বরিশালের বাবুগঞ্জে আ’লীগের পদ পেয়েই টেন্ডারবাজি!

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:৫৫, আগস্ট ২৫ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জে চোরাই চাল বিক্রির সরকারি নিলামে (উম্মুক্ত টেন্ডার) মূল্য বলায় দুই সংবাদকর্মীকে প্রকাশ্যে বেধড়ক পিটিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও তার লোকজন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলা খাদ্য গুদামের সামনে এ ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে দুই সংবাদকর্মীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে দুই সংবাদকর্মীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃধা মু: আক্তার-উজ-জামান মিলন। এর আগে গত ২ আগস্ট বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নব-গঠিত দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আক্তার-উজ-জামান মিলন। বরিশাল জেলা খাদ্য গুদাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মেহেন্দিগঞ্জ থেকে পাচারকালে এক হাজার বস্তায় ৫০ টন সরকারি চাল জব্দ করে পুলিশ। এই ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। তাছাড়া এ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আদালতের নির্দেশে জব্দকৃত চোরাই চাল নিলামে বিক্রির জন্য নিলাম দরপত্র আহ্বান করে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলা খাদ্য গুদামের সামনে এই নিলাম কার্যক্রম শুরু হয়। হামলার শিকার বরিশালের একটি আঞ্চলিক পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি রোকন মিয়া জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন মৃধা এবং তার লোকেরা আগে থেকেই জোটবব্ধ হয়ে গুছ প্রক্রিয়ায় ৯ লাখ টাকা নিলাম ডাকে। যে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এজন্য আমি এবং আমার সহকর্মী নুরু জমাদ্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে ৫০ টন চালের মূল্য ৯ লাখ ৫ হাজার টাকা ডাকি। তিনি বলেন, চালের মূল্য বলা মাত্রই কিছু বুঝে ওঠার আগেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মু: আক্তার-উজ-জামানের নেতৃত্বে আবুল কালামসহ তার সহযোগীরা আমার এবং নুরু জমাদ্দারের ওপর হামলা করে। তারা মারধর করে আমার গায়ের টি-শার্ট ছিড়ে ফেলে। এমনকি এই ঘটনায় আমি যেন আইনের সহযোগিতা নিতে না পারি সেজন্য আমার বিরুদ্ধে ১৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করা হয় বলেও জানিয়েছেন রোকন। অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মু: আক্তার-উজ-জামান জানান, চোরাই চাল পাচারকালে আমরাই ধরিয়ে দিয়েছি। সোমবার নিলামের আগে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা-কর্মীরা আমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। যে ঘটনা ঘটেছে সেটা নিলামে যারা অংশ নিয়েছে তারাই করেছে। বরং আমি না ছাড়ালে রোকন নামের ওই সংবাদকর্মী বড়ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতো। তিনি বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রসুল জমাদ্দার চালের নিলাম মূল্য ৯ লাখ টাকা ডাকে। দ্বিতীয় কেউ না ডাকায় তিনিই ওই নিলাম পায়। কিন্তু তিনবার ডাকার পরে রোকন এবং নুরু জমাদ্দার এসে মীমাংসিত নিলামের মূল্য ৯ লাখ ৫ হাজার টাকা বলেন। এজন্য রসুল জমাদ্দার এবং তার সাথে থাকা লোকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে রোকন ও নুরুকে মারধর করে। দ্রুত আমি তাদের ছাড়িয়ে দেই। পাশাপাশি ঘটনার পরে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সংবাদকর্মী পরিচয় দেয়া নুরু জমাদ্দার আওয়ামী লীগ নেতা রসুল জমাদ্দারের ভাতিজা। তাদের পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই নুরুর রোকনকে দিয়ে নিলামের চালের মূল্য ডাকতে বলে। নুরুর কারণেই এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতা মৃধা মু: আক্তার-উজ-জামানের। বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মাহাবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। তবে জানতে পেরেছে নিলাম ডাকা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে একটু হাতাহাতি এবং বাকবিতণ্ডা হয়েছে। পরে আবার তা সমঝোতাও হয়েছে। এছাড়া বড়ধরনের কিছু ঘটেনি। তাছাড়া এই ঘটনায় আমাদের কাছে কোনো অভিযোগও আসেনি। বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে জব্দকৃত চাল নিলামে বিক্রির আহ্বান জানানো হয়েছিল। যারা নিলামে অংশগ্রহণ করেছে তারা কেউ যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা ডাকেনি। এজন্য আমরা আবারো নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা বলি। তখন দু’জন ব্যক্তি এসে নিলাম ডাকার কথা বলেন। আমি তাদের অনুমতি দিলে তারা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৯ লাখ ৫ হাজার টাকা বলেন। ইউএনও আরো বলেন, নিলামে অংশ নিয়ে পূর্বে যারা মূল্য বলেছে তাদের সাথে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে ওই দুই সংবাদকর্মীর বাকবিতণ্ডা হয়। এ কারণে আমরা নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করে সেখান থেকে চলে আসি। পরে অবশ্যই দু’পক্ষই এক হয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু মূল্য নির্ধারণ হয়নি, তাই পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নিলাম ডাকা হবে।