বাউফলে ঢালাইয়ের পরেই ধ্বসে পড়ে লক্ষাধিক টাকার ঘাটলা

কামরুন নাহার | ১৮:৩৪, মার্চ ০৮ ২০২০ মিনিট

বাউফল প্রতিনিধি ॥ ঘাটলার পাশে আবার কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আরেকটি ঘাটলা। সেই ঘাটলার সিঁড়ি ঢালাই দেওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যে তা ধসে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)সামনের পুকুরের ঘাটলা নির্মাণে। গতকাল দুপুর একটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানদী ফাযিল মাদরাসা-সংলগ্ন পিছনে ও নাজিরপুর ইউপি পরিষদের সামনে একটি পুকুর। ওই পুকুরের উত্তর পাশে একটি ঘাটলা রয়েছে।সেই ঘাটলার পাশেই আরেকটি ঘাটলা নির্মিত হচ্ছে। কয়েকজন শ্রমিক নির্মাণাধীন ঘাটলার ধসে পড়া নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিচ্ছেন। শ্রমিকেরা জানান, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘাটলাটির সিঁড়ির ঢালাই দেওয়া হয়।বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঘাটলাটির সিড়ি ধ্বসে পড়ে। শ্রমিকেরা বলেন, কাজটি মাহমুদ হাসান রুবেল করাচ্ছেন। মাহমুদ হলেন উপজেলা যুবলীগ কর্মী ও উপজেলা ছাত্র লীগের একাংশের সাবেক সভাপতি।অপর এক প্রশ্নের জবাবে শ্রমিকেরা বলেন, ঢালাইয়ের সময় এলজিইডির কোনো প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় কয়েকজন বলেন, পুকুরটি গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সেচ দেওয়া হলেও কোনো প্রকার খনন করা হয়নি। আর সেচ দেওয়ার কারনে পশ্চিম পাশের পাড় কাম মাদরাসায় আসা-যাওয়ার সড়কটির অনেকাংশ পুকুরের মধ্যে ধ্বসে পড়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা আরও বলে, নতুন যে ঘাটলাটি নির্মাণ করা হচ্ছে তাঁর পাশেই আরেকটি ঘাটলা রয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ঘাটলাটি সরকারিভাবে এক লাখ টাকা ব্যয়ে ঘাটলাটি সংস্কার করা হয়। যা নির্মাণাধীন ঘাটলাটির চেয়ে ভালো। নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যক্তি বলে, যেভাবে ঘাটলাটি নির্মাণ করা হচ্ছে তা কোনো উপকারে আসবে না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বাউফল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে খাল ও পুকুর খনন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দরপত্রের মাধ্যমে বাউফল উপজেলায় পাঁচটি পুকুর খনন এবং প্রত্যেকটি পুকুরে একটি করে ঘাটলা নির্মাণের দায়িত্ব পান মা ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। এতে একটি পুকুর পুনঃখনন ও ঘাটলা নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। ওই পুকুর পাঁচটি হলো-নাজিরপুর ইউপির সামনে একটি, কনকদিয়া বাজার এলাকায় একটি, বাউফল ইউনিয়নের অলিপুরা মাদরাসার একটি ও গোসিংগা রশিদিয়া মাদরাসার একটি এবং বগা ইউনিয়নের সাবুপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি। মা ট্রেডার্সের কাজ তদারকের দায়িত্বে থাকা মাহমুদ হাসান বলেন, গত শুক্রবার বৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে সিঁড়ির নিচের মাটি সরে গেছে। তাই ঘাটলাটির সিঁড়ি ধসে পড়েছে। তবে ভালো নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। নির্মাণ কাজ তদারকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলে, ‘ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। ঢালাইয়ের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। অসুস্থতার কারনে বর্তমানে বরিশালে অবস্থান করছেন।’ তাহলে আপনার অনুপস্থিতে ঢালাই দেওয়া হল কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি এ বিষয়ে লেখালেখি না করার জন্য অনুরোধ করেন। উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান হোসেন বলে, ‘খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কার্যাদেশ অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্ন করতে হবে।’