নগরীর হলিকেয়ারে যুবককে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৬:৩২, আগস্ট ২৭ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোডের হলিকেয়ার নামক একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে এর চতুর্থ তলার মেস থেকে চন্দন নামক এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন, নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে চন্দন সরকারকে। মৃত চন্দন সরকার বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বড়পাইকা এলাকার চিত্তরঞ্জন সরকারের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক শাহজালাল মল্লিক। তিনি জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত ওই যুবকের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট হলিকেয়ার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চন্দন সরকারকে দিয়ে যান তার মামা নিবাস মহুরী। এর আগেও চন্দন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ছিলেন। চন্দন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে ওই কেন্দ্রের রোগী এবং দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন। কয়েক দিন ধরেই চন্দন নির্ধারিত বিছানায় রাত কাটাচ্ছিলেন না। এ নিয়ে রোগীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) রাতে চন্দন তার নির্ধারিত বিছানায় পশ্চিম দিকে পা দিয়ে শোন। এ সময় পাশের রোগী তারিকুল ইসলাম পশ্চিমে পা দিয়ে শুতে বাধা দেন। তখন চন্দন সরকার তারিকুলের মুখে ঘুষি মারেন। এই খবর জানতে পেরে চতুর্থ তলার  দায়িত্বে থাকা ভলান্টিয়ার সরোয়ার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চন্দনকে এসে মারধর করেন। এমনকি চন্দন যেন কথার অবাধ্য না হন, সে জন্য তার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাই যে যার মতো ঘুমাতে গেলে রাত তিনটার কিছু সময় পরে রোগীদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায়। সবাই জানতে পারেন, চন্দন টয়লেটের ভ্যান্টিলেটরের সঙ্গে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে একাধিক রোগী ও স্থানীয়রা দাবি করেছেন, টয়লেটের ভ্যান্টিলেটরের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা অসম্ভব। চন্দন অনেক লম্বা ছিল। তাকে মেরে ভিন্ন গল্প সাজানো হচ্ছে। এ বিষয়ে ভলান্টিয়ার সরোয়ার বলেন, রাত সোয়া তিনটার দিকে আমাকে ডেকে তোলা হয়, একজন টয়লেটে আত্মহত্যা করেছে বলে। উঠে দেখি চন্দন সরকার গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আমরা তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে নামিয়ে মেঝেতে এনে রাখি। বাথরুমের উচ্চতায় কেউ আত্মহত্যা করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সরোয়ার বলেন, তা বলতে পারব না, তবে লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। ভর্তি রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হলিকেয়ার সেন্টারে মাদকাসক্তি নিরাময়ে কোনো চিকিৎসা হয় না। এখানে কথায় কথায় নির্যাতন করা হয়। আবার ভেতরে যে নির্যাতন হয়, তা পরিবারের লোকজনের কাছে বলতে দেওয়া হয় না। অনেকের হাত-পায়ে নির্যাতনের চিহ্নও রয়েছে। তাদের দাবি, ভলান্টিয়ার সরোয়ার অকথ্য নির্যাতন করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সরোয়ার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে চন্দন সরকার পশ্চিম দিকে পা দিয়ে শুয়ে পড়লে আরেক রোগী তারিকুল তা নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চন্দন তারিকুলকে ঘুষি মারেন। এ সময় চন্দনকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে কয়েকটি ‘থাপ্পড়’ দিয়েছি। কিন্তু তাকে কোনো নির্যাতন করিনি।
নিহত চন্দন সরকারের মামা নিবাস মহুরী বলেন, ভাগ্নেকে যখন এখানে দিয়ে যাই, তখন কোমরের বেল্টটি পর্যন্ত রাখতে দেয়নি। রশি বা গামছা তো দূরের কথা। তাহলে হত্যায় গামছা পেল কীভাবে? প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ভোর রাতে হলিকেয়ার থেকে মোবাইলে আমাকে জানানো হয় চন্দন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করি না। আমার ভাগ্নেকে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে। এখানে এসে তো লাশও দেখছি না। আত্মহত্যা করলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করবে। কিন্তু এখানে লাশ পুলিশ উদ্ধার করেনি, হলি কেয়ারের লোকজনই বাথরুম থেকে লাশ ফ্লোরে এনে রেখেছে। এটি হত্যাকাণ্ড, আমি এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। হলিকেয়ারের ব্যবস্থাপক মাইনুল হক তমাল দাবি করেন, হলিকেয়ার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মোট ২৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছে। এখন ২৭ জন রয়েছে। পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। বিস্তারিত তারাই বলতে পারবে। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে রাখার কোনো বিধান আছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এর কোনো জবাব দেননি।