নগরীতে অনিরাপদভাবে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার

কামরুন নাহার | ০০:১১, মার্চ ০৫ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিস্ফোরক আইনকে তোয়াক্কা না করে বরিশাল নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রান্নার সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি ও মজুদ চলছে হরদম। আর এতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। ফায়ার সার্ভিস দপ্তর বলছে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা লেগেই থাকবে। এতে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ের ক্ষয়ক্ষতিও থামানো যাবেনা। এনিয়ে বরিশাল জেলা ফায়ার সার্ভিস দপ্তরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার সাইফুজ্জামান বলেন, সচেতনতামুলক আমাদের প্রোগ্রাম ও মহড়া হয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিশেষ করে পলাশপুর, কেডিসি, টিএন্ডটি কলোনি, ভাটার খাল, মহসিন মার্কেট, চকবাজারসহ এলাকাগুলোর বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করা হয়। আর গ্যাস সিলিন্ডার মজুদের জন্য যে গোডাউন তৈরীর নির্দেশনা রয়েছে তারমধ্যে বিষ্ফোরক পরিদপ্তরও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। আমরা অগ্নি নির্বাপনের প্রস্তুতি দেখভাল করি। আর দোকানগুলোতে যাতে ফায়ার স্টিংগুয়েশার রাখা হয় তাও নিশ্চিত করি। সুত্রে জানা গেছে, গত বছর নগরী ও উপকন্ঠে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে খাবার হোটেল, মুদি দোকান, বাসা-বাড়িসহ কমপক্ষে অর্ধশত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে চলতি বছরেও ৩টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বটতলা পুলিশ ফাড়ির বিপরীতে অত্যন্ত ২০টি ঘর ভস্মিভূত হয়ে গেছে। শুধু তাই গত বছর কলেজ এভেনিউ পশ্চিম মাথায় পুকুর পারে খাবার হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে ৬টি দোকানঘর পুরে গেছে। সরেজমিন সুত্রে, সিএন্ডবি রোড টিটিসি সংলগ্ন ও কলেজএভিনিউ গলির পাশ্ববর্তী গলি, কুদঘাটা, বটতলা মসজিদ সংলগ্ন স্টলের বিপরীতে ফলের দোকানের পার্শ্বে, চৌমাথা ব্রিজ সংলগ্ন, রুপাতলী, দপদপিয়া ব্রিজ সংলগ্ন, কাশিপুর বাজার, বিসিকসহ নগরীর নানাবিধ স্থানে গড়ে উঠেছে গ্যাস সিলিন্ডারের ঝুঁকিপুর্ণ মজুদ। এছাড়া মুদি দোকান, ফার্মেসী, চায়ের দোকান, হার্ডওয়ারের দোকান, চাউলের দোকানসহ ছোট-খাটো এব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হরহামেশাই অনিরাপদভাবে বিক্রি হচ্ছে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার। ১০টি সিলিন্ডার পর্যন্ত দোকানে মজুদ রাখতে ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়না আর আইনের এসুবিধাটির অপব্যবহার করে দোকানিরা বিভিন্ন স্টলে আড়ালে ২০/১শ টি পর্যন্ত সিলিন্ডার মজুদ করে। এহেন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত বছর বটতলা মসজিদের বিপরীতে শরীফ এন্টারপ্রাইজের দোকানে অভিযান করে বরিশাল জেলা প্রশাসন। কিন্তু বটতলা কাঁচাবাজারের বিপরীতে আলম স্টোরের গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করে রাখে জেলা পরিষদ মার্কেটের ফলের দোকানের পার্শ্বের স্টলে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ একটি স্টলে প্রায় দেড় শতাধিক সিলিন্ডার মজুদ করে রাখে। অথচ বিষ্ফোরক পরিদপ্তরের কোন প্রকার নিয়ম মানা হয়নি। এনিয়ে বরিশাল জেলা বিষ্ফোরক পরিদপ্তরের সহকারি পরিদর্শক মো: মোজাহিদুল ইসলাম বলে, আমরা প্রতিদিনই তালিকা তৈরী করছি এবং জনবল সংকটের কারনে অভিযান পরিচালিত হতে সময় লাগছে। তবে শীঘ্রই অভিযান পরিচালিত হবে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ ও বিক্রি করছেন। এছাড়া আমার ০১৭১০৩৬০০৩০ এই নাম্বারে ফোন করে তথ্য দিলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে ১৮৮৪ এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে লাইসেন্স ব্যতীত কোন ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাবে, তা উল্লেখ আছে। বিধি অনুযায়ী আটটি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১নং ধারায় বলা আছে, আগুন নেভানোর জন্য স্থাপনা বা মজুদাগারে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। এ আইন অমান্য করলে যে কোনো ব্যবসায়ী অনুন্য দুই বছর ও অনধিক পাঁচ বছরের জেলসহ অনধিক ৫০ হাজার টাকায় দন্ডিত হবেন এবং অর্থ অনাদায়ী থাকলে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস পর্যন্ত কারাবাসের বিধান রয়েছে। সুত্রে আরো জানা গেছে, বরিশাল সদর থেকে ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, নলছিটি, ভোলা, কলাপাড়া, পিরোজপুর সহ দক্ষিনাঞ্চলের পাইকারি ও খুরচা গ্যাস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খালি গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করে নিয়ে আসে।