পরিত্যক্ত বস্তুতে মিলছে রুটি রুজির সন্ধান

কামরুন নাহার | ২৩:৪৬, ফেব্রুয়ারি ১২ ২০২০ মিনিট

আনোয়ার হোসেন ॥ পরিত্যক্ত বস্তুতে মিলছে রুটি-রুজির সন্ধান ও রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ, টিনের কৌটা ও এক্সরে প্লেট থেকে তৈরী হচ্ছে দৈনিক শতাধিক শ্রমিকের কর্মযজ্ঞ। আর এতে বরিশাল বিসিক শিল্প নগরী ও পলাশপুর এলাকাসহ প্রায় দু শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পরিত্যক্ত এ পণ্যগুলো পুনরায় নতুন পণ্য বানানোর জন্য কাঁচামাল তৈরীর জন্য গড়ে উঠেছে ৮টি ছোট-বড় কারখানা। সপ্তাহে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে অর্ধশত টন প্লাস্টিক কাঁচামাল পাঠানো হয় যা সরাসরি চলে যায় চিনের মার্কেটে। আর চিন থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের এ বোতলের কাচামালগুলো থেকে নিত্যনতুন পণ্য তৈরী করে বাজারজাতকরণ করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, খেলনাসহ অন্যান্য পণ্য। এব্যপারে পলাশপুর এলাকার বিসমিল্লাহ প্লাস্টিকের মালিক সোবহান বলে, ফেরীওয়ালা ও টোকাইদের মাধ্যমে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করা হয়। এরপর বোতলের ছিপি খুলে আলাদা করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে বোতলের রং অনুযায়ী ভাগ ভাগ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে বোতলগুলো একটি সাইজে কাটা হয় এবং চতুর্থ ধাপে বোতলগুলো পানির হাউজে সোডা দিয়ে পরিস্কার করার পর পঞ্চম ধাপে মেশিনের মাধ্যমে বোতলগুলি কুচি কুচি করে কাটা হয়। সবশেষ এ বোতল কুচিগুলো ৭০/৮০ কেজির এক একটি প্যাকেট তৈরী করে ঢাকায় পাঠানো হয়। প্রতি কেজি বোতল কুচি ঢাকার পাইকাররা আমাদের থেকে ৩০/৪০ টাকা দরে কিনে নেয়। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ৭/৮ টন প্লাস্টিক বোতল কুচি উৎপাদন হয়। তবে এতে পরিবেশে কোন প্রভাব পরেনা কিনা জানতে চাইলে সোবহান আরো বলে, কোন প্রকার প্রভাব পরেনা কারন আমরা তো প্লাস্টিক পোড়াইনা যে ক্ষতিকর ধোয়া বের হবে শুধুমাত্র ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুই। কিন্তু আমরা পরিবেশকে ক্ষতি থেকে বাচাই, কারণ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শুধু তাই নয় আমার এ কারখানায় দৈনিক ১৫/২০ জন শ্রমিক কাজ করে। এনিয়ে ফেরীওয়ালা ধলু সিকদার জানায়, প্রতিদিন বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চঘাটে অনেক যাত্রীরা বোতলের পানি খেয়ে ফেলে দেয় এবং তা আমরা সংগ্রহ করি। শুধু তাই নয় বাসা-বাড়ি থেকেও প্লাস্টিকের বোতল ক্রয় করি ৪/৫টাকা কেজি দরে এরপর তা প্লাস্টিক কারখানা মালিকদের কাছে ২০টাকা দরে বিক্রি করি। এদিকে কাউনিয়া বিসিক শিল্প নগরীর হাওলাদার বোর্ড মিলের মালিক মো: রফিক বলে, ফেরিওয়ালা ও টোকাইদের মাধ্যমে ফেলে দেয়া কাগজ ও প্যাকেট সংগ্রহ করি। এরপর তা বড় পানির হাউজের মধ্যে মেশিনের মাধ্যমে মন্ড তৈরী করি। দ্বিতীয় ধাপে ঐ মন্ড দিয়ে বিভিন্ন পুরুত্ব ও সাইজের কাগজের বোর্ড তৈরী করে রৌদ্রে শুকানো হয়, যা দিয়ে নানান ধরণের খেলনা ও প্যাকেট তৈরী হয়। আর আমাদের থেকে প্যাকেট তৈরীর প্রতিষ্ঠানগুলো তা কিনে নেয় এবং বরিশালসহ অন্যান্য জেলায়ও বাজারজাতকরণ করা হয়। প্রতিদিন কারখানাটিতে ২০/২৫ জন শ্রমিক কাজ করে। তবে একাজে পরিবেশ দপ্তরের অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে। অপরদিকে পলাশপুর এলাকায় টায়ার ও টিনের কৌটা ব্যবসায়ী শাজাহান হাওলাদার জানায়, ভাঙ্গারি ফেরীওয়ালাদের থেকে মালামাল সংগ্রহ করি এরপর ঢাকা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে মজুদ করা মাল ক্রয় করে নিয়ে যায়। আমার এই ব্যবসায় পরিবেশের উপর কোন প্রভাব পরেনা। একমালিকানা এসব কারবারে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়, পাশাপাশি নিন্ম আয়ের মানুষগুলো জীবিকা নির্বাহ করে। তবে অধিকাংশ এসকল ব্যবসায়ীরা জানায়, সরকার যদি এ ব্যবসায় আমাদের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতো তাহলে বড় বড় কারখানা তৈরী করে বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও দুর করা সম্ভব হতো।