‘পাথর’ হয়ে যাবে ফুটফুটে শিশুটি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৩৫, জুলাই ০৪ ২০২১ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ বয়স মাত্র পাঁচ মাস। প্রথম দেখায় মনে হয় পুতুল। নরম চাহনি, তুলতুলে গালের প্রাণচঞ্চল শিশুটি এক সময় পাথরের মতো স্থির হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের কিছু করার নেই বলেও জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম ডেইলি সান জানিয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি দেশটিতে জন্ম শিশু লেক্সি রবিনসের। চারদিকে মৃত্যুমিছিলের মধ্যে ফুটফুটে শিশুটিকে পেয়ে সংসার ভরে উঠেছিল অ্যালেক্স ও ডেভ রবিনসের। এমনিতে সারাক্ষণ হাসিখুশি লেক্সি। প্রথমে কোথাও কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। তবে কয়েক দিন পরই চোখ খোলে তাদের। অ্যালেক্স ও ডেভ জানান, সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। হঠাৎ তারা লক্ষ করেন, মেয়ের হাতের বুড়ো আঙুলটি একেবারেই নাড়ানো যাচ্ছে না। পায়ের আঙুলগুলোও স্বাভাবিকের থেকে একটু বড়। এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পরও অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায়, চিকিৎসকের কাছে যান তারা। তবে প্রথমে কেউই রোগ ধরতে পারেননি। আলেক্স জানান, প্রথমে চিকিৎসকরা তাদের জানান লেক্সি জীনগত এমন সমস্যায় আক্রান্ত যাতে সে হাঁটতে পারবে না। সুস্থ মেয়েকে দেখে তা বিশ্বাস করতে পারেননি অ্যালেক্স ও ডেভ দম্পতি। তাই নিজেরা খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞকে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে বিশেষ পরীক্ষায় পাওয়া ফলে স্তম্ভিত হয়ে যান এ দম্পতি। জানতে পারেন, তাদের মেয়ে ফাইব্রোডিসপ্লাসিয়া ওসিফিকানস প্রগ্রেসিভা (এফওপি) নামের বিরল রোগে আক্রান্ত। অ্যালেক্স জানান, লেক্সি পরীক্ষার ফল যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১৪ জুন নিশ্চিত করা হয় লেক্সি সত্যিই এফওপিতে আক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘এফওপিতে আক্রান্তদের শরীরে ‘এসিআর১’ নামে জিন থাকে। দুঃখজনকভাবে লেক্সির শরীরে সেই জিন পাওয়া গেছে।’ লেক্সির বাবা জেভ বলেন, লেক্সিকে যে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে দেখানো হয়েছে তিনি যুক্তরাজ্যের অন্যতম চিকিৎসক। তিনি জানিয়েছেন, ‘তার ৩০ বছরের কর্মজীবনে আগে এমন কোনো রোগী দেখেননি। এটি অত্যন্ত বিরল রোগ।’ ডেইলি সানের প্রতিবেদনে বলা হয়, লেক্সি যে রোগে আক্রান্ত তা ২০ লাখে মাত্র একজনের হয়। এই রোগে আক্রান্তরা ২০ বছর বয়সেই শয্যাশায়ী হয়ে যান। সর্বোচ্চ আয়ুস্কাল ৪০ বছরের আশপাশে। এ রোগে কঙ্কালের কাঠামোর বাইরেও হাড় গজায়। শরীরের পেশিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ে পরিণত হয়। যত বয়স বাড়তে থাকে ততই হাড়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে শরীরে। এ কারণে একটা সময় শরীর কার্যত পাথরে পরিণত হয়। চিকিৎসকরা জানান, লেক্সির পায়ের পাতা থেকে আঙুল পর্যন্ত হাড়ের সন্ধিস্থলগুলো ফুলে রয়েছে। হাতের বুড়ো আঙুলে দুটি করে সন্ধিস্থল রয়েছে। সেই কারণেই আঙুল নাড়াতে পারছে না সে। তারা আরও জানান, কানের হাড় বাড়লে তার বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ। দাঁতের চিকিৎসা করাতে পারবে না লেক্সি। তাকে কোনো ধরনের ইনজেকশনও দেয়া যাবে না। এমন বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও, লেক্সি আগের মতোই প্রাণচঞ্চল ও হাসিখুশি বলে জানিয়েছেন বাবা-মা। এই বিরল রোগ কীভাবে শনাক্ত করা যায়, তা নিয়ে অভিভাবকদের সচেতন করতে এরই মধ্যে অনলাইনে কার্যক্রমও শুরু করেছেন তারা।