আদালতে সাক্ষ্য দিলেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও রাসায়নিক পরীক্ষক

কামরুন নাহার | ০০:২৪, ফেব্রুয়ারি ১৮ ২০২০ মিনিট

বরগুনা প্রতিনিধি ॥ বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত (রিফাত শরীফ) হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী, সিআইডির আইটি শাখার রায়ায়নিক পরীক্ষক রবিউল ইসলাম ও রাজু মিয়া নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী। গত রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো: আছাদুজ্জামানের আদালতে তারা এ সাক্ষ্য প্রদান করেন। এসময় রাত হয়ে যাওয়ায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর সাক্ষ্য প্রদান চলমান রাখেন বিচারক। আদালত সূত্র জানায়, গত রবিবার সকালে প্রথমে সাক্ষ্য প্রদান করেন প্রত্যক্ষদর্শী রাজু মিয়া। এরপর ঢাকা থেকে আগত রাসায়নিক পরীক্ষকের রবিউল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এরপর মধ্যহ্ন বিরতির পর বিকেল তিনটার দিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম গাজী ৮জন আসামির ১৬৪ ধারায় প্রদান করা জবানবন্দির বর্ণনা তুলে ধরে। এসময় রাত হয়ে যাওয়ায় আদালতের বিচারক তার (মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর) সাক্ষ্য প্রদান চলমান রাখেন। গতকাল সোমবার তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষিদের জেরা করেন ঢাকা থেকে আগত আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্লাস্টের একিউএম ফারুক ও বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারি আসলাম। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভুবন চন্দ্র হাওলাদার ও বাদির নিয়োজিত আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির আটজনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এছাড়াও জামিনে থাকা আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বরগুনা নারী শিশু আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমানের আদালতে এ মামলায় ১৪জন শিশু আসামির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। জেলা ও দায়রা আদালতে চারজন সাক্ষ্য শেষে সিআইডি ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবরেটরি আইটি ফরেনসিক শাখার পুলিশ পরিদর্শক মো. বরিউল ইসলাম বলে, আমি ১৮ জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তার পাঠানো ফেসবুক বন্ড ০০৭ ম্যাসেঞ্জার গ্র“পের আলামত প্রোফাইল এর স্ক্রিনশট, লিংক, ডাটা ডাউন লোড স্ক্রিনশট এর সফট কপি, পেন ড্রাইভে ভিডিও পরীক্ষা করে ১২৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ২৫ জুলাই বরগুনা প্রেরণ করি। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভবন চন্দ্র হাওলাদার বলে, আদালতে যে ৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা সকলেই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। তার মধ্য বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ঢাকা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরির আইটি শাখার পুলিশ পরিদর্শক রবিউল ইসলাম বিশদ ভাবে তার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেছেন। এছাড়া রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা বরগুনা থেকে ঢাকার দায়রা জজ আদালতে বদলির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা আবেদনের ওপর আগামীকাল বুধবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল সোমবার আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হলে আদালত এ দিন ধার্য করেন। একেএম আসাদুজ্জামান ও এসএম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। আদালতে মিন্নির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও অ্যাডভোকেট মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এফ আর খান। নিহতের স্ত্রী ও মামলার আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি গত ৯ ফেব্র“য়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করে। আবেদনে বরগুনার দায়রা জজ আদালত থেকে ঢাকা জেলা দায়রা জজ অথবা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বদলির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বরগুনার আদালতে মামলার বিচার চললে মিন্নির জীবন হুমকির মুখে থাকবে এ কথা উল্লেখ করে মামলাটি বদলির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন জেড আই খান পান্না। তিনি আদালতে বলেন, বরগুনার আদালতে এই মামলা বিরতিহীনভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে। এসময় আদালত বলেন, এভাবে সাক্ষ্য নিতে বাধা কোথায়? সাক্ষী আদালতে হাজির হলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করতে সুপ্রিম কোর্টের সার্কুলার আছে। মিন্নির আইনজীবী বলে, সাক্ষ্য নিতে বাঁধা নেই তবে কেন এত তাড়াহুড়ো? একটি নির্দিষ্ট মামলায় কেন? দেশের সব মামলাই যদি এভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি হতো তাহলেতো কোনো কথাই ছিল না। জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এফ আর খান বলে, আবেদনকারী মিন্নি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে বলে শুনেছি। তবে আমার কাছে কোনো রেকর্ড নেই। তাই প্রকৃত অবস্থা জানতে সময় দরকার। এরপর আদালত আগামীকাল বুধবার শুনানির দিন ধার্য করেন। গতবছর ২৬ জুন সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত রিফাতের পিতা আব্দুল আলিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। এই মামলায় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় গতবছর ১ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ২৪জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এই মামলায় নিহতের স্ত্রী মিন্নি জামিনে মুক্ত রয়েছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গতবছর ২ জুলাই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। একারণে তাকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়নি। মিন্নিকে গতবছর ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার করলেও হাইকোর্ট গতবছর ২৯ আগস্ট এক রায়ে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ওইবছরের পহেলা সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। ওই দিনই পুলিশ মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তবে আপিল বিভাগ জামিন বহাল রাখায় মিন্নি গতবছর ৩ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরইমধ্যে এ মামলায় মিন্নিসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মামলায় বরগুনার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণও শুরু হয়েছে।