নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘রাত সোয়া ৯টার দিকে আমরা গিয়েছিলাম। রাতের খাবার খেয়ে আমরা আলোচনায় বসি। ভুল-বোঝাবুঝি তাদের মধ্যে ছিল। আমাদের মধ্যেও ছিল। আমি বিস্তারিত বলতে চাই না, তবে আমাদের ত্রুটি ছিল। সেটা বুঝতে পেরে আমরা এই দ্বন্দ্ব বাঁচিয়ে রাখতে চাইনি। এতে তৃতীয় পক্ষ ফায়দা নেবে।’
বরিশালের পরিস্থিতির সমাধান নিয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদলের বৈঠক হয়েছে।
বৈঠকে পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, র্যাব-৮-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, প্যানেল মেয়র গাজী নইমুল হোসেন লিটুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের বাসায় রাত ৯টার দিকে ওই বৈঠক হয়। এ সময় মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভুল-বোঝাবুঝি থেকে ওই ঘটনা হয়েছে বলে বৈঠকে আলোচকরা তুলে ধরেন। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কথাও উঠে এসেছে।
ব্যানার অপসারণ নিয়ে গত বুধবার রাতে বরিশাল সদরের ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথা-কাটাকাটি হয়।
প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ সময় ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালান। আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ চারজন আহত হন।
সমঝোতা বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর
সংঘর্ষের পর সদর ইউএনওর কার্যালয়ের সামনে পুলিশ অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আবার ইউএনওর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর গ্রেপ্তার দাবি করা হয়।
বিবৃতিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও তার অনুসারীদের ‘দুর্বৃত্ত বাহিনী’ উল্লেখ করা হয়েছে, মেয়রকে ‘অত্যাচারী’ বলা হয়েছে।
প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সংগঠন যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে, তা নিয়ে গত দুই দিন ধরে তুমুল আলোচনা চলছে।
বিষয়টি নিয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবউননেছা এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ এস এম ফিরোজ উল হাসান।
ঘটনাটি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা থাকলেও তিনজনই একমত যে, এ ধরনের বিবৃতি আসা কাম্য ছিল না প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক বিবৃতির মতো হয়ে গেছে এটি। কিন্তু যারা প্রশাসন চালাবেন, তারা আগেভাগেই কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন না। আবার রাজনৈতিক নেতাদের মতো বহুল প্রচলিত ভাষা ব্যবহার করে কাউকে নেতিবাচকভাবে চিত্রায়িত করাও উচিত নয়।
এই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ওই সমঝোতা বৈঠকের খবর এলো। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি ছিল। সেটা সমাধানের জন্য বৈঠক হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে তার বাসভবনে। তিনি চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন।
‘রাত সোয়া ৯টার দিকে আমরা গিয়েছিলাম। রাতের খাবার খেয়ে আমরা আলোচনায় বসি। ভুল-বোঝাবুঝি তাদের মধ্যে ছিল। আমাদের মধ্যেও ছিল। আমি বিস্তারিত বলতে চাই না, তবে আমাদের ত্রুটি ছিল। সেটা বুঝতে পেরে আমরা এই দ্বন্দ্ব বাঁচিয়ে রাখতে চাইনি। এতে তৃতীয় পক্ষ ফায়দা নেবে।’
বৈঠকের পর সবাই খুশি জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও চেয়েছিলেন আমরা বসি। আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনারের কথা হয়েছে। এতে সবাই খুশি আছেন। ওনাদের দায়ের করা দুটি মামলা প্রত্যাহার হবে। এতে জামিন সহজ হবে। আমাদের করা দুটি মামলা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সেটা নিয়ে আমরা বসব।’
তবে বৈঠকের বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা। আলোচনার বিষয়ে জানতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।