বরিশাল নগরী থেকে প্রকৃতির দান বিলুপ্তির পথে!

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:২৩, জুন ১০ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক।। এককালের ‘বাংলা ভেনিস’ খ্যাত বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ খাল বোজানো সহ তা উধাও হবার পরে ক্রমে এ নগরী সবুজশূণ্য হয়ে পড়ছে। এক সময়ের ‘সবুজ বরিশাল’ নগরায়নের ধাক্কায় তার অতীর রূপ হারিয়ে ফেলছে। গত কয়েক দশকে এনগরীর অনেক খাল বোজানোর পরে নানা কারণে তার অস্তিত্বই ইতোমধ্যে প্রায় বিলুপ্ত। বিগত কয়েক বছর ধরে খাল উদ্ধারের নামে জেলা প্রশাসন থেকে অনেক ঢাক ঢোল পোটানো হলেও তার বাস্তবতা এখনো প্রায় শূণ্য।   এমনকি নগরীর জেলখাল খনন কার্যক্রম তিনবার উদ্বোধন করে তা খননের নামে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নানা ধরনের সহায়তা গ্রহন করা হলেও সেখানে ভরা বর্ষায়ও পানি প্রবেসের পথ প্রায় রুদ্ধ। অতিকষ্টে এনগরীতে কয়েকটি খাল এখনো তাদের অস্তিত্বের জানান দিলেও তার শ্রোত স্তিমিত। বর্তমান ও বিগত নগর প্রশাসন নগরীর খাল খননের নামে ৩টি ছোট বড় ‘প্রকল্প-সারপত্র’ সরকারের কাছে পেস করলেও তার একটিও অনুমোদন লাভ করেনি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭টি খাল খননের একটি প্রকল্প হাত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।   গত একযুগে এ নগরী থেকে বিপুল সংখ্যক গাছ হারিয়ে গেলেও সবুজ আচ্ছাদনের কোন পরিকল্পনা গ্রহন করেনি কেউ। অথচ একসময় বরিশাল মহানগরী বৃক্ষ রোপনে কয়েকবার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছিল। লাগামহীন নগারায়ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিবেকহীন উদাশিনতায় এ নগরী থেকে সবুজ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবীদদের।   এমনকি নিকট অতীতে সরকারী আধা সরকারী পর্যায়ে এ নগরীতে কোন বৃক্ষ রোপন হয়নি। অথচ প্রতিবছর ঘটা করে বরিশাল বিভাগীয় সদরে বিশাল বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হয়। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাগন সে মেলা থেকে সবাইকে গাছ লাগাতে পরামর্শও দেন। কিন্তু নগরীর যে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এ মেলার আয়োজন করা হয়, সে ময়দানের চারপাশে ও সংলগ্ন ‘ভিআইপি এলাকায়’ও গত একযুগেও কোন গাছ লাগান হয়নি।   কিন্তু নানা অজুহাতে অনেক গাছ কাটা পড়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পূর্ব পাশে বাঁধ রোডর ধারে কির্তনখোলা নদী তীর ঘেসে এককালের বিশাল ঝাউ বাগান উজার হয়েছে আরো অর্ধ শতক আগে। ঐ রাস্তার পাশের বড় বড় পাম গাছগুলোর অস্তিত্বও এখন আর চোখে পড়ে না। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ভিভিআইপিদের জনসভার নিরাপত্তার অজুহাতে উদ্যানটির পূর্ব পাশের বাঁধ রোডের পাশের বেশ কিছু পাম গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বছর কয়েক আগে।   নগরীর সদর হাসপাতালের সামনে এবং কালেক্টরেট পুকুর পাড়, পোষ্ট অফিসের সামনে, জেলা পরিষদের সামনের পুকুর পাড়, বিবির পুকুর পাড়ের পাম ও কৃষ্ঞচুড়া সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছও কেটে ফেলা হয়েছে নানা কারণে। সাবেক নগর পরিষদ সড়ক অধিদফ্তরের সিএন্ডবি রোডের কাশীপুর থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত কথিত ৪ লেন রাস্তা নির্মানের নামে অন্তত দুশ বিভিন্ন ধরনের গাছ কেটে সাবার করে। এমনকি সরকারী সেসব গাছ কোথায় গেছে তার কোন হিসেবও কারো কাছে নেই।   ১৯০৩সালে বরিশাল শহরে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা সদর স্থাপনের পরে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা জজ, সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপারদের জন্য অনেক বাস ভবন সহ সরকারী বাড়ী নির্মান করা হয়েছিল। সেসব বাড়ী ও সামনের রাস্তাগুলোতে বিপুল সংখ্যক রেইন-ট্রী লাগান হয়। শতাধীক বছরের স্বাক্ষী হয়ে তার অতি সামান্য এখনো অবশিষ্ট থাকলেও বেশীরভাগই নানা অজুহাতে কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু নতুন কোন গাছ আর লাগান হয়নি। বরিশাল শহরের বনরাজি নিয়ে একাধীক প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিক অনেক গল্প প্রবন্ধ লিখে গেছেন। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের শহর বরিশালের প্রকৃতির কথা তার অনেক লেখায়ও স্থান পেয়েছে ।   আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও বরিশাল শহরে এসে এ নগরীর প্রকৃতিক শোভায় মোহিত হয়েছেন। তিনি তার অমর উপণ্যাশ ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় বরিশাল শহরের প্রকৃতিক শোভার বর্ণনা দিয়েছেন। বৃটিস যুগে এ শহরের সুরকীর রাস্তা আর গাছ গাছালীর কথাও উল্লেখ আছে তার লেখায়। বরিশালে জাতীয় কবির স্মৃতিরচারন বর্তমান প্রজন্মের কারো হৃদয়ে এখন আলোড়ন সৃষ্টি করে কিনা জানা না গেলেও মনুষ্য সৃষ্ট নানা কর্মকান্ডে এনগরী থেকে সবুজ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আর তা ফিরিয়ে আনারও কোন উদ্যোগ নেই।   এ ব্যপারে বন অধিদফ্তরের বরিশালের বন সংরক্ষকের সাথে টেলিফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘আপতত সামাজিক বনায়নের আওতায় কোন প্রকল্প না থাকায় এ নগরীতে তার অধিদফ্তর থেকে বৃক্ষ রোপনের কোন পরিকল্পনা নেই। তবে আগামীতে এ ধরনের কোন প্রকল্প হলে তিনি অবশ্যই নগরীর যতটা সম্ভব সবুজায়নের চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি কোন সরকারী-আধাসরকারী দফতর চাইলে চারা সরবারহ সহ বৃক্ষ রোপনে প্রযুক্তিগত সব সহায়তা প্রদানে বন বিভাগ প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান তিনি।