কারা ফটকেই জীবন গড়ার হাতিয়ার

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:৪৩, সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কারাগারের ফটকেই জীবন গড়ার হাতিয়ার পাচ্ছেন কারাভোগকারীরা। গত এক বছরে এভাবে ১২ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি, সমাজসেবা অধিদফতর এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চলছে এ পুনর্বাসন কার্যক্রম। যে তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে খাদিজার নাম। গত সপ্তাহে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এরপর সোমবার ২৭ সেপ্টেম্বর তার হাতে তুলে দেয়া হয় ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার হাতিয়ার সেলাইমেশিন। একটি অপহরণ মামলায় গ্রেফতার হয়ে ৬ মাস ১৮ দিন যাবত কারাগারে ছিল সে। মুক্তি পাওয়ার পর সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির পক্ষ থেকে তার হাতে সেলাইমেশিন তুলে দেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। জীবিকা নির্বাহের জন্য একইভাবে আরও ১১ জনের মাঝে সেলাইমেশিন আর রিকশাভ্যান দেওয়া হয়েছে এই কর্মসূচির আওতায়। খাদিজা বেগম বাকেরগঞ্জ উপজেলায় কৃষ্ণকাঠী গ্রামের বাসিন্দা মো. শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের দাম্পত্য জীবনে রয়েছে তিন মেয়ে আর দুই ছেলে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখ বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ একটি অপহরণ মামলায় গ্রেফতার করে তাকে জেলহাজতে পাঠায়। কারাগারে ৬ মাস থাকাকালীন খাদিজা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির মাধ্যমে সেলাইমেশিন চালানো শেখেন। আর এই কর্মসূচির আওতায় তাকে কারামুক্তির পর দেওয়া হয় সেলাইমেশিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকদার, ইউনিসেফ চিফ এএইচ তৌফিক আহমেদ, প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজসহ অনেকে। আরেক বন্দির নাম আবদুর রহমান। তার বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলায় নরসুন্দরপুরে। তিনি চুরির মামলায় ঢাকা থেকে আটক হন। এরপর দেড় বছর কারাগারে কাটে আবদুর রহমানের। আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি ঢাকাতে রিকশা চালাতাম। একদিন এক যাত্রী ওঠে; কিন্তু সে পুলিশ দেখে রিকশায় মালামাল রেখেই পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ আমাকে আটক করে। সেই মামলায় দেড় বছর কারাভোগ করতে হয় আমাকে। কারাগারে আমাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে পুলিশ। পরে কারামুক্তি পেলে তারা আমাকে একটি ভ্যানগাড়ি দেয়। আবদুর রহমান জানান, এখন তিনি সেই ভ্যান ঢাকাতে চালিয়ে ভালোই আছেন। কারাগার থেকে যে শিক্ষা পেয়েছেন তা এখন তার বাস্তব জীবনে কাজে লাগছে। অপহরণ, মাদক, চুরিসহ বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করে এরা ছাড়াও পুনর্বাসনের আওতায় এসেছেন- লিনা বেগম, সাথী আক্তার, লাকি আক্তার, আয়শা, জসিম উদ্দীন, রতন, প্রভা হালদার, জেসমিন সুলতানা, পিয়ারা, খালেদা আক্তার ও কণা বেগম। এ ব্যাপারে সমাজসেবার প্রবেশন অফিসার ও অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, সমিতির মাধ্যমে বন্দিদের আমরা কাউন্সেলিং করে থাকি। পাশাপাশি জীবন দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে যেমন- সেলাই, কাঠমিস্ত্রি, বেতের কাজ, ইলেকট্রনিক্স। আর বন্দিরা যখন কারাভোগ করে বের হন, তখন তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় সেলাইমেশিন ও ভ্যানগাড়ি। এছাড়া বন্দিদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য টেলিভিশন, খেলার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। তাদের নিয়ে করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা মাদকবিরোধী কর্মসূচি।