বছরের স্ট্রাকচার প্লান দেয়া হয়েছিল তার আওতায় রয়েছে সিটি করপোরেশনসহ সংলগ্ন ১৮ হাজার ৬৭০ একর এলাকা। যার ২০২৫ সালে ৭ লক্ষ এবং ২০৩০ সালে ৮ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার লক্ষে ১৯ অক্টোবর ২০১১ সালে বরিশাল নগরীকে ৭টি জোনে ভাগ করে উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা (মাস্টারপ্লান) প্রণয়ন করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, এই মাস্টারপ্লানে বলা হয়েছিল কিভাবে নগরের এরিয়া না বাড়িয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে নগরের উন্নয়ন করা যায়, নগরীর খালগুলো সংরক্ষণ করে সেগুলোকে মানুষের চলাচল উপযোগী করে তোলাসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তাগুলো প্রশস্ত করাসহ নানা কার্যক্রম যা বাস্তবায়ন হলে তৈরি হতো একটি পরিকল্পিত বরিশাল নগরী। এ ছাড়া ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের নগরীর ভেতরের অংশ স্থানান্তর করে গড়িয়ার পাড় মোড় থেকে কালিজিরা সেতু পর্যন্ত নতুন বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে রাখা হয়েছি মাস্টারপ্লানে। যা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ)। নগরীর সাধারণ জনগণের মাস্টারপ্ল¬ান সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। তাই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে আগে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ শাহেদ বলেন, মহাসড়কে নতুন বাইপাস করার জন্য একটি প্রকল্প খুব শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।