সদর হাসপাতালে ঔষধ নষ্টের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শুভংকরের ফাঁকি!
কামরুন নাহার|২৩:০১, সেপ্টেম্বর ১৪ ২০২১ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতাল থেকে সরকারী ঔষধ নষ্ট (মেয়াদ উত্তীর্ন) হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। কোটি টাকার সরকারী ঔষধ কেন নষ্ট হলো তা তদন্ত না করে করা হয়েছে ষ্টোর ভেরিফিকেশন। তাই তদন্ত কমিটিও প্রতিবেদন দিয়েছে সেভাবেই। ঔষধ নষ্টের কারন না খুঁজে ষ্টোরে কি পরিমান ঔষধ মজুদ আছে, সেগুলোর মেয়াদ আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ঔষধ নষ্টের ঘটনায় কাউকে দোষী কিংবা দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পর্যন্ত আনা হয়নি। ঔষধ নষ্ট হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গত সোমবার জেলা সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে প্রতিবেদনে কি সুপারিশ করা হয়েছে বা কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করেন নি তিনি। তবে তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি যে সব বিষয়ে সুপারিশ করেছেন সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে। তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, তদন্তের নির্দেশনা ছিলো ষ্টোর ভেরিফিকেশন করা। সেটি করেছি এবং সে অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানিয়েছে তদন্ত করার নামে শুভংকরে ফাঁকি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় ক্ষেপন করে প্রতিবেদন দিয়েছে তা হাস্যকর ও দোষীদের আড়াল করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না। কোটি টাকার ঔষধ নষ্ট হয়েছে অথচ ঘটনা স্বাভাবিক বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এত বড় ঘটনায় নাকি কেউ দোষী নয়। কারো দায়িত্ব অবহেলা পায়নি তদন্ত কমিটি। এটা কিভাবে হতে পারে? এমন তদন্ত প্রতিবেদনের কোন গ্রহন যোগ্যতা নেই বলে মন্তব্য তাদের। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, হাসপাতালের ষ্টোরের অবস্থা সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছিলো। শুধু সেটিই করেছি। স্বাভাবিক কারনেই ঔষধ নষ্টের পিছনের কারনগুলো খুজতে যাইনি। আর সেটা সম্ভবও নয়। কারন সকলেই একই হাসপাতালের স্টাফ। তিনি বলেন, ষ্টোর সংশ্লিষ্টদের দাবী করোনা সংক্রমন চলার কারনে দীর্ঘ ২ বছর ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম ছিলো। যে কারনে রোগীদের সরবারহ করতে না পারায় ঔষধগুলো নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এটা যৌক্তিক কারন হতে পারে না। কারন কোন ঔষধের মেয়াদ শেষ হবার ৬ মাস আগে কর্তৃপক্ষকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেটিও জানানো হয়নি। এটা গাফলতির মধ্যে পড়ে। এছাড়া করোনা সংক্রম চললেও হাসপাতালের সব বিভাগের কার্যক্রম স্বাভাবিক ভাবেই চলেছে। শুধুমাত্র আগষ্টের এক মাস হাসপাতালে করোনা রোগী ব্যতিত অন্য সকল চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। কিন্তু ঔষধ নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে তার অনেক আগে। এই দায় ভার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতরা কোন ভাবেই এড়াতে পারে না। এমন তদন্ত হলে দোষীরা এসব অনিয়ম দূর্নীতি করতে আরো উৎসাহিত হবে। প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুন হাসপাতালের তত্বাবধায়ক এর কক্ষের পিছনে বস্তা ভর্তি ঔষধের সন্ধান পায় গনমাধ্যম কর্মীরা। পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসে বস্তাগুলো থেকে কোটি টাকা মূল্যের সরকারী ঔষধ জব্দ করে। যা ছিলো সবই মেয়াদ উত্তীর্ন। পরে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন।