নির্যাতনের শেষ কোথায়?

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০১:৪৩, আগস্ট ৩১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ একের পর এক বির্তকে জড়াচ্ছেন বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় সদস্য। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের। বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এমনই এক বিতর্কিত টিমের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, মহিলাসহ নিরপরাধ মানুষকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি। এছাড়াও উদ্ধারকৃত সব মাদক মামলায় না দেখিয়ে অল্প পরিমাণ মাদক দিয়ে আসামীকে চালান দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর রসূলপুর কলোনিতে। এ ব্যাপারে মাদক ব্যবসায়ী হাফিজুল শেখ এর স্ত্রী রোজিনা বেগম (৩০) বলেন, ২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বে এএসআই ফারুক ও আজিজসহ তাদের টিমের সদস্যরা ভোর ৪টায় আমার ভাড়াটিয়া বাসায় অভিযান চালায়। তখন আমার স্বামীর কাছ থেকে দেড় কেজি গাঁজা উদ্ধার করে ওই টিম। গাঁজা রাখার অপরাধে স্বামী অপরাধী হলেও আমি তো তার কুকর্মের সহযোগী বা অপরাধী নই। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এএসআই ফারুক ও সদস্য আজিজ আমার চুলের মুঠি ধরে বেধড়ক মারধর করে। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া করে এএসআই ফারুক ও সঙ্গীয় লোকজন। পার্শ্ববর্তী ঘরের ভাড়াটিয়াসহ উপস্থিত লোকজন এই দৃশ্য দেখে আমাকে ছেড়ে দেয়ার দাবী জানায়। এলাকাবাসীর দাবীর মুখে তখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টিমের দুই সদস্য ফারুক ও আজিজ আমাদের ছেড়ে দেবার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। এ নিয়ে অনেক দেন দরবারের পর নিজেকে বাঁচানোর স্বার্থে দাবীকৃত টাকা আমার প্রতিবেশী লোকজনের কাছ থেকে ধার এনে টিমের সদস্যদের দেই। যা প্রতিবেশী অনেকেই দেখেছে। টাকা পেয়ে পুলিশ সদস্যরা আমাকে ওই সময় ছেড়ে দিলেও আমার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যায়। তাকে পরের দিনই ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই টিম। টিমের এক সদস্য আমাকে বলেন, তোমার স্বামীকে দেড় কেজি গাঁজা সহ আটক না দেখিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে চালান দিয়ে দিব। কিন্তু পরবর্তীতে আমার স্বামীকে ১০০ গ্রাম গাঁজাসহ কোর্টে চালান দেয়া হয়। দেড় কেজি গাঁজার বাকী প্রায় সবটুকুই বাইরে নিজেদের লোক দিয়ে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এএসআই ফারুকের নিকট ঐ অভিযান ও অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি “ব্যস্ত” বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডু’র মোবাইল নং ০১৪০৪-০৭২৬০০ নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার কোন মন্তব্য জানা যায়নি। এর পূর্বেও বরিশাল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের একাধিক বিষয়ে তাকে ফোন করলেও তিনি কখনোই ফোন রিসিভ করেননি। তবে কেন, কি কারণে তিনি গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেন তাও জানা যায়নি। উল্লেখ্য, ওই দিনের ঘটনা বর্ণনায় ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ আরো জানান, আমার স্বামী অপরাধী তা আমি স্বীকার করি। কিন্তু তারাও তো অপরাধী (সমস্ত কথার ভিডিও রেকর্ড রয়েছে)। এদিকে একই এলাকার বাসিন্দা পেয়ারা ব্যবসায়ী জসিমের স্ত্রী মুক্তা বেগম জানান, দীর্ঘদিন যাবত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই দুই সদস্যসহ টিমের একাধিক সদস্য সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে আসছে। যারা মাদক ব্যবসা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হোক, তা আমরাও চাই। এ সময় তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন ভোর রাতে অহেতুক আমার বাসায়ও ভাংচুর চালায়। আমাকে ও আমার স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। শুধু তাই নয়, একইদিন অপর এক মাদক ব্যবসায়ী হাফিজুল শেখ’র বাসায়ও অভিযান চালানো হয়। এসময় টিমের সদস্যরা তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ ভাংচুর ও লুটপাট চালায় বলে জানান তিনি। তবে টাকাপয়সা দিয়ে দফারফা হওয়ায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদক নির্মূলে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবী জানিয়েছে রসূলপুরের একাধিক ব্যক্তি। তবে মাদক বিক্রিতে প্রশাসনের কতিপয় অসাধু সদস্যের সহযোগীতা আর অহেতুক হয়রানী বন্ধের দাবীও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী লোকজন। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসে বরিশালে এক যুবককে আটকের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিসে হাতে মাদক ধরিয়ে দিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পরিদর্শক আব্দুল মালেক তালুকদারকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। এক অফিস আদেশে তাকে বরিশাল কার্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।