কৃষকদের স্বাক্ষর জাল করে অর্থ হতিয়ে নিলো উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা

কামরুন নাহার | ০১:০৯, ফেব্রুয়ারি ১৯ ২০২০ মিনিট

বরগুনা প্রতিনিধি ॥ বরগুনার বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকদের স্বাক্ষর জাল করে অর্থলোপাট, মাঠ দিবসের টাকা আত্মসাৎ, চাষীদের নামে বরাদ্দকৃত উপকরণ, সার ও বীজ বিতরণে নানা অনিয়মসহ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন সাধারণ কৃষকরা এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জানা যায়, বোরো ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বরগুনার ৬টি উপজেলা কৃষি অফিস ১৫০ জন কৃষককে বাছাই করে ১৫০টি প্রদর্শনী করে। গড় হিসেব অনুযায়ী বেতাগী উপজেলার ২৫টি প্রদর্শনীর কথা কাগজে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর কোন অস্তিত্বই খুঁেজ পাওয়া যায়নি। প্রতিটি প্রদর্শনীতে কৃষকদের বীজ বাবদ খরচ ২৯০ টাকা, ৫ কেজি বীজ ও সার বাবদ ১৪৭৭ টাকা, কৃষি ফসলের আন্তঃপরিচর্যা বাবদ ১ হাজার টাকা, রেজিষ্টার বাবদ ৬০ টাকা, সাইনবোর্ড বাবদ ৫০০টাকা, পরিবহন বাবদ ৩০০টাকা, আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ৩০০টাকা। এছারাও ১৫০জন কৃষককে প্রশিক্ষনের জন্য জনপ্রতি ১ হাজার টাকাসহ মোট ৪ হাজার ৯শ ২৭ টাকা দেয়ার কথা। এ হিসেবে এ উপজেলার গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫০ টাকা ওই কর্মকর্তা লোপাট করছেন। কিন্তু যেসব বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার কিছুই জানেন না অধিকাংশ কৃষক। কৃষকদের বক্তব্যে তাদের স্বাক্ষর জাল করে এসব অর্থ-লোপাট হয়েছে একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন। বেতাগী উপজেলার ৬ নং কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কাজিরাবাদ গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলামের নাম রয়েছে এ কাগজের তালিকায়। তালিকানুযায়ী কৃষক সহিদুল পেয়েছেন প্রদর্শনীর সব সুবিধা। কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন,‘ প্রদর্শনীর জন্য বা কোনো প্রশিক্ষনেও আমাকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে কখনো ডাকা হয়নি এবং প্রদর্শনীর সবকিছু সুবিধা পাওয়া তো দূরের কথা, এই তালিকার স্বাক্ষরও তিনি করেনি।’ প্রদর্শনীর পুরো তালিকার অবস্থা প্রায় একই রকম। তবে এর মধ্যে কোন কোন কৃষক পেয়েছেন শুধু বীজ ধান, আবার কেউ পেয়েছে শুধু সার। তালিকায় থাকা সব কিছু পেয়েছে এমন কৃষক নেই একজনও। কাগজের বিবরণে দেখা যায়, বেতাগী উপজেলায় কৃষকদের তালিকা করা থেকে প্রদর্শনী বাস্তবায়নের সব দায়িত্ব ছিলেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মহসিন ও সামসুন নাহার। তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মুখ খুলেননি মহাসিন। আর সামসুন নাহার নামে আরেক উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে খুঁেজ পাওয়া গেলেও, তিনি দায়ভাড় এড়িয়ে বলছেন,‘ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনের কথামতো কাজ করেছেন সে।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন,‘ আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। আমার কিছু মনে নেই।’ বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বলেন,‘ ইতোমধ্যে বেশ কিছু অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন,‘ এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’