ভোলায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

কামরুন নাহার | ০০:৪১, ফেব্রুয়ারি ২০ ২০২০ মিনিট

সেলিম রেজা, ভোলা ॥ বাঙ্গালি জাতির গর্ব ও অহংকারের দিন একুশে ফেব্র“য়ারী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে ও শহীদদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানাতে ভোলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। অথচ সরকারিভাবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্র“য়ারী পালনের নির্দেশ থাকলেও বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা দিবসটি ভালোভাবে পালন করতে পারছে না। ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় একুশে ফেব্র“য়ারী আসলে নিজ উদ্যেগে কলা গাছ কাগজ দিয়ে সাজিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে কিংবা পাশ্ববর্তী কোন প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্র ছাত্রীরা । অথচ অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলিতে সরকারি বা বেসরকারি খাতের টাকা বিভিন্ন কাজে ব্যয় করলেও সামান্য ব্যয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শণের জন্য শহীদ মিনার তৈরি করতে উদ্যেগ প্রহণ করেনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার তজুমদ্দিনে ১শ দশটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫ টি মাদ্রাসা রয়েছে। অন্য দিকে মনপুরার ৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার। প্রতি বছর কলাগাছ, বাঁশের কঞ্চি ও সাদা কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মান করে ওই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ২১ শে ফেব্র“য়ারী মহান আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালন করে আসছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে অভাবে উপজেলায় পালন করে কিন্তু বিচ্ছিন্ন ও দূরের অনেক প্রতিষ্ঠানে এই দিবস পালন করা হয়না। উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪৭ টি, মাধ্যমিক ও নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১০ টি, কলেজ রয়েছে ৩ টি, মাদ্রাসা রয়েছে ৬ টি। এর মধ্যে হাজিরহাট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনপুরা সরকারি ডিগ্রী কলেজ ও ছমেদপুর বাংলা বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে। অন্য ৬৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় প্রতি বছর ২১ ফেব্র“য়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তজুমদ্দিনের ১৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শম্ভুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শিবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলেও বাকী প্রতিষ্ঠাগুলোতে নেই। ফারজানা চৌধুরী শাওন বালিকা নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যায়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার ও ৭ম শ্রেণির ছাত্রী প্রাপ্তি নন্দি বলে, আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদমিনার না থাকায় আমরা ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পাশ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। বাংলা বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুল ইসলাম বলে, আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাই প্রতি বছর একুশে ফেব্র“য়ারী আসলেই দিবসটি পালনের জন্য বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কলা গাছ ও রঙ্গিন কাগজ দিয়ে একদিনের জন্য তৈরি করে নেই। দাসেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রবিন, অশ্র“, দক্ষিণ সাকুচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী মিনহাজ, লামিয়া, সোহাগ, ৫ম শ্রেণীর মাইশা, রুবিনা, জরিনা জানান, আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার নেই। আমরা সবাই মিললা প্রতি বছর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাইয়া শ্রদ্ধা জানাই। আমরা চাই সরকার প্রতিটি স্কুলে শহীদমিনার নির্মান করে দেয়। একইভাবে বলে উত্তর সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জারিফ, সামিয়া, তৃষা, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া, জাকিয়া নুর, সাকিব, শিমুল, ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফারজানা, মরিয়ম বেগম, আয়শা আক্তার, তামিম, বাছেদ, রহমান সহ অনেকে। মনপুরা মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি ও হাজিরহাট সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আলমগীর হোসেন জানায়, মনপুরায় তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তাই ভবিষ্যৎ প্রজম্ম ভাষা শহীদের ইতিহাস ও সম্মান জানাতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান দরকার। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবনের সাথে শহীদ মিনার নির্মানের জোর দাবী জানান। একইভাবে দাবী করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও হাজিরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা বেগম। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার ৪৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন শহীদ মিনার নেই। এই ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস জানায়, এই বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সাথে আলাপ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।