ডিবি’র খাঁচায় বরিশালের পাপিয়া চক্র

কামরুন নাহার | ০০:৫১, মার্চ ১২ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিত্তবানদের পরিকল্পিত টার্গেট ও যৌন সর্ম্পকের প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে মুক্তিপন আদায়কারী চক্রের ১০ জনকে আটক করেছে বরিশালের মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে পাপিয়াদের উত্তরসুরি ঝুমুর চক্রের ৫ নারীসহ অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এ চক্রের সাথে বিএম কলেজ পড়–য়া নারী শিক্ষার্থী ঝুমুরসহ আরও অন্তত ৩০ জনের বেশি জড়িত রয়েছে। এখন তাদেরকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে গত ২৫ ফেব্র“য়ারি দৈনিক দেশ জনপদ পত্রিকায় “ধরাছোয়ার বাইরে বরিশালের পাপিয়ারা” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় পর গতকাল নগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে সন্ধান মিলেছে গ্র“পভিত্তিক ভয়ানক এই প্রতারক চক্রের। চক্রটি সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করে সমাজের উচ্চবিত্তদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভনে আবাসিক বাসায় নিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ শেষে ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। সম্প্রতি বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের বাসিন্দা সোহেল আলম মাসুদ নামে এক যুবক তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী সোহেল আলম মাসুদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার ভোর রাতে ঝুমুর চক্রের প্রায় ১০ জনকে আটক করে। এনিয়ে গতকাল দুপুরে বিএমপি পুলিশ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-পরিচালক জুলফিকর আলী। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে বি.এম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ঝুমুর ও সহযোগী জাকির হোসেন (৩৮), মামুন বয়াতী(৩৪), সেলিম হাওলাদার (৪৫), মকবুল হোসেন(৩৫), আরিফুর রহমান তালুকদার(৩০), লিজা বেগম(২৫), মঞ্জুয়ারা মনি(৩০), ফারহাসা আক্তার ঝুমুর(২৫), খুশি বেগম(৪০), আশা আক্তার(২০)। আটককৃতদের থেকে চাঁদাবাজিকালে নগদ সাড়ে ১৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এদিকে আটককৃতদের ব্যাপারে ডিবি পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে এই চক্রটির ব্যাপারে কাজ করছিলাম। সবশেষে একটি অভিযোগও পেয়ে যাই। এরপর আধাজল খেয়ে কাজে নেমে পরি এবং রাতভর অভিযান শেষে চক্রটিকে জব্দ করতে সমর্থ হই। এসময় তিনি আরো বলেন, ঝুমুর মেয়েটি দুই মাস ধরে সোহেল নামে এক ব্যক্তির (অভিযোগকারীর) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং গত মঙ্গলবার তাকে বরিশাল কলেজের সামনে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের চ্যাটার্জী লেনের লাবু মিয়ার ভাড়াটিয়া জাকিরের বাসায় নিয়ে আসে। একপর্যায় ঠিকাদারকে আটকে বিবস্ত্র করে, এমন সময়ে প্রতারক চক্রের দুই সদস্য জাকির ও মামুন ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে মারধরের একপর্যায়ে উলঙ্গ শরীর ভিডিও করে। পরে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে নগদ ৯ হাজার টাকা ও পরবর্তীতে বিকাশের মাধ্যমে আরও ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রতারণার শিকার সোহেল আলম মাসুদ পুরো ঘটনাটি উল্লেখ করে ওইদিন পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি অভিযোগ করলে তাদের ধরতে মাঠে নেমে সফলতা পায় ডিবি পুলিশ। এদিকে চক্রটি নিয়ে অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, চক্রটির মূল হোতা মকবুল হোসেন এবং নগরীর ফকির বাড়ী রোডের চৌধুরী ভ্যালির ভাড়াটিয়া এশার মা দীর্ঘদিন যাবত বরিশালে চক্রটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি নগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে। প্রতারক মকবুল হোসেন কাউনিয়া থানার এস.আই সেলিমের ভাই। ভাইয়ের পরিচয়ে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যেত মকবুল। নিজের ঘরে ভয়ানক প্রতারক চক্রের বসবাস জেনওে নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন আইনের শাসক ভাই এস.আই সেলিম। আপন ভাই পুলিশের এস.আই হওয়ায় মকবুল ও তার স্ত্রী লিজা বরিশালের মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সবশেষ গোয়েন্দা পুলিশ তাদের লাগাম টানতে সমর্থ হয়েছে।