শেবাচিম ও সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ভীতি নিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা

কামরুন নাহার | ০০:২৫, মার্চ ১৩ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দৈনিক প্রায় ৩ সহস্রাধিক রোগীকে ভীতি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে শেবাচিম ও সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা। করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষামুলক সরঞ্জামাদি না থাকায় এক প্রকার ভীতি নিয়ে রোগী দেখতে হচ্ছে বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের। সুরক্ষার জন্য বিশেষ এপ্রোন, শু কভার, ওটি মাস্ক, মাথার কভার, হ্যান্ড গ্লাভস এসে পৌঁছায়নি শেবাচিম এবং সদর হাসপাতালে। ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে ঢাকায় অর্ডার করেছে এসব সরঞ্জামাদি ক্রয় করার জন্য। সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিভাগের সার্জারি, মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স, চক্ষু, চর্ম ও যৌনসহ অন্যান্য বিভাগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দশ টাকা টিকেটের বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে হাসপাতাল দুটিতে। ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রামক একজন থেকে অপরজনে ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। যেকারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাস্কসহ বিশেষ পোশাক ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়েছে। ইতিমধ্যে চায়নাসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মারাও গিয়েছে। নাম অপ্রকাশের শর্তে একাধিক বহির্বিভাগের চিকিৎসক বলেন, একরকম ভীতি নিয়েই আমাদেরকে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে, কারণ বাজারে এ সরঞ্জামাদির সংকট রয়েছে। আর রোগীকে চিকিৎসাসেবো দেয়ার ক্ষেত্রে রোগী দূরে রেখে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ তার অসুবিধাগুরো মনোযোগ দিয়ে শুনতে ও শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থাপত্র লিখতে হয়। যেকারণে রোগী থেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় বহুগুনে। এনিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রাসেল বলেন, আমাদের এরকম ঝুঁকির মধ্য দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে আপাতত, তবে শীঘ্রই সুরক্ষামুলক এ উপাদানগুলো আমাদের কাছে পৌঁছে যাবে। কিন্তু আপনি সুরক্ষামূলক উপাদান ব্যবহার না করেই চিকিৎসা দিচ্ছেন এতে তো আপনিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন জানতে চাইলে চিকিৎসক আরো বলেন, কর্তৃপক্ষ না দিলে তো আমাদের তেমন কিছু করার থাকেনা। অপরদিকে একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল দিনভর শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয় ছিলো আতংকের মধ্যে। কারন গৌরনদী থেকে করোনা রোগী শেবাচিমে ভর্তি হবে এ খবরে হাসপাতালটির করোনা ইউনিটটিতে কোন প্রকার সুরক্ষামুলক উপাদান না থাকায় কোন জনবল পাওয়া যাচ্ছিলনা। এনিয়ে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক, নার্স ও ব্রাদার ভীতি প্রকাশ করে বলেন, আমরা হাসপাতালের পরিচালকের সাথে মিটিং করেছি এনিয়ে। কোন প্রকার সুরক্ষামুলক উপাদান না আসলে করোনায় আক্রান্ত কোন রোগীকে চিকিৎসা সেবা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় । আর কেউ যদি বিদেশ থেকে এসেছে জানা যায় তবে ভয়ে কেউ কাছে গিয়ে চিকিৎসা দিতে চায়না। এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের নার্সিং তত্বাবধায়ক সেলিনা আকতার বলেন, সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে পরিচালক এখন পর্যন্ত আমাদেরকে করোনা ইউনিটে দেয়নি। তবে ইতিমধ্যে রেইনকোর্ট, গাম বুট, গ্লাবস ও মাস্কের ব্যবস্থা অল্প পরিসরে হয়েছে (এটি দু ঘন্টার বেশি থাকেনা)। তবে আরো ভালো মাস্ক আনার জন্য অর্ডার করা হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, গত ০৮ মার্চ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বাংলাদেশে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করে এবং ইতিমধ্যে বরিশালের ঝালকাঠী, গৌরনদী, মাদারীপুরসহ ১৭টি জেলায় ২শ ২০জন বিভিন্ন হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে (আক্রান্ত হওয়ার আশংকায়) রয়েছে। এরমধ্যে মানিকগঞ্জে ৭৯, নারায়ণগঞ্জে ৪০, মাদারীপুরে ৩০, কিশোরগঞ্জে ৩৪, ফেনীতে নয়, নোয়াখালীতে এক, যশোরে ছয়, বগুড়ায় দুই, নরসিংদীতে দুই, খুলনায় এক, সিলেটে এক, ফরিদপুরে তিন, জামালপুরে এক, রাজবাড়ীতে দুই, ঝিনাইদহে দুই, চুয়াডাঙ্গায় এক এবং দিনাজপুরে একজন রয়েছেন। বরিশালের স্বাস্থ্য দপ্তর ৩৪টি থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৬টি জেলা হাসপাতালে করেনার জন্য বিশেষ বেড প্রস্তুত রেখেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য। এছাড়াও শেবাচিম ও সদর হাসপাতাল প্রায় ২শ ৫০টি বেড প্রস্তুত রেখেছে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য।