হযরত খানজাহানের মাজার দিঘীর আহত কুমিরের চিকিৎসা শুরু

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৭:৪০, জুলাই ০৮ ২০২১ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ বাগেরহাটের হযরত খানজাহান আলী (রহঃ) মাজার দিঘীর আহত একটি কুমিরকে দুইদিন ধরে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। স্থানীয়দের সহায়তায় দিঘী থেকে কুমিরটিকে উপরে উঠিয়ে জেলা প্রানী সম্পদ বিভাগ ও সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের কুমির বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধায়নে ১০ দিন ধরে চলবে কুমিরটির চিকিৎসা। মিঠাপানি প্রজাতির পুরুষ এই কুমিরটি গত ১৫ দিন আগে হযরত খানজাহান আলী (রহঃ) মাজার দিঘীর জালে আটকা পড়ে। দিঘীতে অবৈধ উপায়ে জাল পাতা ওই চক্রটি কুমিরের চোখসহ শরীরে আঘাত করে তাদের জাল ছাড়িয়ে নেয়। এরপর থেকে কুমিরটি অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর কুমিরটি বন্ধ করে দেয় খাওয়া দাওয়া। এর আগে, খানহাজান আলী দিঘীর জালে আটকা পড়ে একাধিক কুমিরের মৃত্যু হয়। আহত এই কুমিরটিসহ দুইটি কুমির মারা গেলেই শেষ হয়ে যাবে খানজাহানের দিঘীর চলমান ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি অংশ। তবে এবার বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের নির্দেশে আহত এই কুমিরটিকে দিঘী থেকে তুলে চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়েছে। বাগেরহাটে ৬ শতাধিক বছর ধরে হযরত খানজাহান আলী (রহঃ)-এর মাজার শরীফের দিঘীতে বসবাস মিঠাপানি প্রজাতির কুমিরের। হযরত খানজাহানের মাজার শরীফের দিঘীর এই কুমির ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি অংশ। খানজাহানের ভক্ত-আশেকানসহ দেশ-বিদেশের পর্যটকরা হযরত খানজাহান আলী (রহঃ) মাজার শরীফে এসে কুমির দেখে থাকেন। কেউ কেউ আবার দিঘীর এই কুমিরদের খাদ্য হিসেবে মুরগি ও ছাগল দিয়ে থাকে। বর্তমানে মাজার দিঘীতে মিঠাপানি প্রজাতির মাত্র একটি পুরুষ ও একটি মা কুমির রয়েছে। মাজার দিঘী থেকে খাদেমদের সহয়তায় রাতের আধারে একটি চক্র অবৈধ ভাবে জাল পেতে মাছ ধরে থাকে। ওই চক্রটির পাতা জালে গত ১৫ দিন আগে আটকা পড়ে পুরুষ কুমিরটি। ওই চক্রটি কুমিরের চোখসহ শরীরে আঘাত করে তাদের জাল ছাড়িয়ে নেয়ার পর থেকে কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বন্ধ করে দেয় খাওয়া দাওয়া। কুমিরটির আহতের বিষয়টি নজরে আসার পর মাজার দিঘীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা বিনা বেগম কুমিরটির সুচিকিৎসার জন্য গত ২৯ জুন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের নির্দেশে আহত কুমিরটিকে দুইদিন ধরে চেষ্টার পর দিঘী থেকে তুলে গতকাল বুধবার (৭ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান, সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ কবির চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন। প্রায় ৫০ বছর বয়সের আহত এই কুমিরটির চোয়ালের মাঝে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। অন্য চোখটিতেও আঘাত পেয়েছে। ১০ দিন উপরে রেখে আহত কুমিরটিকে চিকিৎসা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রানী সম্পদ বিভাগ ও সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির বিশেষজ্ঞরা। হযরত খানজাহান আলী (রহঃ) মাজার শরীফের প্রধান খাদেম শের আলী ফকিরসহ স্থানীয়রা খানজাহানের দিঘীতে রাতের আধারে জাল পেতে মাছ ধরা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। একই সাথে তারা দিঘীতে জাল পাতা বন্ধ করা না গেলে অবশিষ্ট দুইটি কুমির জালে আটকা পড়ে মারা যাওয়ার পাশাপাশি ৬ শতাধিক বছর ধরে ইতিহাস-ঐতিহ্য শেষ হবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন । সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ কবির বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) জানান, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও’র মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নিদের্শে আহত কুমিরটিকে খানজাহানের দিঘী থেকে উপরে উঠানোর পরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। কুমিরটির চোয়ালের মাঝে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। কুমিরটি একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। অন্য চোখটিতেও ঝাপসা দেখছে। যে কেউ চোখে ও চোয়ালে আঘাত করার কারণে কুমিরটি গুরুতর আহত হয়েছে। কুমিরটিকে দুইটি ইনজেকশনসহ গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন প্রকার অসুধ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার সাথে পরামর্শক্রমে ১০ দিন পর্যবেক্ষণের জন্য কুমিরটিকে পানির উপরে রাখা হয়েছে। আহত কুমিরটির বয়স প্রায় ৫০ বছর। কুমিরের অবাধ চলাচলের জন্য হযরত খানজাহান আলী (রহঃ) মাজার দিঘীকে জাল পেতে মাছ ধরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও কুমিরদের ঘুমের অসুধ খাওয়ানো বন্ধ করা না গেলে এই দিঘীর অবশিষ্ট বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির মিঠাপানির কুমির দুইটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এই কুমির বিশেষজ্ঞ। বাগেরহাট জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, কুমিরটিকে উপরে উঠানোর পরে আমরা তাৎক্ষনিক কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেছি। কুমিরটির চোখ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আজ বৃহস্পতিবারও কুমিরটি চোখ খোলেনি। আহত কুমিরটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা কুমিরটিকে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। আশা করছি আহত কুমিরটিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে।