নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় শতাধিক নৌকায় চার শতাধিক জেলে মাছ শিকার করেন। তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন ইলিশের মৌসুম আসার জন্য। তবে এ বছর কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে হতাশ ছিলেন তারা। এখন কিছু বড় মাছ ধরা পড়ায় চাঞ্চল্য ফিরেছে তাদের মধ্যে।
ইলিশের ভরা মৌসুমেও বরগুনার নদীগুলোতে বড় ইলিশের দেখা মিলছিল না। এতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জেলেরা। তবে গত কয়েক দিনে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের দু-একটা মাছ ধরা পড়ায় আশার সঞ্চার হয়েছে তাদের মধ্যে।
জেলেরা জানিয়েছেন, আগের মৌসুমগুলোতে এ সময় প্রচুর বড় মাছ উঠলেও এবার চিত্র ভিন্ন। সাগরে কিছু মাছ ধরা পড়লেও নদীতে ইলিশের দেখাই মিলছিল না।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় শতাধিক নৌকায় চার শতাধিক জেলে মাছ শিকার করেন। তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন ইলিশের মৌসুম আসার জন্য। তবে এ বছর কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে হতাশ ছিলেন তারা। এখন কিছু বড় মাছ ধরা পড়ায় চাঞ্চল্য ফিরেছে তাদের মধ্যে।
উপজেলার কালমেঘা এলাকায় বিষখালী নদীতে ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন জলিল মাঝি। তিনি বলেন, ‘ইলিশের সিজন এক্কারে শ্যাষের দিগে, এহন হপায় মোগো গাঙ্গে দুই-এউক্কা ইলিশের দেহা পাইতে আছি।’
তিনি জানান, মৌসুম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না নদীতে। তবে গত তিন-চার দিন ধরে বড় ও মাঝারি আকারের কিছু ইলিশ ধরা পড়ছে। এর মধ্যে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের দু-একটি, বাকি সব ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম।
তিনি আরও জানান, দিনে দুবার জোয়ার-ভাটায় জাল পাতেন তারা। দুবার মিলিয়ে ১০-১২ কেজি ইলিশ ধরা পড়ছে। এর আগে পাওয়া যাচ্ছিল জাটকা সাইজের তিন-চার কেজির মতো ইলিশ।
জেলে ও পাইকাররা জানান, বরগুনার বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা এবং বঙ্গোসাগরের মোহনা এবং পাথরঘাটার কাছে জালে মাঝারি ও বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এতে তাদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। জেলেপাড়াগুলোতেও খুশির আমেজ ছড়িয়েছে।
পাথরঘাটার বলেশ্বর তীরবর্তী পদ্মা গ্রামের জেলে সেলিম মিয়া বলেন, ‘হাঙ্গা (সারা) সিজনে ইলিশের দেহা পাই নায়, এহন কিছু মাছ ধরা পড়তে আছে। আশায় আছি আরও বেশি ইলিশ শিগগিরই আইয়া পড়বে।’
তালতলীর নিশানবাড়িয়া এলাকার জেলে সগীরের আশা, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে আরও ইলিশ ধরা পড়বে।
স্থানীয় পাইকার হারুন মিয়া জানান, গত তিন-চার দিন ধরে নদীতে বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। এসব ইলিশ ওজনভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মৎস্য বিভাগের হিসাবমতে, বরিশাল বিভাগ এখন দেশের মোট ইলিশের প্রায় ৬৬ ভাগের জোগানদাতা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৮৮ টন ইলিশ ধরা পড়ে। এর মধ্যে বরিশাল অঞ্চল থেকে ধরা হয় ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৫ টন ইলিশ। এর প্রায় এক লাখ টন ইলিশই ছিল বরগুনার।
জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক দফাদার জানান, বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় এক লাখ মৎস্যজীবী রয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রান্তিক জেলের সংখ্যা ৭০ হাজার। ইলিশের ওপরই মূলত এদের জীবিকা নির্ভর করে।
তিনি আরও জানান, বরগুনার প্রধান তিন নদীতে ইলিশের দেখা না মেলায় জেলেরা হতাশ ছিলেন। তবে এখন কিছু ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেদের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার দেব জানান, পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে নদ-নদীর স্রোত বেড়েছে। এ কারণে গভীর সমুদ্রের ইলিশ নদীতে আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রজনন মৌসুমের কাছাকাছি সময় এখন। এখন কয়েক দিন নদীতে ইলিশ ধরা পড়বে।