পুলিশের লাঠিচার্জে জেলের মৃত্যু, বিচার দাবীতে উত্তাল জনতা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:৫৭, সেপ্টেম্বর ২১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নৌ পুলিশের লাঠির আঘাতে এক জেলের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকাল অনুমান ১১টার দিকে উপজেলার বালিয়াতলি ইউনিয়নের ঢোস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জেলে সুজন হাওলাদার (৩০) একই ইউনিয়নের চরবালিয়াতলি গ্রামের চৌকিদার বাড়ীর মৃত আবদুস সত্তার’র ছেলে। এ ঘটনা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার গ্রামবাসী বিক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। অভিযুক্ত নৌ-পুলিশের বিচার দাবীতে উত্তেজিত জনতা চার পুলিশ সদস্যকে তাদের কথিত সোর্স সহ ট্রলারে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন, কলাপাড়া থানা পুলিশ ও জেলা দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে পায়রা সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন রামনাবাদ নদীতে মাছ ধরা শেষে ছোট ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে তীরে ফিরছিল জেলে সুজন, তারেক, মাসুদ সহ অপর দুই জেলে। এসময় লালুয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সোর্স আলমগীর, এএসআই মামুন, কনেষ্টবল আ: সত্তার, সুমন ও রিয়াজ তাদের ট্রলার নিয়ে ধাওয়া করে। নৌ-পুলিশের ভয়ে জেলেদের ইঞ্জিন নৌকাটি চরবালিয়াতলি গ্রাম সংলগ্ন ঢোস এলাকার ছোট খালের তীরে ভিড়িয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে জেলেরা। কিন্তু এএসআই মামুনের নেতৃত্বে থাকা নৌ-পুলিশ টিমের সদস্যরা জেলে সুজন হাওলাদারকে ধরে ফেলে। এসময় লাঠির আঘাতে ঘটনাস্থলেই সুজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর দীর্ঘক্ষনেও জেলে সুজন’র জ্ঞান না ফেরায় তাকে চিকিৎসার জন্য কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। কলাপাড়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: সায়মা সুলতানা বলেন, সুজন নামের একজন জেলেকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে পুলিশের লাঠির আঘাতে জেলে সুজন’র মৃত্যুর বিষয়টি দ্রæত গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিচারের দাবীতে তারা অভিযুক্ত চার নৌ-পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক, কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী, ওসি (তদন্ত) আসাদুর রহমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম হুমায়ূন কবির, ইউপি সদস্য মহসীন এর সহায়তায় বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন। কলাপাড়া থানার ওসি মো: আসাদুর রহমান বলেন, ’চর বালিয়াতলি এলাকায় আছি, ভীষন ব্যস্ত রয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছি।’ এ বিষয়ে জানতে কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী’র ব্যবহৃত মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি। পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মো: শহিদুল্লাহ বলেন, ’ব্যস্ত আছি। বলার মত কিছু থাকলে পরে জানাবো।’ কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ’সুজন নামের এক জেলের মৃত্যুতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নৌ-পুলিশের ধাওয়া খেয়ে সুজনের মৃত্যু হয়েছে না লাঠির আঘাতে মৃত্যু হয়েছে, এটি তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অবরুদ্ধ চার পুলিশ সহ কথিত সোর্স আলমগীরকে ছয় ঘন্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।’ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত জেলের মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ পটুয়াখালী মর্গে প্রেরনের উদ্দোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশের কথিত সোর্স সহ চার পুলিশ সদস্যকে থানায় নিয়ে আসা হলেও আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের বিষয়টি পুলিশ স্পষ্ট করেনি।