বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশীট

কামরুন নাহার | ১৮:২৪, মার্চ ০৮ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জাল কাগজপত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে চোরাই গাড়ি রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার এজাহারনামীয় আসামী বরিশাল বিআরটিএ এর সাবেক মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট জমা দিয়েছে দুদক। একই সাথে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় মামলার অপর আসামী পল্লী চিকিৎসক রুপ কুমার বিশ্বাসকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক চার্জশীট জমা দেন। অভিযুক্ত আইয়ুব আনসারী বরিশাল নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া সাধুর বটতলা এলাকার মৃত আতাহার আলী হাওলাদরের ছেলে। আনসারী বর্তমানে ঢাকা বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে সহকারী পরিচালকের (ইঞ্জিঃ) অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। এছাড়া রুপ কুমার বিশ্বাস ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপার কাশিনাথপুর শহীদ নগরের মৃত গিরীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে। রুপ কুমার বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদার দর্শনা পুরাতন বাজার এলাকায় বসবাস করেন। সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ মাদারীপুর জেলার মশিউর রহমান ঠাকুরের ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৩৫০ গাড়িটি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানা এলাকা থেকে চুরি/ ছিনতাই হয়। এঘটনায় একই দিন গাড়ির চালক শাহজাদা শিকদার শিবালয় থানায় সাধারন ডায়েরী করেন। ডায়েরী নং-৯৩০। পরবর্তীতে গাড়ির মালিক মশিউর রহমান ঠাকুর জানতে পারেন একই চেসিস নম্বরে ১টি মাইক্রোবাস বরিশাল বিআরটিএ অফিসের মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রেশন বরিশাল ছ-১১-০০৩৯ নম্বর ব্যবহার করে রাস্তায় চলাচল করছে। এঘটনায় মশিউর রহমান ঠাকুর বিষয়টি বরিশাল ও ঢাকা বিআরটিএ অফিসকে অবগত করেন। এতে বরিশাল বিআরটিএ অফিস কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেন। ফলে মশিউর রহমান ঠাকুর বরিশাল বিআরটিএ অফিসে গাড়িটি ফেরত পেতে আবেদন করেন অফিস কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাইবাছাই করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে প্রেরণ করেন। কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে কোন মিল না থাকায় তা বরিশাল বিআরটিএ অফিসকে অবগত করেন। এর আগে রুপ কুমার বিশ্বাস নামের ওই ব্যক্তি বরিশাল নগরীর নতুন বাজার এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে ওই চোরাই মাইক্রোবাসটির মালিক হিসাবে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বিআরটিএ অফিসে আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর সহকারী পরিচালক তার অধীনস্ত মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে কাগজপত্র যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলেন। কিন্তু আইয়ুব আনসারী নিজ স্বাক্ষরে গ্রাহক রুপ কুমার বিশ্বাসের দাখিলকৃত কাগজপত্র সঠিক ও ত্র“টিমুক্ত উল্লেখ করে সনদ প্রদান করেন। তার সুপারিশের ভিত্তিতে তৎকালিন সহকারী পরিচালক নূরুজ্জামান চোরাই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রদান করেন। এঘটনায় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় বরিশাল বিআরটিএ এর তৎকালিন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এমডি শাহ আলম রেজিস্ট্রেশন গ্রহণকারী রুপ কুমার বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে একই ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল কোতোয়ালি মডেল থানায় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারী ও রুপ কুমার বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। দায়ের করা মামলার ৩য় তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক মামলার নথী, ঘটনাস্থল, জব্দ করা আলামত এবং বরিশাল অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে জানতে পারেন, রুপ কুমার বিশ্বাস একজন সামান্য পল্লী চিকিৎসক। তার গাড়ি কেনার মতো কোন আর্থিক সচ্ছলতা নেই। মূলত জাল জালিয়াতির মাধ্যমে গাড়ি চোর/ছিনতাইকারীদের সাথে পরস্পর যোগসাজসে অবৈধ লাভবান হতে অসম্পূর্ণ কাগজপত্রের মাধ্যমে নিরাপরাধ রুপ কুমার বিশ্বাসের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে ইতিপূর্বে ঢাকা বিআরটিএ থেকে চোরাই গাড়িটির ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৩১৫০ নম্বরে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। পরর্বতীতে ২য় বার একই নাম ও বরিশাল নতুন বাজারের ঠিকানা ব্যবহার করে বরিশাল বিআরটিএ থেকে বরিশাল ছ-১১-০০৩৯ নম্বরে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা বিআরটিএ এর নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্রের সাথে গ্রাহকের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র না নিয়ে ভূয়া ও জাল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও গাড়ি চোর/ছিনতাইকারীদের সাথে যোগসাজসে অবৈধ লাভবান হতে ও মূল অপরাধীকে আড়াল করার অপরাধে তৎকালিন মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট জমা দেন। একই সাথে তিনি অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় রুপ কুমার বিশ্বাসকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেন।