সতর্কতায়-জরিমানায় বরিশালে লকডাউনের ৭ দিন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:৫১, জুলাই ০৬ ২০২১ মিনিট

  এম জামান ॥ দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের ১ সপ্তাহ পার করল বরিশাল। আগামী কাল থেকে আরও ১ সপ্তাহ চলবে লকডাউন। কঠোর লকডাউনের মধ্যেই সংক্রমন বা মৃত্যু-উভয় সূচকে বরিশালের অবস্থান উর্ধ্বমুখী। সবশেষ গতকাল বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৭৩.৯৩ ভাগ। যা রীতিমত উদ্বেগজনক। অথচ সাধারন মানুষের মধ্যে সচেতনতা এখনও আশানুরূপ নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির কঠোরতার মধ্যেও রাস্তায় বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ। জীবন-জীবিকার চাপে বাধ্য হয়ে পথে নামা মানুষের পাশাপাশি অকারনেও রাস্তায় ঘুরছে একশ্রেনীর মানুষ। সচেতনতা তৈরীতে প্রচারনা চালিয়েও সফলতা পাচ্ছেনা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি। অহেতুক ঘুরে বেড়ানো মানুষকে নিয়ন্ত্রণে কঠোরতার ঘোষনা দিয়েও তারা ঘরে আটকে রাখতে পারছেনা। জরিমানা, মামলা আর গ্রেফতারেও দিনে দিনে রাস্তায় মানুষের ভীড় বেড়ে চলেছে। গতকাল জেলা প্রশাসন বরিশালের করোনা প্রতিরোধে ও নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে জেলা প্রশাসন বরিশালের পক্ষ থেকে ৩টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দীন আল হেলাল, সমাপ্তি রায় ও জাবেদ হোসেন চৌধুরী। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ৩৫ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২২ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পঞ্চম দিনে সোমবার জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের নেতৃত্বে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৮৯টি অভিযান পরিচালনা হয়। এ সময় ৮৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারার পৃথক মামলায় ৭৫ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি জেলার ১০টি উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করেন ৯ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তাঁরা ৪৩ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পৃথক মামলায় ৪৪ হাজার ৯৫০ টাকার জরিমানা আদায় করেন। ৪র্থ দিনে জেলায় ২১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১৫০টি মামলায় ১৫০ জনকে ২ লাখ ২৫ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ৩য় দিনেও বরিশালে ২১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১৮০টি মামলায় ১৮০ জনকে ৩ লাখ ২২ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ২ জুলাই বরিশালে ২০টি অভিযানে ১১১ মামলায় ১১৩ জনকে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। লকডাউনের প্রথম দিনে ১ জুলাই ২০টি অভিযানে ৫৬টি মামলায় ৫৬ জনকে ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে জরিমানার শিকার একাধিক ব্যক্তি জানান, জরুরী কাজে বের হয়েও জরিমানা গুনতে হচ্ছে। অথচ অনেকেই চোখের সামনে গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরছে। আবার দিনমজুর শ্রেনীর লোকজনের অভিযোগ, সরকার ঘরে খাবারসহ জরুরী ঔষধের যোগাণ দিলে বের হওয়া লাগতনা। নিু-মধ্যম আর বেকার শ্রেনীর লোকজনেরও অভিযোগের অন্ত নেই। লকডাউনে সরকারী বিধিনিষেধ আরোপ ও কার্যকরে বিএমপি কমিশনার বলেন, মানুষের সচেতনতাই জরুরী। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষায় আমাদের সকলেরই বিধিনিষেধ মেনে চলা উচিত। জরিমানা কোন সমাধান নয়, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করাই আমাদের লক্ষ্য। ঘটনা যা-ই হোক বরিশালে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ: খারাপ হচ্ছে। মঙ্গলবার প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে নতুন করে ৪৫৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের দিন ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৩৬। গতকাল শেবাচিম করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল ২৩৬ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৭ জনের করোনা পজেটিভ এবং অন্যদের নমূনা পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষায় কর্তৃপক্ষ। শেবাচিমে করোনা ওয়ার্ড চালুর পর ২৩৬ জন রোগী ভর্তির ঘটনা এই প্রথম। এদিকে মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে করোনা শনাক্তের হার। সোমবার রাতে পিসিআর ল্যাবের সবশেষ প্রকাশিত রিপোর্টে ১৮৮ জনের নমূনা পরীক্ষায় ১৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৭৩.৯৩ ভাগ। এর আগের দিন শনাক্তের হার ছিলো ৫৯.৫৭ ভাগ। উল্লেখ্য, গত বছর মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে করোনাসহ বিভিন্ন উপর্সগ নিয়ে ৭৭৯ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ২১৮ জনই করোনা পজেটিভ।