বাউফলে ‘আলোকিত পৌরসভা’ বাস্তবায়ন ভেস্তে যাওয়ার পথে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:৫৪, আগস্ট ১৮ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর বাউফলে ‘আলোকিত পৌরসভা’ বাস্তবায়ন কার্যক্রম সঠিক তদারকির অভাবে ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাউফল পৌরবাসীর জন্য শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা, উন্নত বাসস্থান,যাতায়াত ব্যবস্থাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন জিয়াউল হক জুয়েল। কিন্তু সঠিক তদারকির অভাবে সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন পাচ্ছেন না পৌরবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আসম ফিরোজ এমপির প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে বাউফল পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালের নির্বাচনে বর্তমান মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ‘আলোকিত বাউফল’ পৌরসভা গড়ার। নির্বাচনের পর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বাউফল পৌরসভাকে ‘গ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত করেন তিনি। বর্তমানে বাউফল পৌরসভার আয়তন ৬.৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। ২০১৬ সালে বাউফল পৌরসভা ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হলেও তা শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভায় যে সকল নাগরিক সুবিধা থাকা দরকার তা নেই এখানে। পৌরসভার প্রায় সব রাস্তায় বাতি দেয়া হলেও তার সঠিক তদারকি নেই। অধিকাংশ সড়কের সরবরাহ লাইন নষ্ট হয়ে গেছে। পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সব সড়ক পাকা করা হলেও কাজের মান একেবারেই নিম্ন মানের। কাজ শেষ করার কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙ্গে খানাখন্দে পরিনত হয়েছে। নির্মাণকাজের মান তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নেই কোন তৎপরতা। ঠিকাদার তার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। পৌর এলাকায় কোন দোকান, মার্কেট বা বাসা বাড়ী নির্মাণ করার জন্য পৌরসভার অনুমতি প্রয়োজন। ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে নক্সা অনুমোদন নিতে হয়। ওই নকশা বা প্লান অনুমোদনের জন্য পূর্বে যাচাই বাছাই করার জন্য প্রকৌশলী রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর কাছে নক্সা বা প্লান তৈরি করতে হয়। পৌরসভা ছাড়া অন্য কোন প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্লান করে জমা দিলে তা অনুমোদনের জন্য পৌরসভার প্রকৌশলীকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে প্লান অনুমোদন নিতে হয়। আর প্লান অনুমোদন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। প্লান অনুযায়ী বাড়ীর কাজ হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হয় না। প্লান অনুমোদন নিয়ে যে যার মতো কাজ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক পৌর নাগরিক বলেন, পৌরসভায় অভিযোগ দিলেও সাধারন নাগরিক কোন সুরাহা পাচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক কাউন্সিলর বলেন, উন্নয়ন কাজে গুনগত মান নিশ্চিত না হওয়ায় নির্মাণের কয়েকদিনের মধ্যেই তা ভেঙে যায়। এদিকে পৌর শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়েকটি খালের পাড় প্রভাবশালীরা দখল করে স্থাপণা নির্মাণ করেছে। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে ওই খালের পাড় উদ্ধারে নেই কোনো কার্যকর ভুমিকা। পৌরসভা এলাকায় দুস্থ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, অস্বচ্ছল ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। এসব ভাতাভোগীর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। ফলে প্রকৃত দুস্থরা ভাতাবঞ্চিত হচ্ছে। পৌরসভার প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম বলেন, এ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। মেয়র স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী পৌরসভার কেউ প্লান করেনা। আমার কাছে ফাইল আসলে আমি যতদ্রুত সম্ভাব কাজ শেষ করার চেষ্টা করি। বাড়ী নির্মানের ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকি। পৌরসভার সচিব মইনুল হক উল্লেখিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আলোকিত পৌরসভা গড়ার লক্ষে আমরা নিলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তবে লোকবল কম থাকায় কিছু কিছু সেবা দ্রুত বাস্তবায়নে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে।