ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ভবন নির্মান

কামরুন নাহার | ২৩:৫৬, ফেব্রুয়ারি ২৩ ২০২০ মিনিট

  নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ওয়াক্ফ পরিদর্শকের কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা, মোতাওয়াল্লি এবং ওয়ারিশদের যোগসাজসে বরিশালের ওয়াক্ফ স্টেটের বিপুল পরিমাণ জমি বেহাত হয়ে পরেছে। এ সম্পত্তি লোপাটের উদ্দেশ্যে ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি দিয়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভবন। সূত্রমতে, ২০১৫ সাল থেকে বরিশাল জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শকের কার্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও এ পর্যন্ত সকল ওয়াক্ফ এস্টেট তালিকাভূক্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। তবে এখন পর্যন্ত সদর উপজেলায় ১১০টি ওয়াক্ফ এস্টেটে প্রায় ৩০০ একর সম্পত্তির হদিস মিললেও তার অর্ধেকই বেহাত হয়ে গেছে। জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক আলহাম আব্দুল্লাহ এ বিপুল সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর আমতলাস্থ স্বাধীনতা পার্কের পূর্ব পাশে আর্শেদ আলী ওয়াক্ফ এস্টেট থেকে জমি ক্রয় করেছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ হাবিব। এ জমিতে তিনি ভবন করার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণও গ্রহণ করেছেন। একইভাবে তার পার্শ্ববর্তী আলীমুদ্দিন হাওলাদার ওয়াক্ফ এস্টেট থেকেও অবৈধভাবে জমি বিক্রি করেছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। এভাবে নগরীর অন্যান্য ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পত্তিও বিক্রি হয়েছে নামে-বেনামে। নগরীর বটতলায় হাজী ওমর শাহ্ ওয়াক্ফ এস্টেটের কাগজপত্রে এক একর সম্পত্তি থাকলেও সরোজমিনে রয়েছে ৬০/৭০ শতাংশ জমি। বাকি সম্পত্তি কতিপয় স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শককে একাধিকবার অবহিত করা হলেও ওয়াক্ফ সম্পত্তি উদ্ধারে নেয়া হয়নি প্রয়োজনীয়ও পদক্ষেপ (হাজী ওমর শাহ্ ওয়াক্ফ এস্টেটের লোপাট হওয়া সম্পত্তি নিয়ে আগামীকালের সংখ্যায় বিস্তারিত প্রতিবেদন থাকছে)। ওয়াক্ফ সম্পত্তি বিক্রির বিধান না থাকলেও এসব সম্পত্তি বিক্রি দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর প্রায় ২০টি ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি এবং ওয়ারিশদের যোগসাজসে আইন ভঙ্গ করে জমি বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাগরদী এলাকার আব্দুল হামিদ হাওলাদার ওয়াক্ফ এস্টেট, সায়েস্তাবাদ ওয়াক্ফ এস্টেট, বটতলায় হাজী ওমর শাহ্ ওয়াক্ফ এস্টেট, সদর রোডে হোটেল হকের বিপরীতে সায়েস্তাবাদ ওয়াক্ফ এস্টেট, আলেকান্দা ফখর উদ্দিন লেনে ফখর উদ্দিন ওয়াক্ফ এস্টেট, আমতলা কালু কন্ট্রাক্টর ওয়াক্ফ এস্টেট, রূপাতলী ইউনুস গাজী ওয়াক্ফ এস্টেট, আলেকান্দা মিয়া বাড়ি ছোবেরা বেগম ওয়াক্ফ এস্টেট, কড়াপুর মিয়া বাড়ি আহম্মেদ আলী মিয়া ওয়াক্ফ এস্টেট, আমানতগঞ্জ লুৎফর রহমান খন্দকার ওয়াক্ফ এস্টেট, নবগ্রাম রোড সিরাজউদ্দিন ফকির ওয়াক্ফ এস্টেট, কালিজিরা হোসেন আলী ওয়াক্ফ এস্টেট, আলেকান্দা নুরিয়া স্কুল সংলগ্ন ইউসুফ উদ্দিন কন্ট্রাক্টর ওয়াক্ফ এস্টেট, সাগরদী নাজেম মল্লিক ওয়াক্ফ এস্টেটসহ আরও বেশ কয়েকটি ওয়াক্ফ এস্টেট আইন ভঙ্গ করে বেহাত হয়েছে। অথচ ওয়াক্ফ অধ্যাদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এস্টেটের মুতওয়াল্লি বা পরিচালক সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। এছাড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী ওয়াক্ফ পরিদর্শক সংশ্লিষ্ট স্টেটের সম্পত্তি তালিকাভূক্তকরণ, প্রকৃতি ও পরিমাণ নির্ধারণ, হিসেব, রিটানর্সহ তথ্য সংগ্রহ, ওয়াক্ফ’র উদ্দেশ্য ও কল্যাণকর কার্যাবলী সম্পত্তি ও এর আয়ের ব্যবহার নিশ্চিতকরা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নির্দেশ, ওয়াক্ফ দলিল অনুযায়ী মুতাওয়াল্লির পারিশ্রমিক নির্ধারণ, বেআইনি কার্যকলাপের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী উচ্ছেদ করা, সম্পত্তি ওয়াক্ফ কিনা এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রদান, বিচারাধীন মামলা-মোকদ্দমা চালানো, পরিচালনা ও তদারকি করাসহ ওয়াকফ্’র যথাযথ নিয়ন্ত্রণ রক্ষণাবেক্ষণ করার বিধান রয়েছে। জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক আলহাম আব্দুল্লাহ বলেন, ওয়াক্ফ কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে মোতাওয়াল্লি ওয়াক্ফ সম্পত্তির উন্নতির জন্য আংশিক হস্তান্তর করতে পারবেন। মোতাওয়াল্লি যদি তথ্য গোপন করেন কিংবা দুর্নীতিগ্রস্থ হন তাহলে আপাতত ক্ষতিগ্রস্থ এস্টেট উদ্ধার করা কঠিন নয়। আমাদের নিয়োগকৃত এ্যাডভোকেটের মাধ্যমে মামলা করে তা উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। কারণ কোনোভাবেই ওয়াক্ফ এস্টেট লোপাট করার সুযোগ নেই। সেলক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমাদের একাধিক কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালে বরিশাল জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শকের কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সব জমির তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের এ বিপুল সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য খুব শীঘ্রই আইনের আশ্রয় নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।