বরিশালে ধ্বংসের মুখে নিউজ এজেন্সি এম রহমান

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০০:৪৬, জুন ০৩ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ষড়যন্ত্রের কবলে আটকে ধ্বংসের মুখে বরিশালের জনপ্রিয় নিউজ এজেন্সি এম রহমান। যারা পত্রিকার একমাত্র ধারক ও বাহক তারাই আজ বঞ্চিত নিজেদের মালিকানা থেকে। অবৈধভাবে একক মালিকানা দাবী তুলে মৃত হারুনের স্ত্রী ফরিদুন্নেচ্ছা’র আক্রমণে দিশেহারা নিউজ এজেন্সি'র প্রকৃত মালিক পক্ষ। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রকৃত মালিকদের বাদ দিয়ে নিজেই এজেন্সি পরিচালনার জন্য ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন ফরিদুন্নেচ্ছা। শুধু তাই নয়, গত দুদিন আগে এম রহমান এজেন্সি'র নাম বাদ দিয়ে নিজের নাম ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি জাতীয় পত্রিকাও বরিশালে আনেন। এনিয়ে প্রকৃত মালিকদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের ভুল বুজিয়ে প্রকৃত মালিকদের এজেন্সি থেকে উৎখাতের চেষ্টাও চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায় ফরিদুন্নেচ্ছার। বিষয়টি জানতে পেরে সকল হকাররা ছুটে এসে প্রতিবাদ জানায় ফরিদুন্নেচ্ছা’র নীতিহীন কর্মকান্ডের জন্য। তারা এম রহমান এজেন্সি'র নাম বাদ দিয়ে ফরিদুন্নেচ্ছার নামে আনা ওই জাতীয় পত্রিকাটি বেচা-বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এনিয়ে পুরো নগরী জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পরে বরিশাল নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে মোঃ মোকলেছুর রহমান নিজ নামে (এম রহমান) নিউজ এজেন্সি'র ব্যবসা শুরু করেন। দীর্ঘদিন ব্যবসার পরিচালনার সূত্র ধরে মোকলেছুর রহমান আপন বোনের ছেলে হারুন অর রশিদকে এজেন্সি ব্যবসায় পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। এরপর ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে এম রহমান নিউজ এজেন্সি’র মূল মালিক মোকলেছুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। পরে মোকলেছুর রহমানের স্ত্রী মিসেস ফিরোজা বেগম, পুত্র ফিরোজ আল কামাল, অপর পুত্র রিয়াজ আল কামাল এবং হারুন অর রশিদ এজেন্সি ব্যবসায় হাল ধরেন। ওয়ারিশ হিসেবে মালিকানাও বুঝে পান মোকলেছুর রহমানের স্ত্রী ও ছেলেরা। কিন্তু নিজ মালিকানা ছাড়া ব্যবসা চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেন হারুন অর রশিদ। যদিও মৃত্যুর পূর্বে ভাগ্নে হারুন অর রশিদকে এজেন্সি'র মালিকানার চার ভাগের এক ভাগ অংশীদারিত্ব দেয়ার জন্য স্ত্রী ও ছেলেদের বলে যান মোকলেছুর রহমান। পরে তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ও দুই সন্তান একই বছরের এপ্রিল মাসে হারুনুর রশিদকে এজেন্সি ব্যবসায় এক চতুর্থাংশ (১/৪) অংশের মালিকানা দিয়ে ব্যবসায়ী পার্টনার হিসেবে একটি অংশিদারিত্ব দলিল করেন। ওই অংশিদারিত্ব দলিলে উল্লেখ করা হয় যে, প্রথমপক্ষ ফিরোজা বেগম, ফিরোজ আল কামাল ও রিয়াজ আল কামাল প্রত্যেকেই ব্যবসার এক চতুর্থাংশের মালিক। এবং দ্বিতীয় পক্ষ হারুন অর রশিদও ব্যবসার এক চতুর্থাংশের