দুই খুনিকে ধরতে তিন তদন্ত কর্মকর্তা

কামরুন নাহার | ২৩:৫৮, মার্চ ০৪ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রিয়াজ হত্যার ঘটনায় ১০ মাসেও অপর দুই আসামীকে তিন তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেফতার করতে না পারায় ন্যায় বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে নিহতের পরিবার। পাশাপাশি নিহতের স্ত্রী খুনী লিজা আক্তার জামিনে মুক্ত হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছে নিহতের পরিবার। বিচার ও আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নিহতর পরিবার একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনও করেছে। মামলার বাদী নিহত রিয়াজ’র বড় ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন জানায়, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে আমার ছোট ভাই রিয়াজকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার নিজ ঘরে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরের দিন তিনি (রিপন) নিজে বাদি হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রিয়াজের স্ত্রী লিজাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে লিজা স্বামীকে হত্যায় জড়িত থাকাসহ মুল রহস্য স্বীকার করে। পরে স্ত্রী আমেনা আক্তার লিজা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে লিজা স্বীকার করে জানায়, তার স্বামীর অফিস সহকারী হাবিব এবং তার পরকীয়া প্রেমিক মো. মাসুম হোসেন দা দিয়ে কুপিয়ে ঘুমন্ত রেজাউলকে গলা কটে হত্যা করে। সহকারী হাবিব বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে এবং মাসুম দা ও খুড় দিয়ে দলিল লেখক রিয়াজের গলা কেটে হত্যা করে। এর আগে স্ত্রী আমেনা আক্তার লিজা স্বামী রিয়াজকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৬ টি ঘুমের ওষুধ কৌশলে খাবারের সাথে মিশিয়ে খাইয়েছে। এভাবেই দুই জনের সহযোগিতায় স্বামীকে হত্যা করেছে ঘাতক স্ত্রী আমেনা আক্তার লিজা। আদালতে এই জবানবন্দি দেয়ার পর আমেনা আক্তার লিজাকে কারাগারে প্রেরন করা হয়। আর ঘটনার পর থেকেই ঘাতক পরকীয়া প্রেমিক মাসুম ও তার সহযোগি হাবিব পলাতক রয়েছে। ওই সময় এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা করা হয় কোতয়ালী মডেল থানার এসআই বশির আহম্মেদকে। প্রায় চার মাস তদন্ত করেও মুল আসামী মো. মাসুম হোসেন ও তার সহযোগী হাবিবকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়। শুধু তাই নয়, সখ্যতা গড়ে উঠে আসামী পক্ষের লোকজনের সাথে। বিষয়টি নিহতের বড় ভাই বাদী মনিরুল ইসলাম পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বশির আহম্মেদকে মামলার তদন্ত থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর মামলাটির দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই ফিরোজ আল মামুনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিও একইভাবে হাটতে থাকে প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বশির আহম্মেদের দেখানো পথে। দীর্ঘ ছয় মাস তদন্ত করেও হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান দুই আসামীর কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে মামলার বাদী অভিযোগ করে বলেন, পরপর দুইজন তদন্তকারী কর্মকর্তা মিলেও আমার ভাইয়ের খুনিদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়। সত্যি ব্যাপারটি হতাশাজনক। যেখানে এরচেয়ে বড় বড় ক্লুলেস মামলার আসামিদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। জানিনা, পুলিশ কবে আসামীদের গ্রেফতারে সক্ষম হবে। এখন নতুন আরেকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বর্তমানে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এস.আই মো. ছগিরকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদিকে কারাগারে বসে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় গত ২০ জানুয়ারি আদালত লিজাকে মানবিক বিবেচনায় জামিন দেয়। কিন্তু লিজা জামিনে মুক্ত হয়েই তার নিহত স্বামী মো. রেজাউল করিম রিয়াজ এর পলাশপুরের বাড়িসহ সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দখলের পায়তারা শুরু করেছে। রিয়াজের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন জানায়, গত ২০ জানুয়ারি লিজা জামিনে মুক্ত হয়েই সম্পত্তির লোভে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। পরকীয়া প্রেমিক খুনী মাসুম ও তার অবৈধ সম্পর্কের ফলে জন্ম নেয়া শিশু কন্যাকে রিয়াজ এর সন্তান বলে প্রচার করে রিয়াজের সম্পত্তি দখল করার পায়তারা করছে লিজা। পলাশপুর এলাকায় রিয়াজ এর ১৬ শতাংশ জমির উপরের বাড়ি দখলের জন্য নানা অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সাহায্যে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। তিনি আরো বলেন, এই সম্পত্তি নিজের নামে নেয়ার জন্যই লিজা আমার ভাইকে খুন করে। এখন বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং বলে এই সম্পত্তি সে দখল করে নিবেই, প্রয়োজনে আমাকেও খুন করবে। এখন আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছি। এদিকে একাধিক বিয়েসহ নানা অপকর্মে জড়িত আমেনা আক্তার লিজা সম্পর্কে তদন্তকালে জানা যায়, বরিশাল নগরীর পলাশপুরের বৌ বাজার এলাকার লিজার সাথে ৪ বছর আগে রিয়াজের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্যে কোনো সন্তানাদি নেই। লিজার পিতা বরিশাল নদী বন্দরের ঢাকাগামী এ্যাডভ্যেঞ্চার লঞ্চের কলম্যান দেলোয়ার হোসেন। রিয়াজের সাথে বিয়ের পূর্বে লিজার আরও দুটি বিয়ে হয়। একটি বাবুগঞ্জে এবং অপরটি চট্টগ্রামের বাসিন্দা মজিবরের (সিমেন্ট ও বালু ব্যবসায়ী) সাথে। লিজা আগের দুই স্বামীর জমিজমা ও টাকা হাতিয়ে তাদের পরিত্যাগ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। লিজার চট্টগ্রামের প্রক্তন স্বামী আব্দুল ওহাবের বাড়ি দখলের চেষ্টাও করেছিলো লিজা। চট্টগ্রাম আদালতে আমেনা আক্তার লিজার বিরুদ্ধে আব্দুল ওহাব এর দায়ের করা মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর তাকে ছেড়ে ৪/৫ বছর আগে রিয়াজকে বিয়ে করে কৌশলে তার সম্পত্তি দখলের জন্য। বছর দুয়েক আগে স্ত্রী লিজাকে নিয়ে নিজ গ্রামের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সম্প্রতি লিজা ওই বাড়ি তার নামে লিখে দেয়ার জন্য রিয়াজের ওপর চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু রিয়াজ তাতে রাজি না হওয়ায় দুজনের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। ধারণা করা হচ্ছে, এ ঘটনার জেরেই গভীর রাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিয়াজকে খুন করে লিজা। বর্তমানে লিজা নিহত রিয়াজ এর পরিবারের জন্য এক আতংকের নাম হয়ে দাড়িয়েছে। পাশাপাশি পলাতক আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় এই আতংক আরো বেড়ে গেছে বলে জানায় নিহতের পরিবার।