পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারককে বদলি- আইনমন্ত্রী

কামরুন নাহার | ০০:২১, মার্চ ০৫ ২০২০ মিনিট

পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥ পিরোজপুরের সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রীর জামিন খারিজের পর জেলা ও দায়রা জজকে তাৎক্ষণিক বদলির ঘটনায় দিনভর সুপ্রিম কোর্টসহ অন্যান্য আদালত অঙ্গণে বিচারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাৎক্ষণিকভাবে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বেশ কয়েকজন আইনজীবী। এ ঘটনার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অন্যরা। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার বিকালে সচিবালয়ে নিজ দফতরে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়ালের জামিনের সময় জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নান অত্যন্ত অশালীন ও রূঢ় ব্যবহার করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই বিচারককে স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক বদলি) এবং পরে আউয়ালকে স্ত্রীসহ জামিন দেয়া হয়েছে। আনিসুল হক বলেন, পিরোজপুর জেলা জজের কাছে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার স্ত্রী দুর্নীতির মামলার জন্য জামিন চাইতে গিয়েছিলেন। জামিন চাওয়ার সময় তার আইনজীবী এমনকি অন্য সব আইনজীবীর সঙ্গে অত্যন্ত অশালীন এবং রূঢ় ব্যবহার করেন জেলা ও দায়রা জজ। আমরা গত মঙ্গলবার থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছি। আইনমন্ত্রী বলেন, সেই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে এমন একটা অবস্থা দাঁড়ায়, যেখানে বারের সবাই আদালত বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি রাস্তায় গণ্ডগোল চলছিল। রাস্তায় লোকজন বেরিয়ে গিয়েছিল। সেটাকে কন্ট্রোল করার জন্য তাকে (বিচারক) সেখান থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে আদেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল তিনটি মামলায় এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীন একটি মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবী আদালতে তাদের অসুস্থতার চিকিৎসা প্রতিবেদনসহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ও ডিভিশন দেয়ার আবেদন করেন। বিকাল পৌনে ৩টার দিকে বিচারক ডিভিশনসহ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলির চিঠি পাঠানো হয়। এরপর তিনি যুগ্ম ও জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে পুনরায় জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকাল ৪টার দিকে বিচারক তাদের দুই মাসের জামিন দেন। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে আউয়ালের বিরুদ্ধে খাসজমিতে ভবন নির্মাণ, অর্পিত সম্পত্তি ও পুকুর দখলের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন। একটি মামলায় আউয়ালের সঙ্গে তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি আউয়াল ও লায়লা পারভীন হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন নেন। গত মঙ্গলবার ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তারা পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।