বামনায় আমন চারা ও সবজি চাষ নিয়ে সংকটে কৃষক; দ্বিগুণ দামে বিক্রি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:২২, আগস্ট ৩০ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরগুনার বামনায় আমন ধানের চারার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে অবিরাম ভারী বর্ষণে, ও অতিজোয়ারের জলব্ধতায় কৃষি জমির বীজতলা ও সবজী বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে আমন আবাদ মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা ধানের চারার সংকটে পড়েন। ফলে কৃষক আমন ধানের চারা সংকট মোকাবেলায় পাশ্ববতী জেলা ও উপজেলা থেকে দ্বিগুণের বেশি দামে সংগ্রহ করছেন। এতে আমন আবাদ নিয়ে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে বিপাকে পড়েছেন। ধানের চারা সংগ্রহে নানা বিড়ম্বনায় কৃষকের এবার একদিকে আর্থিক ক্ষতি অন্যদিকে যথা সময়ে চারা সংগ্রহ করতে না পেরে ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত ও আমন আবাদ কিছুটা বিলম্ব হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ভূক্তভোগি কৃষকরা জানান, উপজেলায় কোন বিএডিসির ডিলার না থাকায় স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বীজের চাহিদাকে পুঁজি করে গোপনে পাশর্^বর্তী জেলা, উপজেলা থেকে চড়া দামে বিক্রি করছেন বলে একাধিক কৃষক অভিযোগ করছেন। এবার দ্বিগুনের বেশী দামে বিপন্ন কৃষককে ধানের চারা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার খালসমূহে ঝাউ ও গড়া দিয়ে খালের নৈব্যতা সৃষ্টির ফরে মৌসুমী ভারীবর্ষণ ও অতিজোয়ারের ফলে জলাবদ্ধতা থাকছে দীর্ঘসময়। তাই খালসমূহ দখল মুক্ত হলে আমরা জলাবদ্ধতায় এত ক্ষতিগ্রস্থ হতাম না। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বিরামহীন ভারী বর্ষণে জলব্ধতায় উপজেলার ৫৬০ হেক্টর আমন ধানের বীজতলার ৩৫০ হেক্টর ও ২০০ হেক্টর শাক সবজি চাষকৃত জমির মধ্যে ১৩০ হেক্টর জমির বীজ ও শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভূক্তভোগী কৃষকরা পুনরায় বীজতলা তৈরীতে আগ্রহী নয় কারন এখন সময়ও নেই। পাশর্^বর্তী জেলা উপজেলা থেকে আমন চারা দ্বিগুণের বেশী দামে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাই উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪২৫টি কৃষক পরিবার দিশেহারা হয়ে পরেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএডিসির ব্রি-৫২, ব্রি-৭৬ ও ব্রি-৭৭ উপকূলের এ নিচু জমিতে ব্যপক চাহিদা রয়েছে। কিন্ত উপজেলায় বিএডিসির কোন ডিলার না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা অন্য জেলা থেকে সংগ্রহ করার অযুহাত দেখিয়ে এক প্রকার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। ঝালকাঠি নলছিটি থেকে অতিরিক্ত আমন চারা কৃষকের কাছথেকে বিনামূল্যে এনেও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বীজ সংকটের অযুহাত দেখিয়ে গোপনে চড়া দামে এসব ধানের চারা বিক্রি করছে বলে ভূক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করছেন। বামনা সদর ইউনিয়নের চাষি রুবেল, রামনা ইউনিয়নের চাষি মজিদ মিয়া, বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের চাষি কাঞ্চন মিয়া ও ডৌয়াতলা ইউনিয়নের চাষী পুলিন, সুনিল ও সজল জানান, সাম্প্রতি বর্ষার জলাবদ্ধতায় তাদের ধানের পাশাপাশি সবজি চাষেও চরম ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবজি বাগানে নতুন করে চারা লাগানোর কোন উপযুক্ত মাটি নেই। আমরা অনেকে পাশর্^বর্তী উপজেলা থেকে চড়া মূল্যে (চারহাজার টাকা পোন) কিছু ধানের চারা সংগ্রহ করেছি। এ বছর চাষের জমি ফাকা থাকার সম্ভাবনাই বেশী। বামনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্তী এদবর আমাদের সময়কে বলেন, সম্প্রতি অতিবর্ষণ ও জলাবদ্ধতায়র ফলে আমনের বীজতলা ও সবজি বাগানের ক্ষতি হয়েছে। দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে এ এলাকায় উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ পরিচালক, সরেজমিন উইং খামার বাড়ী- জনাব এ. কে এম. মনিরুল আলম, অতি. পরিচালক, বরিশাল অঞ্চল- জনাব তৌফিকুল আলম, উপপরিচালক, কষি. সম্প্র. অধিদপ্তর, বরগুনা- জনাব আব্দুল রশিদ তারা সরেজমিনে কৃষকদের সাথে মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করেন এবং ক্ষয়-ক্ষতি লক্ষ্য করেন। কৃষক এমুহূর্তে বীজধান নিতে আগ্রহী নয়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবাকে সামনের রবি মৌসুমে প্রণোদনার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষিদের মাঝে বীজ, সার দ্রুত প্রদান করা হবে। আর ডিলার না থাকায় চাষিদের উচ্চদামে পাশ্ববতী জেলা, উপজেলা থেকে বীজধান সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে স্থানীয় ভাবে আগ্রহী ব্যক্তিদের মাঝে বীজ ডিলার নিয়োগ করা গেলে এ কৃত্রিম সংকট থাকবেনা।