মালিক। অর্থ্যাৎ প্রথম পক্ষ এবং দ্বিতীয় পক্ষ প্রত্যেকেই ব্যবসার এক চতুর্থাংশ মালিকানা অংশীদার হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করবে। ব্যবসার সকল লাভ-ক্ষতি সমহারে ভোগ করার কথাও দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এজেন্সি ব্যবসা আস্তে আস্তে অনেক লাভ ও সুনাম অর্জন করতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে প্রায় হারুন অর রশিদ এক চতুর্থাংশ অংশের মালিকানা হলেও পুরো ব্যবসা তার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। কিন্তু বিধি বাম হঠাৎ করে চলতি বছরের গত ২০ মে হারুন অর রশিদ ইন্তেকাল করেন। হারুন অর রশিদের মৃত্যুর ২য় দিন থেকে স্বাভাবিকভাবেই বাকী তিন চতুর্থাংশের মালিক ফিরোজ গং’রা এম রহমান এজেন্সি'র ব্যবসায়ীক কাজকর্ম পরিচালনা শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মরহুম হারুন অর রশিদ এর স্ত্রী ফরিদুন্নেচ্ছা ও তার আপন বোন জামাই কামাল হোসেনসহ অপরিচিতি ৪/৫ জন লোক নিয়ে এজেন্সি'র সামনে অরাজকতা সৃষ্টি করে এবং জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হারুন অর রশিদ নিউজ এজেন্সি নামে একটি কাগজ প্রদর্শন করে। এসময় স্থানীয় পথচারী এবং হকার্স ইউনিয়নের সদস্যরা এম রহমান নিউজ এজেন্সি'র মালিকানা সম্পর্কে অবগত থাকায় তাদের হস্তক্ষেপে ওখান থেকে হারুন অর রশিদের স্ত্রী দলবল নিয়ে রিয়াজ গং’দের হুমকি দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। এ ব্যাপারে এজেন্সি'র অংশীদার রিয়াজ জানায়, আমার আপন ফুফাতো ভাই হারুন অর রশিদ। অল্প বয়সে বেকার থাকায় বাবা তাকে এজেন্সিতে কাজ দেয়। বাবার মৃত্যুর পরে আমরা হারুন ভাইকে এক চতুর্থাংশ মালিকানা দিয়ে অংশীদার করি। তিনি আরো বলেন, ম্যানেজার ও অন্যান্য স্টাফরা বিষয়টি জানেন এবং কে কিভাবে কতটুকু অংশ পাবে তা রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলেও উল্লেখ আছে। দলিল নং ১-১৪৪/২০০২। এদিকে বরিশাল সংবাদপত্র হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি মনির হোসেন বলেন, গত ১ জুন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা এম রহমানের নাম বাদ দিয়ে অন্য এজেন্সির নামে পাঠানো হয়েছে। যাহা এম রহমান নিউজ এজেন্সীর মালিক, কর্মচারী ও আমাদের বরিশাল সংবাদ হকার্স ইউনিয়নের সকল সদস্যদের হৃদয়ে আঘাত হানে। তিনি আরো বলেন, এম রহমান নিউজি এজেন্সি'র ৭৫% মালিকানা ফিরোজ গং’রা অর্থ্যাৎ মৃত এম রহমানের এক স্ত্রী ও দুই ছেলে। বাকি ২৫% মালিকানা প্রয়াত হারুন-অর-রশিদ ভাইর। এ ব্যাপারে এম রহমান নিউজ এজেন্সি'র ম্যানেজার ইউনুস হাওলাদার বলেন, হারুনের কাছে এজেন্সির নগদ ৩ লাখ টাকা জমা ছিল। হঠাৎ তার মৃত্যু হয়। তাই মৃত্যুর ২ দিন পর সেই টাকার ব্যাপারে তার স্ত্রী ফরিদুন্নেছাকে জানাই এবং বিভিন্ন বকেয়া বিল পরিশোধের অনুরোধ করি। এরপর থেকেই এম রহমান নিউজ এজেন্সি ধ্বংস করতে বিভিন্ন লোকজন নিয়ে একের পর এক মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মৃতু হারুনুর রশিদের স্ত্রী ফরিদুন্নেচ্ছার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।