আমতলী থেকে ৩০ বছর পূর্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দেওয়ানী আদালত

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৭:৩৮, জুন ০২ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক।। আমতলী উপজেলা থেকে ৩০ বছর পূর্বে দেওয়ানী আদালত সরিয়ে বরগুনায় নেওয়া হয়েছে। দেওয়ানী আদালত সরিয়ে নেওয়ায় অভিভক্ত আমতলী ও তালতলী উপজেলার হাজার হাজার মানুষ দেওয়ানী মামলা পরিচালনা করেতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। প্রতিতদিন মামলা চালাতে সংশ্লিষিষ্ট ব্যাক্তিদের আমতলী তালতলী থেকে প্রমত্তা পায়রা নদী পারি দিয়ে বরগুনা যেতে হয়। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। ২০১২ সালে বরগুনা জেলা জজ আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের পক্ষে প্রতিবেদন দিলেও ৯ বছরেও তা আলোরমুখ দেখেনি। এতে স্থবির হয়ে পরেছে আদালত পুনঃস্থাপনের কার্যক্রম।       জানাগেছে, ১৯৮২ সালে আমতলী-তালতলী নিয়ে আমতলী উপজেলা গঠিত হয়। উপজেলা ঘোষনা হওয়ার পর থেকেই আমতলীতে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী আদালত স্থাপিত হয়। ওই সময় থেকে খুব ভালো ভাবেই চলে আসছিল আমতলীর আদালত। ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে কোন কারন ছাড়াই আমতলী থেকে দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালত প্রত্যাহার করে বরগুনা জেলা শহরের সাথে সংযুক্ত করে তৎকালীন সরকার। এতে সুবিধা বঞ্চিত হয় দুই উপজেলার হাজার হাজার দেওয়ানী মামলার বিচারপ্রার্থী। দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালত বরগুনায় সংযুক্ত হওয়ায় এক বছরের মাথায় ১৯৯২ সালে পায়রা নদী ও রাখাইন অধ্যুাসিত এলাকা বিবেচনা করে ফৌজদারী আদালত পুনরায় আমতলীতে স্থাপিত হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারনে দেওয়ানী আদালত আর স্থাপিত হয়নি। এর পর ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমতলীতে আর দেওয়ানী আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়নি। বন্যা-জলোচ্ছাস উপেক্ষা করে চার কিলোমিটার প্রমত্তা পায়রা নদী পাড়ি দিয়ে দুই উপজেলার মানুষের বরগুনা জেলা সদরে সহকারী জজ আদালতে মামলা করতে যেতে হয়।       এতে মামলা-মোকোদ্দমার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার বিচার প্রার্থীরা চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বরগুনা জেলা সদরে দেওয়ানী আদালত থাকায় দু’উপজেলার জণস্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে বলে দাবী করেন আমতলী মানবধিকার কমিশনের সভাপতি অশোক মজুমদার। দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের দাবীতে ইতিমধ্যে আমতলী উপজেলা আইনজীবি সমিতি আইন মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছেন। বর্তমানে বরগুনা দেওয়ানী আদালতে আমতলী-তালতলীর প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মামলা চলমান রয়েছে।       এদিকে ২০১২ সালে তৎকালিন আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. কামরুল ইসলাম আমতলী আদালত পরিদর্শনে আসেন। তিনি আদালত পরিদর্শন শেষে দেওয়ানী আদালত পুণঃস্থাপনের আশ^াস দিয়ে বরগুনা জেলা জজের কাছে প্রতিবেদন চান। তৎকালিন জেলা জজ আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের পক্ষে প্রতিবেদন দেন।       তালতলী উপজেলা গাবতলী গ্রামের মো. আবদুল মাজেদ মাষ্টার বলেন, গত ১০ বছর ধরে বরগুনা সহকারী জজ দেওয়ানী আদালতে (আমতলী) একটি মামলা চলছে। ঝড় বন্যা উপেক্ষা করে চার কিলোমিটার পায়রা নদী পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বরগুনা আদালতে যেতে হয়। এটা যে কতটা কষ্টের তা বুঝাতে পারবো না। তিনি আরো বলেন, আমতলী-তালতলী মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আইন মন্ত্রনালয়কে দ্রুত আমতলীতে দেওয়ানী আদালত স্থাপনের দাবী জানাই।       আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিনিয়র আইনজীবি এ্যাডভোকেট মো. জহিরুল ইসলাম বলেন,আমতলীতে দেওয়ানী আদালত না থাকায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মামলার বিচারপ্রার্থীদের বরগুনা আদালতে যেতে হচ্ছে। যা চরম দূর্ভোগের। এতে মানুষ শারীরিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।       বরগুনা আইনজীবি সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি সিনিয়র আইনজীবি এ্যাড. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আমতলী থেকে দেওয়ানী আদালত বরগুনা জেলা সদরের সাথে সংযুক্ত হয়। গত ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও দেওয়ানী আদালত আমতলীতে পুনঃস্থাপন হয়নি। এই ৩০ বছর ধরেই দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চরম কষ্টে বরগুনা গিয়ে মামলা পরিচালনা করছেন।       বরগুনা জেলা আইনজীবি সমিতির সহ-সভাপতি এ্যাড. এম এ কাদের মিয়া বলেন, মানুষের কষ্ট বিবেচনা করে আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করে আসছি। ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি। তিনি আরো বলেন ২০১২ সালে তৎকালিন আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. কামরুল ইসলাম আমতলী আদালত পরিদর্শনে এসে আদালত পুনঃস্থাপনের জন্য বরগুনা জেলা জজকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বরগুনা জেলা জজ আমতলীতে আদালত পুনঃস্থাপনের পক্ষে মত দেন। জেলা জজের দেয়া প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে জমা দেওয়া হলেও গত ৯ বছরেও ওই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। ফলে আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের কার্যক্রম স্থাবির হয়ে পড়ে আছে।       বরগুনা জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহমান নান্টু বলেন, আমতলী দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই পদক্ষেপটি অজ্ঞাত কারনে থমকে আছে। তিনি আরো বলেন, দুই উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দেওয়ানী আদালত আমতলীতে স্থাপন করা খুবই জরুরী।       আমতলী উপজেলার কৃতি সন্তান ঢাকা বার আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাড. গাজী মো. শাহ আলম বলেন, ২০০১ সালে মানীয় প্রধানমন্ত্র শেখ হাসিনা আমতলী থেকে নির্বাচনের সময় আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুন:স্থাপনের প্রতিশ্রুতিও ছিল। ওই বছর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসতে না পারায় এটি পিছিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপন সময় উপযোগী দাবী। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, বন্যা জলোচ্ছাস উপেক্ষা করে পায়রা নদী পাড়ি দিয়ে আমতলী ও তালতলীর মানুষ বরগুনা জেলা শহরের আদালতে যেতে হয়। এটা অত্যান্ত কষ্টের। আইন মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি এবং যাতে দ্রুত আদালত পুণঃস্থাপন হয় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।       আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমান বলেন, আমতলী-তালতলীর হাজার হাজার দেওয়ানী মামলার বিচার প্রার্থী মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমতলী উপজেলায় দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপন করা জরুরুী হয়ে পরেছে। তিনি আরো বলেন, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. কামরুল ইসলাম আমতলী ফৌজদারী আদালত পরিদর্শনে এসে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেলেন। সে ঘোষনা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে অতি দ্রুত আমতলী উপজেলায় দেওয়ানী আদালত পুন:স্থাপন করা প্রয়োহজন।       বরগুনা-১ আসনের এমপি ও বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু বলেন, আমতলী ও তালতলী উপজেলার হাজার হাজার মানুষের দেওয়ানী মামলা পনিরচালানার জন্য পায়রা নদী পারি দিয়ে বরগুনা যেতে হয়। তাই মানুষের দুখ: দুর্দশা দুর করার জন্য অতি দ্রুত আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুন:স্থাপন করা প্রয়োজন।