হাসপাতালে আগুন লাগার গুজব ছড়িয়ে মোবাইল চুরি!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আগুন লাগার গুজব ছড়িয়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি চুরি সংগঠিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে এ গুজব ছড়ানোর সূত্রপাত ঘটে।
আর পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।হাসপাতালের স্টাফ আবুল কালাম বলেন, হঠাৎ করেই হাসপাতালের মূল ভবনের দোতলার পূর্ব পাশে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিছু লোক আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় দোতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত পূর্বপাশের বিভিন্ন ওয়ার্ডে থাকা রোগী ও স্বজনরা তাড়াহুড়ো করে নিচে নামতে থাকেন।
তিনি বলেন, যারা নিচে নামছিলো তারা কেউই আগুন লাগার দৃশ্য দেখেননি এমনকি কোথায় লেগেছে তাও বলতে পারছে না। পরে হাসপাতালের স্টাফরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন দোতলার শিশু ওয়ার্ডে কিছু লোক আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করলে রোগীসহ সবাই দৌড়ে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে হাসপাতাল ভবনের বাইরে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে জড়ো হয়।
তার ধারণা সংগবদ্ধ চোরচক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে, বড় ধরনের চুরি সংগঠিত করার লক্ষ্যে।
শিশু ওয়ার্ডের স্টাফ জব্বার বলেন, তাদের ওয়ার্ডে কোন আগুন লাগার ঘটনাই ঘটেনি। ঘটনার সময় একজন অধ্যাপকসহ চিকিৎসকরা ওয়ার্ডেই ছিলেন। দুই জন লোক আকস্মিক আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করলে সবাই ওয়ার্ডের ভেতর থেকে বাইরে দৌড়ে চলে যান। আর এ সময়ের মধ্যেই ওয়ার্ডের ভেতর থেকে দুটি মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়।
হাসিনা নামে অপর একজন বলেন, ঘটনার আগে এক শিশু রোগীর স্বজন মোবাইলে চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। সকেটে চার্জার প্রবেশ করাতে গিয়ে স্পার্ক করে, তবে কোন আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি, ওই সময় নারী একটু ভয় পেয়ে আঁতকে উঠলে পাশে থাকা লোকজন আগুন লাগার গুজব ছড়িয়ে দেয়।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম ও আনসার সদস্যরা বলেন, আগুন লাগার কথা শুনে কেউ আর তা যাচাই করেননি, রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌড়ে হাসপাতাল ভবনের বাইরে চলে আসেন। হাসপাতালের স্টাফরা তাদের বারণ করলেও তারা শোনেননি। পরে অনেক বুঝিয়ে আগুন যে লাগেনি তার নিশ্চয়তা দিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের স্ব স্ব ওয়ার্ডে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে মোবাইল চুরির মৌখিক খবর আসতে শুরু করে।
তবে মোবাইল বা টাকা পয়সা চুরি যাওয়ার ঘটনায় এখনো কেউ হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে লিখিত জানায়নি বলে জানিয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, ঘটনাটি এক ধরনের প্রতারণামূলক। আগুন লাগার গুজব ছড়িয়ে রোগীদের মালামাল চুরির চেষ্টা চালানো হয়েছে। মৌখিকভাবে কিছু মোবাইল খোয়া যাওয়ার কথা শুনছি, তবে কেউ লিখিত দেয়নি।
তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার ফুটেজও পর্যালোচনা করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর কেউ ঘটাতে না পারে। সেইসঙ্গে আজকের ঘটনা পরিকল্পিত হয়ে থাকলে, আর তা তদন্তে বেরিয়ে এলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল সদর স্টেশনের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আব্বাস উদ্দিন বলেন, ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমাদের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে রোগীসহ সাধারণ মানুষকে হাসপাতাল ভবনের নিচে জড়ো অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তবে কেউই কোথায় আগুন লেগেছে তা বলতে পারেনি। তারপর হাসপাতাল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে খোঁজ চালিয়েও আগুনের সূত্রপাত পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিকভাবে ধারণা একটি চক্র মোবাইল ফোন চুরির লক্ষ্যে কৌশলে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। বিষয়টি আমরা আমাদের কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
অপরদিকে গুজবে রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল ভবনের বাইরে গিয়েও বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা।
আব্দুল নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, পা ভাঙ্গা স্ত্রীকে নিয়ে হুড়োহুড়ি করে নিচে নেমেছি, তার থেকে বেশি কষ্ট হয়েছে ওপরে উঠতে। ট্রলির সংকটের কারণে হাসপাতালের সড়কের ওপর ঘণ্টাখানিক বসে থাকতে হয়েছে আমাদের।