অস্তিত্বহীন চার মুক্তিযোদ্ধার কবর বাধাঁইয়ে অর্থ বরাদ্দ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০১:৩৬, জুন ২০ ২০২১ মিনিট

গৌরনদী প্রতিবেদক ॥ দেশব্যাপী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই প্রকল্পের আওতায় বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সনাক্ত করে বাঁধাইয়ের কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তবে আগৈলঝাড়া উপজেলায় অস্তিত্বহীন চার শহীদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধার কবর বাধাঁইয়ের তালিকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে যুদ্ধকালীন সময় থেকে তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নিখোঁজ থাকায় তাদের কবর বাধাঁইয়ের কোন প্রশ্নই আসে না। অপরজন ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকারের আমলে নিজ বাড়িতে বসে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অথচ তার নামও এসেছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। শুধু তাই নয়, এদের একজন ডাকাতের হামলায় নিহত হওয়ার পরও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ অস্তিত্বহীন তিনজন এবং বিতর্কিত এক মুক্তিযোদ্ধার কবরস্থান বাঁধাই করতে দেবে না স্থানীয় প্রকৃত বীরমুক্তিযোদ্ধারা। যদিও ওই চারজনের প্রত্যেকের নামে কবর বাধাঁইয়ে জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই লাখ টাকা করে ৮ লাখ টাকা। চারজন হলেন শহীদ আব্দুল মান্নান মোল্লা, শহীদ সামচুল হক মোল্লা, শহীদ তৈয়ব আলী বখতিয়ার ও শহীদ আব্দুল গফুর। সূত্রে জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এক পত্রের আলোকে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি বরিশাল জেলা প্রশাসককে অবহিত করে ২৫.০৬.০০৬০.১১ নং স্মারকে এক পত্রে জেলার ১০ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সনাক্ত করে বুঝিয়ে দিয়ে ইউএনওদের মাধ্যমে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে একটি তালিকা প্রেরণ করেন। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাশেম তালিকা পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সুশান্ত বালাকে গত ৯ মে যাচাই পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সুশান্ত বালা বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম আসা চারজনের কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকা হাতে পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারি শহীদ আব্দুল মান্নান মোল্লা, শহীদ সামচুল হক মোল্লা, শহীদ তৈয়ব আলী বখতিয়ারের কবরস্থান তাদের বাড়ি কিংবা উপজেলার কোথাও নেই। তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বা তারপরে ওই তিনজনের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সমাজসেবা অফিসার আরও বলেন, শহীদ আব্দুল গফুরের কবরের সন্ধানে তার নিজ বাড়ি বারপাইকা গিয়ে জানতে পারি ১৯৬৮ সালে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে আব্দুল গফুর মারা গেছেন। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার সকালে রত্নপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বলেন, বারপাইকা গ্রামের আব্দুর রহমান শিকদারের পুত্র আব্দুল গফুর স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে কলেরায় মারা গেছেন। তার নাম শহীদ গেজেটের তালিকায় আসা গোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কলঙ্কের। আব্দুল গফুরের সহপাঠি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোঃ সোহরাব উদ্দিন বলেন, আব্দুল গফুরের ডান হাতের কব্জি ছিলো না। সে বাম হাত দিয়ে খাবার খেত। ১৯৬৮ সালে সে নিজ বাড়িতে বসে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার ১৬ জন তালিকাভুক্ত বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে কিভাবে অস্থিত্বহীন তিনজন এবং ১৯৬৮ সালে মৃত ব্যক্তির নাম শহীদ গেজেটে এসেছে তা সত্যি রহস্যজনক। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, ঢাকায় বসবাসরত আব্দুল গফুরের সন্তানরা প্রতারণার মাধ্যমে শহীদ পরিবার হিসেবে সরকারি ভাতা গ্রহণ করছেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাশেম বলেন, অস্তিত্বহীন এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের কিভাবে মন্ত্রণালয় তালিকা করেছে তা আমার জানা নেই। আমরা বিতর্কিত ব্যক্তি ও অস্তিত্বহীন কবরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট জমা দেবো। তারপর তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। অপরদিকে সড়কপথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে গৌরনদীর সাউদের খালপাড় নামক এলাকায় বসে শহীদ হওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ আবুল হাসেম এর কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকায় স্থান পায়নি। অথচ মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ডাকাতের হামলায় নিহত বাটাজোর গ্রামের সোনামদ্দিনের নাম রহস্যজনকভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারিভাবে তার কবরস্থান বাঁধাই করার তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তালিকানুযায়ি তারা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই এর কাজ বাস্তবায়ন করছেন। এখানে কোন কবরস্থান বা শ্মশান বাঁধাইয়ের কাজ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে, সেটা বাস্তবায়ন করা হবে না।