অচিরেই আলোর মুখ দেখবে ডিএনডি মেগা প্রকল্প: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

কামরুন নাহার | ০১:৫৭, মার্চ ০৯ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরাবাসীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা দূর করতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাজধানীর হাতির ঝিলের আদলে শুরু হওয়া ডিএনডি মেঘা উন্নয়ন প্রকল্প অচিরেই আলোর মুখ দেখবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। গতকাল রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডির উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা জানান। জাহিদ ফারুক জানান, ইতিমধ্যেই খাল খনন ও পানি নিষ্কাশণ প্রকল্পের ৭০ ভাগ কাজই সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করতে আরও প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার প্রয়োজন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে যাচাই-বাছাই করে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প ব্যায় সংশোধন করে নতুন করে বরাদ্ধ চেয়ে সরকারের একনেক সভায় প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। তবে চলমান এই কাজ এতোদূর এগিয়ে গিয়ে মাঝপথে আটকে থাকবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এসময় উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, ডিএনডি উন্নয়নের প্রকল্প পরিচালক কর্ণেল মাসফিকুর রহমানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রতিমন্ত্রী এই প্রকল্পের আওতাধীন বিভিন্ন পয়েন্টে উন্নয়ন কাজের তদারকি করেন এবং সেনা কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক অবস্থায় ৫শ’ ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এর ব্যাপকতা বেশি হওয়ায় আরো প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে টাকার জন্য কাজ থেমে থাকবে না বলে আশ্বস্ত করে প্রতিমন্ত্রী এই প্রকল্পটি সফল বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয়দের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০ লক্ষ মানুষ র্দীঘদিনের জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে এবং ২০২১ সালের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার জানান, এই প্রকল্পের অভ্যন্তরে ৮২ কিলোমিটার বিদ্যুতের সংযোগ, তিতাসের ৭৭ কিলোমিটার গ্যাস সংযোগ, ৫৮ কিলোমিটার ওয়াসার পানির সংযোগ, ৬৬ কিলোমিটার রাস্তা, ব্রিজ কালভার্ট এবং স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরসহ ৬৬টি স্থাপনা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এগুলো দ্রুত স্থানান্তর করা প্রয়োজন এবং কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সাথে এই চ্যালেঞ্জ তারা মোকাবেলা করছেন। এজন্য স্থানীয় সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চান তিনি। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, এই প্রতবিন্ধকতাগুলো সমাধান করতে আমি সব রকম সহযোগিতা করব। যেখানে যা করা দরকার হাই করব। তিনি এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমার বিশ্বাস এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এটি রাজধানীর হাতিরঝিলের চেয়েও মনোরম সৌন্দর্যমন্ডিত একটি এলাকায় পরিণত হবে। গুলশান বনানীর চেয়েও আধুনিক শহরে পরিণত হবে আমাদের নারায়ণগঞ্জ। এতে করে এই জেলার মান মর্যাদা আরও সমৃদ্ধ হবে। এদিকে এই প্রকল্প কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে গত দু’বছর ধরেই সুফল পেতে শুরু করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এজন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি অভ্যন্তরের এলাকাগুলোতে প্রতি বর্ষা মৌসুম এলে পরবর্তী ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে তাকতো। গত পনের থেকে বিশ বছর মানুষ এই দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। তবে ডিএনডি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ২০১৭ সালের পর গত দুই বছর কোথাও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন স্থানে নতুন করে পানি নিষ্কাশন পাম্প বসানোর ফলে এই সুফল পেতে শুরু করেছেন মানুষ। ডিএনডি উন্নয়ন পকল্পের সূত্রে জানা গেছে, ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সময় বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর দুর্দশা দূর করতে ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৫শ’ ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই ডিএনডির উন্নয়ন প্রকল্পের এই কাজটি শুরু হয়। এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে সহযোগিতা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, তিতাস এবং ওয়াসা বিভাগসহ সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থা। তবে ২০১৯ সাল নাগাদ ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও বরাদ্ধের পুরো টাকাই খরচ হয়ে যায়। পুরো কাজ শেষ করতে এখনও আরও প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার প্রয়োজন। এতে করে বর্তমানে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩শ’ কোটি টাকায়।