অবশেষে সেই ছাত্রীর মামলা নিলো পুলিশ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৫৭, সেপ্টেম্বর ২৬ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরগুনার পাথরঘাটায় একটি স্কুলের ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১৪) জোরপূর্বক চুমু খেয়ে মোবাইলে টিকটক ভিডিও তৈরি করে তারই সহপাঠী নাঈম (১৫) নামের এক কিশোর। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। পরে বিষয়টি নিয়ে ওই স্কুলছাত্রীর মা থানায় মামলা দিতে গেলে মামলা না নেওয়ায় আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে ওই ছাত্রী ও তার মা। নাঈম উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাজিরখাল গ্রামের সৌদি প্রবাসী সগির খানের ছেলে ও আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সগির খানের স্ত্রী ছেলে নাঈমকে নিয়ে পৌর শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাঈম বখাটে এবং উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির ছেলে। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে ইভটিজিংসহ মারামারির অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে পাথরঘাটা কেএম মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বহিষ্কারের পর সে আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ওই স্কুলছাত্রী জানায়, একই স্কুলের সহপাঠী নাঈম দীর্ঘদিন ধরে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করত। এরই জের ধরে গত বুধবার স্কুল ছুটির পর ক্লাস থেকে বের হওয়ার আগেই নাঈম ওই ছাত্রীর স্কুলব্যাগ নিয়ে বাহিরে বের হয়। ওই ছাত্রী ব্যাগের জন্য নাইমের কাছে গেলে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। এ দৃশ্য পাশ থেকে একই ক্লাসের সবুজ নামে অন্য এক ছাত্র ভিডিও ধারণ করে; যা পরবর্তীতে ফেসবুকে ছেড়ে দেয় নাঈম। বিষয়টি লজ্জায় কাউকে জানাইনি। কিন্তু শুক্রবার তার এক প্রতিবেশী ভিডিওটি আমাকে দেখালে বিষয়টি আমার মাকে জানাই। স্কুলছাত্রীর মা বলেন, নাঈম তার মেয়েকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করে আসছে। এ নিয়ে এক বছর আগে নাঈমের মামা ইউসুফের কাছে বিচার দিলেও কোনো সমাধান পাইনি। এরপর গত দুই দিন আগে আমার মেয়েকে নিয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ ভিডিওটি দেখার পর আমার মেয়েকে মারধরও করি। এরপর বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানালে তিনি বিচার করবেন বলে আমাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। প্রধান শিক্ষক নাঈমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যার্থ হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে পাথরঘাটা থানায় গিয়ে বিষয়টি ওসি আবুল বাশারকে জানাই এবং মামলা করার কথা বলি। কিন্তু ওসি দীর্ঘক্ষণ আমাদের বসিয়ে রেখে তার একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে পরে আসতে বলে আমাকে ও মেয়েকে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন আমি তাকে মামলা না নিলে একটি জিডি নেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ওই ছেলেকে দেখলে তাকে যেন ফোন দেয়- এই বলে পাঠিয়ে দেন। ওই ছাত্রীর মা আরও বলেন, আমার মেয়ের সম্মান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই বখাটে নাঈম ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি এ বিষয়টি নিয়ে থানায় গিয়েও যদি আইনের আশ্রয় নিতে না পারি তাহলে আমি যাব কোথায়? সমাজে মুখ দেখানোর উপায় নেই। এখন আমাদের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, স্কুল ছুটির পর স্কুল গেটের বাইরে এ ধরনের একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে নাঈমের পরিবারকে অবহিত করলে তারা নাঈমকে হাজির করতে পারেনি। সে কারণে আমরা বিষয়টি নিয়ে সমাধানে যেতে পারিনি। এ ব্যাপারে নাঈমের মায়ের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আপনার কিছু জানার থাকলে সামনে এসে কথা বলব বলেই ফোন কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিয়ে বলেন, বিষয়টি পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন ও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষন সমাধান করে দেবেন। তাছাড়া আমার ছেলেকে বিভিন্ন লোক ফোনে হুমকি দেওয়ার পর খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ছেলের সন্ধান চাই। এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ওসি আবুল বাশার জানান, রাতে স্কুলছাত্রী ও তার মা থানায় এসে বিষয়টি জানিয়ে গেছেন। তারা মামলা করার জন্য আসেননি বরং মৌখিক অভিযোগ করতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।