নাছরিন-১ ট্র্যাজেডির দেড়যুগেও থামেনি স্বজনদের কান্না

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:১৯, জুলাই ০৮ ২০২১ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ আজ ৮ জুলাই। এমভি নাসরিন-১ ট্র্যাজেডির দেড়যুগ অর্থাৎ ১৮ বছর। দীর্ঘ দেড়যুগ অতিবাহিত হলেও নিহতদের স্বজনের কান্না আজও থামেনি। প্রতিবছর দিনে নিহতের স্বজনদের পক্ষ্য থেকে স্থানীয় মসজিদে মসজিদে দোয়া-মুনাজাত ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জের পূর্বচর উমেদ গ্রামের হাফিজউদ্দীন বাজার সংলগ্ন মো: মুনছুর আহম্মদের ছেলে নিহত মো: জাহাঙ্গীর আলমের স্বজনরা এবং আজাহার রোডের নিহত আনিচল হক ও তার স্ত্রী আমেনা নাতনী কমেলা বেগমের স্বজনরা। উপজেলার ধলীগৌর নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সাতবাড়িয়া গ্রামের হাজী শামছল হক মিয়ার বাড়ির মাওলানা সফিউল্যাহর ছেলে মো: নোমানকে (১৬) হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা, তার চাচা কাজী মাওলানা মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর এ দিনে আমার ভাতিজার দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করি এবং নিহতদের রূহের মাগফেরাত কামনা করি। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের এই দিনে ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা ভোলার লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে ৪০২ জনের সলিল সমাধি হয়। দেশে নৌ দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। নাসরিন লঞ্চডুবির ১৮ বছর হলেও নিহত পরিবারে কান্না আজও থামেনি। এক পরিবারের ২৬ জন নিয়ে বরযাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠে ২৪ জনকেই হারায় লালমোহন ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের মহেষখালী গ্রামের রিনা বেগম। রিনার সাথে বেঁচে আসে তার ফুফাতো ভাই সোহেল। চির দিনের মতো হারিয়ে ফেলে রিনার সাত বছরের মেয়ে হাফসা, বোন স্বপ্না, রুমা, তাদের স্বামী-সন্তান, মামা আ: কাদের, মামি সুফিয়া, খালা রাহিমা, খালাতো ভাই মিলন, মিজানসহ পুরো পরিবারের স্বজন। সেদিন রিনা ঢাকা থেকে ভাগ্নে কলেজ শিক্ষক মতিনের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য লালমোহনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। পরিবারের কোনো সদস্যেরই লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। নাসরিন লঞ্চে সেদিন এশার নামাজের ইমামতি করেছিলেন লালমোহন চরভূতা ইউনিয়নের মাদরাসা সুপার মাওলানা মাকসুদুর রহমান। নিজে বেঁচে আসতে পারলেও সাথে থাকা ভাগ্নে নোমানকে আর খুঁজে পাননি। নিজের স্বামীকে হারানোর কথা তুলে ধরেন শামসুননাহার। স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়ে বেঁচে ফিরে আসার কথা জানান, লালমোহনের ব্যবসায়ী মো: শাহজাহান। রমাগঞ্জের পূর্বচরউমেদ (৮ নম্বর ওয়ার্ডের) গ্রামের আজাহার রোড এলাকার আনিচল হক তার স্ত্রী আমেনা বেগম, নাতনী জেসমিন আক্তার (কমেলা) ওই লঞ্চে উঠে আর ফিরে আসেনি বাড়িতে। তাদের বড় ছেলে প্রতিবন্ধী সিরাজ মেজো ছেলে কাঞ্চন মিয়াও ছোট ছেলে ভুট্টো জানান, তারা তাদের মা-বাবা ও ভাগ্নিকে অনেক খোঁজ করেছেন, কিন্তু তাদের লাশগুলো কোথাও পায়নি। প্রতিবছর এ দিনে তারা তাদের মা-বাবার জন্য মসজিদে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেন। স্বজনহারাদের দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান প্রতিবন্ধী সিরাজ। এ রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চান নিহত/ নিখোঁজ পরিবারের স্বজনরা।