সংকট ঠেকাতে যেকোন সময়ে বরিশালের বিএনপির কমিটি ঘোষনা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:৩৪, সেপ্টেম্বর ০৫ ২০২১ মিনিট

এইচ এম সোহেল ॥ তিন ভাগে বিভিক্ত হয়ে গেছে বরিশালের বিএনপি। এ সংকট ঠেকাতে পুরাতন কমিটি ভেঙ্গে যে কোন সময়ে নতুন কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে, এমটা জানিয়েছেন একধিক নেতাকর্মীরা। অপরদিকে বিএনটি ক্ষমতায় থাকাকালীন সমেয় বরিশালের মোট জনগনের ৮০সতাংশ যেখানে বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিল আজ তারা কোথায়, এমন অভিযোগও অনেক নেতা কর্মীর। জানাযায়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর গঠন করা হয় ১৭১ সদস্যের বরিশাল মহানগর কমিটি। এ কমিটির বছর যেতে না যেতেই ২০১৪সালে মৃত্যু হয় সাধারণ সম্পাদকের। মৃত্যুর পরে পদটি শূন্য হলে ঐ পদের দায়িত্ব পান ১নং যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউদ্দীন সিকদার। এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘ সাত বছর। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অনেক নেতা দীর্ঘদিন থেকে নিস্ক্রিয়, কেউ মারা গেছেন। অনেকে নুয়ে পড়েছেন বয়সের ভারে। তার ওপরে আবার সংগঠনে তৈরি হয়েছে একাধিক উপদল। ইতোমধ্যে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে মহানগর বিএনপি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, এই মুহূর্তে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন ছাড়া উপায় নেই। আর নেতারা বলছেন অপেক্ষার পালা শেষ, যে কোন সময় ঘোষণা হবে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। জানা গেছে, নতুন কমিটি গঠনের খবরে মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে শুরু হয়েছে জোর লবিং। কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এখন মহানগর বিএনপি সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, সাবেক মেয়র ও সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামাল এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন এই তিন শিবিরে বিভক্ত হয়েছে। একটি অংশের নেতারা মনে করেন, বরিশাল বিএনপিতে মজিবর রহমান সরোয়ারের বিকল্প কোন নেতা এখনও তৈরি হয়নি। আর অপর দুই অংশের নেতারা নেমেছেন একক নেতৃত্ব হটিয়ে নতুন নেতৃত্বের সন্ধানে। বর্তমান মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আকতার হোসেন মেবুলের নেতৃতে সম্প্রতি সাবেক ছাত্রনেতাদের ব্যানারে আলাদা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছিল। ওই প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমানে ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, সাইফুল আহসান আজিম, প্রয়াত পারভেজ আকন বিপ্লব, জিএম আতায়ে রাব্বি, খন্দকার আবুল হাসান লিমন, মাহমুদ বিল্লাহ। যদিও শুরু থেকে তারা দাবি করছিলেন, প্লাটফর্ম নয়, চায়ের আড্ডার একটা ক্ষেত্র তৈরি করতেই তারা এক জায়গায় বসতেন। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও দীর্ঘদিন থেকে নিস্ক্রিয় মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ মাহমুদ সিকদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আহসান আজিমসহ আরও অনেকে। জাহিদসহ অন্য নেতাদের দাবি, সংগঠনে তারা সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। মান-সম্মান নিয়ে বাঁচার তাগিদে দলীয় কর্মকাণ্ডে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। মীর জাহিদ জানান, দলে কিছু টিপসই মার্কা নেতাদের দৌরাত্ম্যে তারা কোণঠাসা। এ কারণে দলীয় কর্মকাণ্ডে যাওয়ার মতো রুচি এবং আগ্রহ কোনোটাই নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রনেতারা মিলে বরিশাল মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আহসান হাবীব কামালকে আনার চেষ্টা করছিলেন। আর এ জন্য কামালকে আহ্বায়ক করে প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে জমাও দেওয়া হয়। কিন্তু এর কিছুদিন পরে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে। সাবেক ছাত্রনেতাদের ব্যানার থেকে সরে এসে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএম আতায়ে রাব্বি যোগ দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন শিবিরে। বিলকিস জাহান শিরিন এবং জিএম আতায়ে রাব্বি একসময় কামাল ঘরোনার থাকলেও ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনের পর দূরে সরে আসেন তারা। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আহসান হাবীব কামাল অনেককেই যথাযথ মূল্যায়ন করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে কামাল শিবির থেকে বিদায় নেন বিলকিস জাহান শিরিনসহ আরও অনেক ত্যাগী এবং বঞ্চিত নেতারা। সাবেক ছাত্রনেতা জিএম আতায়ে রাব্বি বলেন, ‘রাজনীতিতে একটা স্পেস দরকার। যখন ত্যাগী নেতারা রাজনীতিতে স্পেস না পায় তখন বিভিন্ন গোত্রে পরিণত হয়, পছন্দের নেতার কাছে চলে যায়।’ তিনি মনে করেন, বিএনপিতে আসলে উপদল নেই। মূলত নেতৃত্বের কোন্দল, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণেই আজকের এই পরিস্থিতি। রাব্বির দাবি, ২০০২ সালের পর থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের কোনও কমিটি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে হয়নি। সরোয়ার ঘরোনার নেতারা বলছেন, মজিবর রহমান সরোয়ারের বিকল্প এখনও তৈরি হয়নি। যারা ঘরে বসে সরোয়ার-বিরোধী মিশনে নেমেছেন তাদের অনেকে আবার আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। আন্দোলন থেকে দূরে থাকার কৌশল হিসেবেই সাবেক ছাত্রনেতাদের ব্যানারে কয়েকজন চায়ের আড্ডা আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক রাজনীতি করছেন। যারা সরোয়ারের নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে আছেন তাদের কারও কারও নামে অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক মামলা আছে, রয়েছে কারাবরণের রেকর্ড। মজিবর রহমান সরোয়ারকে বাদ দিয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির কথা চিন্তা করা যায় না বলে মনে করেন বর্তমান মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আকবর। তিনি বলেন, ‘যারা সরোয়ারের বিপক্ষে গিয়ে কথা বলেন তারা হামলা-মামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে এ ধরনের কৌশল নিয়েছেন। তারা চলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলেন। দলের মধ্যে বিভাজন এবং দলকে দুর্বল করার পথ অবলম্বনকারীদের ঘরে বসে না থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দীন সিকদার জিয়া। তিনি বলেন, ‘যারা কর্মসূচিতে আসেন না কিন্তু চায়ের আড্ডায় বসে বিরোধিতা করেন তাদের অনেকের নামে একটি রাজনৈতিক মামলাও নেই। তারাও সভাপতি, সম্পাদকসহ বড় বড় পদে আসতে চান। তাদের আমরা আহ্বান জানাই, আপনারা মাঠে আসুন সরকার-বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিন। পদ আপনাকে খুঁজতে হবে না, পদই আপনাকে খুঁজে নেবে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘দল থেকে যে পদ দেওয়া হবে সেখানেই তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। আহসান হাবিব কামাল প্রসঙ্গে বলেন, ‘কামাল দলের কে। তার কোথাও কোনও পদ নেই। যারা দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকে না তাদের কোথাও জায়গা হওয়া উচিত নয়। দলের স্বার্থে কাজ করবেন, দলের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থাকবেন এমন নেতাদের নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘কমিটি হওয়ার কথা কাউন্সিল করে। কিন্তু দেশের পরিস্থিতির কারণে কাউন্সিল করে কমিটি গঠন সম্ভব নয়। আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি মনে করি, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে সবার সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবে।