বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হচ্ছেনা পায়রা সেতু

কামরুন নাহার | ০০:৪৯, ফেব্রুয়ারি ২০ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হচ্ছে না পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদীর উপর এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে ফের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় দফায় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে। ১ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১৬ সালে শুরু হয়, ২০১৯ সালের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয় এবং ব্যয় বাড়ে ১১৮ কোটি টাকা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যয়ও বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও সময় বৃদ্ধির আবেদন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। সেতু প্রকল্পের পরিচালক নূরে আলম জানিয়েছেন, ‘আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির চিন্তা রয়েছে আমাদের। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।’ এদিকে সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে আছেন সাধারণ মানুষ। সেতু সংলগ্ন পায়রা নদী পারাপারের ফেরি পয়েন্টে সবসময়ই লেগে থাকছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। কখনও তা ৩ কিমি.তে গিয়ে ঠেকে। কথা হয় প্রকল্প পরিচালক সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূরে আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথম দফায় ১৪ মাস সময় বাড়ানো হয় সেতুর ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে। এছাড়া নদীর দক্ষিণ প্রান্তে নদী ভাঙন ঠেকাতে আগে ব্লক ফেলা হয়েছিল। ১৭ নম্বর পিলার করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়। ১২টি পাইল বসাতে গিয়ে ড্রিলিং মেশিন ভেঙেছে পর্যন্ত। এই একটি পিলার বসাতেই সময় লেগেছে ৪ মাসের বেশি। দ্বিতীয় জটিলতায় পড়তে হয় টোল ঘর নিয়ে। প্রথমে কথা ছিল টোল ঘর বসবে নদীর উত্তর প্রান্তে। কিন্তু সেখানে নতুন সেনানিবাস হওয়ায় তা সরিয়ে দক্ষিণ প্রান্তে নিতে হয়। এক্ষেত্রে নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় পড়ি আমরা। ২০১৯ সালের মে মাসে জমি অধিগ্রহণ বাবদ ২৫ কোটি টাকা দেয়া হলেও জমি বুঝিয়ে দেয়া হয় গত বছর ডিসেম্বরে। এখন পর্যন্ত সব স্থাপনা অপসারণ হয়নি। যতদূর শুনেছি ১২৫টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫টি পরিবার টাকা পেয়েছে। ফলে ওই অংশে আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। তবে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শুরু হয়েছে।’ সময় বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আবেদন পেয়েছি। আমরা ডিসেম্বরের বেশি সময় বৃদ্ধি করতে চাইছি না। সিদ্ধান্ত নেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর দু’পাড়ের কাজ মোটামুটি শেষ হলেও নদীর মধ্যবর্তী ৪০০ মিটার এলাকায় কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। তার ওপর এখনও শুরু হয়নি টোলঘরসহ দুই প্রান্তের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ। পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৪৭০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর ৮৪০ মিটার হচ্ছে ভায়াডাক্ট পার্ট। এ ৮৪০ মিটার নদীর দুই পাশে। মূল সেতু অর্থাৎ নদী এবং নদী তীরবর্তী অংশ ৬৩০ মিটার। এক্ষেত্রে আবার ৪০০ মিটার মূল নদী। মূল সেতুর সঙ্গে ভায়াডাক্ট অংশের সংযোগস্থল রয়েছে নদীর দুই প্রান্তে ১১৫ মিটার করে ২৩০ মিটার। ভায়াডাক্ট অংশের নির্মাণ সম্পন্নে পিলারের উপর বসানো হয়েছে আই গার্ডার। আর মূল সেতু অংশে বসবে ১৬৭টি সেগমেন্টাল বক্স গার্ডার। ভায়াডাক্ট অংশে ২২৪টি আই গার্ডারের মাধ্যমে কাজ প্রায় সম্পন্ন হলেও একেবারেই এগোয়নি সেগমেন্টাল বক্স গার্ডারের কাজ। নদীর মূল অংশে এ সেগমেন্টাল বক্স গার্ডারগুলো বসানো হলেই শেষ হবে সেতুর নির্মাণ। বাকি কাজ শেষ করতে ঠিক কতদিন লাগবে সেটাই এখন প্রশ্ন। কথা হয় বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ মহাসড়ক ধরে সমুদ্র বন্দর পায়রা এবং পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাই নয়, সর্বদক্ষিণে দুই জেলা বরগুনা, পটুয়াখালীর সঙ্গেও সারা দেশের যোগাযোগ রক্ষা হয়। আগে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে ৬টি ফেরি পার হতে হতো। ফেরির কারণে যানবাহনের গতিও হতো ধীর। কিন্তু এখন শুধু এ পায়রা নদী ছাড়া আর কোথাও কোনো ফেরি নেই। ফলে গাড়িগুলো ভিড় জমায় এই ফেরিঘাটে। দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে।’