বরগুনায় ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্যসচিবকে আইনি নোটিশ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:১৮, সেপ্টেম্বর ২৮ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে ২৩ সেপ্টেম্বর চাইল্ড কেয়ার সেন্টারের চিকিৎসক মাসুম বিল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। নোটিশে তিনটি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুরো বরগুনা জেলায় তদন্ত করে ভুয়া ও অনিবন্ধিত চিকিৎসকদের খুঁজে বের করা, তাদের তালিকা করে সিভিল সার্জন অফিসের নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে আদালতে হাজির করা। বরগুনায় ‘ভুল চিকিৎসায়’ শিশু মৃত্যুর ঘটনার জেরে জেলার ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। তারা দুজন ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক, বরগুনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের কাছেও এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নাগরিক অধিকার নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসান তারিক পলাশ এই নোটিশ পাঠান। নোটিশে তিনটি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুরো বরগুনা জেলায় তদন্ত করে ভুয়া ও অনিবন্ধিত চিকিৎসকদের খুঁজে বের করা, তাদের তালিকা করে সিভিল সার্জন অফিসের নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে আদালতে হাজির করা। বরগুনা সদর উপজেলার চালিতাতলী গ্রামের সাইদুল ইসলাম গত ২৩ সেপ্টেম্বর সদরের চাইল্ড কেয়ার সেন্টারের চিকিৎসক মাসুম বিল্লাহর নামে ভুল চিকিৎসার মামলা করেন। ওইদিন রাতেই মাসুমকে গ্রেপ্তার করে পরদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সাইদুলের অভিযোগ, তার ৯ মাসের ছেলে ইয়ামিন জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হলে ১৯ সেপ্টেম্বর মাসুমের কাছে নিয়ে যান। মাসুম প্রাথমিকভাবে দেখে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন পরীক্ষা দেন। ৩ হাজার টাকায় পরীক্ষাগুলো করানোর পর মাসুম রিপোর্ট দেখে তাদের জানান, ইয়ামিনের হৃদযন্ত্রে সমস্যা আছে। তাকে পরপর চার দিন চারটি ইনজেকশন দিতে হবে। পরে ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাসুম নিজে একটি ইনজেকশন দেন ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সাইদুল জানান, ইনজেকশন পুশ করার পর থেকেই ইয়ামিনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাত ৮টার দিকে মাসুমকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানালে তিনি ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। পরে রাত ৯টার দিকে খিঁচুনি দিয়ে তার ছেলের মৃত্যু হয়। আইনি নোটিশে দাবি করা হয়, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বরগুনা জেলার ছয় উপজেলায় দুই শতাধিক ভুয়া চিকিৎসক আছেন যারা ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখেন। আগেও এই বিষয়ে অভিযোগ উঠলে তৎকালীন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ইউনুস আলী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান। তবে পরে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী, ‘এই আইনের অধীন নিবন্ধন ব্যতীত কোনো মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করিতে, অথবা নিজেকে মেডিক্যাল চিকিৎসক বা, ক্ষেত্রমতো, ডেন্টাল চিকিৎসক বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে পারিবেন না।’ এই আইন কেউ অমান্য করলে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আইনজীবী পলাশ  বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার অধিকার আমাদের অন্যতম সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। এদের কারণে নাগরিক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রানহানি ঘটছে। আমাদের দাবি, সব অনিবন্ধিত চিকিসকদের চিকিৎসার নামে ব্যবসা বন্ধ করতে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নেবে।’ এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বলেন, ‘সম্প্রতি শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর আমরা ভুয়া চিকিৎসকদের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ছাড়া আমরা এদের বিষয়ে বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’ জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, ভুয়া চিকিৎসকদের বিষয়ে তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় দ্রুত ভুয়া চিকিৎসক শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।