আমতলীতে খুরা রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি : ৩ সহাস্রাধিক গরু আক্রান্ত

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৪০, জুলাই ০৭ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আমতলী উপজেলায় গত দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপক হারে গরুর খুরা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। খুরা রোগে ৭ ইউনিয়নের প্রায় ৩ শতাধিক গরু আক্রান্ত হয়েছে। হাল চাষের ভরা মৌসুমে খুরা রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে এ রোগের প্রতিশোধক এফএমডি (ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ) ভেকসিন না থাকায় কৃষকরা চিকিৎসাও করাতে পারছে না আক্রান্ত গরুর। আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে জুন মাসের শেষ এবং জুলাই মাসের প্রথম থেকে আমতলী উপজেলার কুকুয়া, আঠারগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া, গুলিশাখালী ও আমতলী সদর ইউনিয়নে ব্যাপক হারে গরুর খুরা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ রোগে গরু আক্রান্ত হলে গরুর শরীর গরম ও মুখ দিয়ে লালা বের হতে থাকে। এবং মুখের চারপাশে ও পায়ের খুরার অংশে ঘা হয়ে গরুর হাটা চলা এবং খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্বল হয়ে পরে গরু। বর্তমান সময়ে আমতলী উপজেলায় ধান চাষের জন্য হালের ভরা মৌসুম। ভরা মৌসুমের সময় অধিকাংশ কৃষকের গরু খুরা রোগে আক্রন্ত হওয়ায় কৃষকরা তাদের জমিতে হাল চাষ করতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হলদিয়া, গুরুদল, টেপুরা, রাওঘা, কালিপুরা, কৃষ্ণনগর, রায়বালা, চাউলা, পশ্চিম সোনাখালী, ঘোপখালী, চরখালী, হরিমৃতঞ্জয় গ্রামে খুরা রোগের প্রকোপ বেশী বলে জানা গেছে। চাওড়া ইউনিয়নের কালিবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. নাসির উদ্দিন জানান, তার ১১টি গরুর মধ্যে ১১টি গরু সবই খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি আরো জানান, এই রোগে গরু আক্রান্ত হলে গরুর শরীর গরম থাকে এবং মুখে ও পায়ে ঘা দেখা দেয়। এবং সবসময় গরুর মুখ দিয়ে লালা পড়তে থাকে। এসময় খাওয়া বন্ধ করে দেয়। সব গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার হাল চাষ সম্পূর্ন বন্ধ রয়েছে। হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের রুহুল আমি জানান, আমার ৬টি গরুর মধ্যে ৫টি গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এখন হাল চাষের ভরা মৌসুম। তাই খুরা রোগে গরু আক্রান্ত হওয়ায় আমার জমিতে হাল চাষ বন্ধ রয়েছে। আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের জব্বার ডাক্তার জানান, তার ৬টি গরুর মধ্যে ৩টি গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ভেকসিনের অভাবে তারা এখন চিকিৎসা করাতে পারছে না বলে জানান ওই কৃষক। হলদিয়া গ্রামের মস্তফা গাজীর ৬টি গরু , শাহআলম খার ৫টি, দুলাল গাজীর ৪টি চুন্নু মীরার ৫টি এবং উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের ঝন্টু মোল্লার ৪টি এবং একই গ্রামে দেলোয়ার চেীকিদারের ৩টি গরু সহ উপজেলা ৩ সহা¯্রাধি গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে উপজেলার সকল গ্রামে ঘড়ে ঘড়ে কৃষকের গরু এখন খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। হলদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. স্বপন জানান, ঘড়ে ঘড়ে কৃষকের গরুর খুরা রোগ দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের হাল চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। একদিকে রোগের প্রকোপ অন্যদিকে এ রোগের প্রতিশোধক এফএমডি (ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ) ভেকসিনের সংকট দেখা দিয়েছে আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে। ব্যাপক হারে গরুর খুরা রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় গত ২ সপ্তাহে ১হাজার আক্রান্ত গরুর মধ্যে ভেকসিন প্রয়োগর পর তাদের হাতে আর কোন ভেকসিন মজুদ নেই বলে জানান প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা। একদিকে ভেকসিন সংকট অন্যদিকে কৃষকদের হাল চাষের ভরসা গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হাল চাষের ভরা মৌসুম থাকা সত্ত্বেও কৃষকরা জমি চাষ করতে না পারায় তারা পড়েছে মাহাবিপদে। আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিজিত কুমার মোদক জানান, আমতলী উপজেলায় গত ২ সপ্তাহে অনেক গুরু খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের অফিসে ১ হজার ভেকসিন মজুদ ছিল তা প্রয়োগের পর এখন আর কোন ভেকসিন আমাদের স্টোরে নেই। চাহিদা দেওয়া হয়েছে। ভেকসিন পাওয়া গেলে আক্রান্ত গরুর মধ্যে প্রয়োগ শুরু করা হবে। তিনি আরো জানান, খুরা রোগে গরু আক্রান্ত হলে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা করাতে হবে। সঠিক চিকিৎসা না করালে গুরুর খুরা পড়ে যেতে পারে। এতে গরুর মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন, এ রোগে গরু আক্রান্ত হলে প্রাথমিক ভাবে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন দুবার গুরুর পা ধুয়ে জীবানু মুক্ত করতে হবে। তা হলে গুরু কিছুটা হলেও উপশম পাবে।