মির নাজমুল ॥ চলতি বছর থেকেই বিআইডব্লিউটিএ’র রুট পারমিটের আওতায় আসছে পণ্যবাহী জাহাজ, ট্রলার, স্পিডবোটসহ সব ধরনের নৌযান। এতে সরকারের রাজস্বের আওতায় আসবে বরিশালের প্রায় তিন শতাধিক পণ্যবাহী ছোট ট্রলার ও নৌযান। এর জন্য সরকারকে নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হবে পণ্যবাহী ট্রলার মালিকদের। রুট পারমিটের নির্ধারিত স্টেশন ছাড়া যাত্রী বা পণ্য ওঠানামা করলে ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্সে অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে। পণ্যবাহী ট্রলারগুলোর নৌপথের শৃঙ্খলা ও নৌ-দুর্ঘটনা রোধ নিশ্চিতকরণসহ রাজস্ব আদায়ের জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (নৌরুট পারমিট, সময়সূচি ও ভাড়া) বিধিমালা-২০১৯ জারি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সুত্রে জানা গেছে, বরিশাল বালুর ঘাট, কেডিসি, চাঁদমারী, কসাইখানা চরমোনাই ট্রলারঘাটসহ একাধিক ঘাট থেকে দৈনিক প্রায় ১০/১২টি রুটে মোট তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল করে। ১৯৭০ সালের ইনল্যান্ড আইনে পণ্যবাহী জাহাজ, বালুবাহী বাল্কহেড, স্পিডবোট, ট্রলারসহ ইঞ্জিনচালিত অন্যান্য নৌযানের রুট পারমিট নেয়া বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু নতুন বিধিমালায় লঞ্চের পাশাপাশি সব ধরনের নৌযানকে রুট পারমিট নিতে হবে। বিধিমালার তফসিল-৩-এ সারা দেশের নৌ-পথকে ১৫টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহনের জন্য আলাদাভাবে কিছু পণ্যবাহী ট্রলারসহ অন্যান্য নৌযানগুলোকে রুট পারমিট দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, নতুন বিধিমালার ৩৩ বিধি অনুযায়ী, কোন রুটে কতটি এবং কী ধরনের নৌযান চলবে সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে দিতে পারবে বিআইডব্লিউটিএ। নতুন বিধিমালায় নৌযানকে এক বছরের জন্য রুট পারমিট দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে কার্গো ভেসেল, কোস্টাল ভেসেল, অয়েল ট্যাংকার, কোস্টাল ট্যাংকার বা কনটেইনার জাহাজের রুট পারমিটের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তবে সার্ভে (ফিটনেস) সনদের মেয়াদ শেষ হলে রুট পারমিটের কার্যকরিতা থাকবে না। এতে আবেদনের ৩০ দিনের মধ্যে রুট পারমিট দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আবেদন রুট পারমিট পাওয়ার যোগ্য না হলে তা সরাসরি নামঞ্জুর করে আবেদনকারীকে জানানোর কথা বলা হয়েছে। নতুন বিধিমালায় যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজের আলাদা ভাড়া নির্ধারণ পদ্ধতিও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ যাত্রীদের জন্য কিলোমিটার প্রতি সর্বোচ্চ ও সর্বনিু ভাড়া এবং পণ্য পরিবহনের জন্য ধরন অনুযায়ী দূরত্বের ভিত্তিতে টনপ্রতি ভাড়া নির্ধারণে সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য জমা দেবে। সুত্রে আরো জানা গেছে, পণ্যবাহি ট্রলারের মধ্যে খেয়া ঘাটের ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো এই আইনের আওতায় আসবেনা। তবে ১৬ হর্স পাওয়ারের উপরে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলোকে বিআইডব্লিউটিএ থেকে রুট পারমিট ও ফিটনেস সনদ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আকারভেদে বছরে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০/৪০ হাজার টাকা। এতে বরিশালের সাতটি জেলায় চলাচলকারী প্রায় তিন শতাধিক ট্রলার থেকে বিআইডিব্লিউটিএ রাজস্ব আদায় করতে পারবে বছরে অন্তত ১কোটি ২০ লাখ টাকা। অথচ বিগত বছরগুলোতে পণ্যবাহী এসব ট্রলারগুলো রাজস্ব না দিয়েই চলাচল করেছে বিভিন্ন রুটে। এ ব্যাপারে বরিশাল আধুনিক নৌবন্দরের ট্রাফিক ও বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু বলেন, গেজেট পাস হয়েছে এখন নির্দেশনা আসলেই বাস্তবায়ন করা হবে। তবে নৌ-দুর্ঘটনা রোধে এর কোন বিকল্প নেই কারণ নৌপথে পণ্য পরিবহনে ট্রলারগুলোকে শৃঙ্খলিত করতে পারলে নৌদুর্ঘটনা অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব হবে। এদিকে বরিশাল থেকে চলাচলকারী ট্রলার মালিক মো: কালাম মাঝিসহ অন্যান্যরা বলেন, মুদি-মনোহরি, আসবাবপত্র, চাল, তৈলসহ নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী পরিবহন করে থাকি। আমরা নৌপথে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির শিকার হই। বরিশাল ঘাট থেকে কাচপুর, মুন্সিগঞ্জ রুটে ট্রলার নিয়ে গেলে চাঁদপুরের মনপুর ফারি, গলাগাছিয়া ও নারায়নগঞ্জ পুলিশ ১শ থেকে ৫শ টাকা চাঁদা নেয়। এরমধ্যে যদি আবার সরকারি ফি নেয়া হয় বছর শেষে তাহলে পণ্য পরিবহনের ব্যয় বেড়ে যাবে। আর আমরা সপ্তাহে প্রতিদিনই ট্রিপ পাইনা কারন দৈনিক যে পণ্য জমা হয় পরিবহনের জন্য তাতে ট্রিপ দিলে খরচা ওঠেনা। বাধ্য হয়ে সপ্তাহে আমরা ৩/৪ টি ট্রিপ দেই। এনিয়ে বরিশাল থেকে ভোলা-পটুয়াখালী-বরগুনা জেলা রুটে চলাচলকারী একাধিক ট্রলার মালিক ও মাঝিরা বলে, আমরা সপ্তাহে তিনদিন ট্রিপ দেই বরিশাল থেকে। কারন এর বেশি ট্রিপ হয়না। ট্রিপ দিতে গিয়ে ঘাট, জ্বালানি ও স্টাফ এবং মেরামত ব্যয় যে পরিমাণ হয় তাতে লাভের মুখ দেখা কষ্টসাধ্য। উল্লেখ্য নগরীর ঘাটগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪ ঘন্টায়ই পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল করে হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, ভোলা, ঝালকাঠি, গলাচিপা, কলাপারা, স্বরুপকাঠি, উজিরপুরসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে।