আজ নাট্যজন সৈয়দ দুলালের জন্মদিন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১২:৫৭, জুলাই ০৩ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিনিধি।। আজ নাট্যজন সৈয়দ দুলালের জন্মদিন। তার জন্ম ১৯৫৩ সালে ৩ জুলাই। শৈশবে ও কৈশোরে পিতা সৈয়দ আলতাফ হোসেনের অভিনয় দেখেই নাট্য জগতের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। এরপরে বরিশালে নাটকের প্রাণ পুরুষ প্রয়াত আকবর হোসেনের সংস্পর্শে এসে তৎকালীন সময়ে গড়ে ওঠা বরিশালে গ্রুপ থিয়েটার চর্চার প্রথম সংগঠন খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। বরিশালে দর্শনীর বিনিময়ে মঞ্চায়িত প্রথম নাটকে অভিনেতা ছিলেন সৈয়দ দুলাল। নিয়মিত নাট্য চর্চার অঙ্গীকার নিয়ে বরিশালে ষ্টুডিও থিয়েটার প্রতিষ্ঠাকরে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে বরিশাল কে তিনি নিয়ে গেছেন এক অনন্য স্থানে। দীর্ঘ প্রায় ছয় দশক তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বরিশালের সাংস্কৃতি অঙ্গনে। নদীবেষ্টিত দেশের দখিনের জনপদের নাট্য অঙ্গনের পথ চলার রয়েছে সুদীর্ঘ এক ঐতিহ্য। একই সাথে সমৃদ্ধও এ অঞ্চলের নাট্য অঙ্গন। তবে এর পথ চলার শুরুর দিকটা মসৃণ ছিলোনা এখনকার মতো। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও বাংলাদেশের নাট্য ও গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনকে শক্তিশালী করার অভিযাত্রায় এ অঞ্চলের রয়েছে এক সংগ্রামী ভূমিকা। যা সারা দেশের নাট্য অঙ্গনে এখন সমাদৃত। আর এই সংগ্রামের এক অভিযাত্রীর নাম সৈয়দ দুলাল। যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে স্টুডিও থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা। যার বাস্তব রূপ আজকের শব্দাবলি স্টুডিও থিয়েটার। একজন নাট্যকর্মী থেকে সংগঠক, আর সেখান থেকে তিনি আজ নাট্যকর্মীদের কাছে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। দেশের গ-ি পেরিয়ে তিনি আজ প্রতিনিধিত্ব করেন বিশ্ব নাট্য সভায়। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান আয়োজিত নির্দেশনা বিষয়ক কর্মশালায় থেকে তিনি ধারণা পান স্টুডিও থিয়েটারের। এরপর তিনি ১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেষ ও রাক্ষস নাটকের মঞ্চায়নের মধ্যদিয়ে শব্দাবলীতে স্টুডিও থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। শব্দাবলীতে তিনি সবচেয়ে বেশী সময় ধরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বরিশালে শিশুদের নিয়ে নাটকের কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন শব্দাবলী’র শিশু থিয়েটার। বরিশালের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির পটরেখায় মাসিক আনন্দ লিখন পত্রিকার সম্পাদনা করছেন। এর আগে বরিশালের অন্যতম আঞ্চলিক দৈনিক পরিবর্তন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। সৈয়দ দুলালের জন্ম ১৯৫৩ সালে ৩ জুলাই। শিক্ষাজীবন শুরু করেন নব আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬৯ সালে বরিশাল এ কে স্কুল থেকে এস এস সি, ১৯৭২ সালে সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে এইচ এস সি এবং ১৯৭৬ সালে বি. এ (পাস) পাশ করেন। শব্দাবলীর বাইরে বরিশাল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সার্বজনীন সংগঠন বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদে দীর্ঘ ১১ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৩ সালে বরিশালে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সৈয়দ দুলাল এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। প্রথমে আহবায়ক পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হিসেবে পর পর তিনবার নির্বাচিত হন। আন্তর্জাতিক নাট্যসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আই.টি.আই) বাংলাদেশ কেন্দ্রের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সৈয়দ দুলাল এ যাবৎ চারবার আন্তর্জাতিক নাট্য সম্মেলনে যোগ দেন। সবশেষ ২০১৪ সালে আর্ন্তজাতিক নাট্য সম্মেলন আর্মেনিয়ায় যোগ দেন। নাটকে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৩ সালে ঢাকা নান্দনিক অজিত চট্টোপাধ্যায় পদকে ভূষিত করেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা পদাতিক প্রবর্তিত আবুল কাসেম দুলাল পদক লাভ করেন। এছাড়া প্রজন্ম নাট্যকেন্দ্র প্রবর্তিত দেবেন্দ্র পদক, অমৃত একাডেমি প্রবর্তিত দানবীর অমৃত পদক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান সকাল-সন্ধ্যা পদক, ব্রজমোহন থিয়েটার প্রবর্তিত অশ্বিনী পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রবর্তিত সম্মাননা-২০১৩ এবং ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার নাট্যপদক লাভ করেন। তাঁর লিখিত নাটকগুলোর মধ্যে ‘জীবন্ত পোস্টার’ এবং ‘একাত্তর এবং ইত্যাদি’ উল্লেখযোগ্য। তার নির্দেশনায় নাটকের সংখ্যাও অনেক। চর্যাপদের উপর লেখা সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ নাটক নির্দেশনা দিয়ে বিপুল প্রশংসা অর্জন করেছেন। তাঁর অসংখ্য অভিনিত নাটকের মধ্যে মেষ ও রাক্ষস, বাজলো রাজার বারোটা, একজন নাবিক ও একটি শঙ্খচিল, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় উল্লেখযোগ্য। শিশুদের টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিসিমপুর এ গুণী ময়রার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শিশুদের প্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছেন। দীর্ঘ হোক তাঁর পথচলা।